আজও আইটিআই কলেজ ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হল না দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারের চারটি ব্লকে।
জমি-জটে আটকে থাকা বেশ কয়েকটি ব্লকে আইটিআই কলেজ ভবন নির্মাণের কাজ দেরিতে শুরু হলেও অনুমোদনের অভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ডায়মন্ড হারবার মহকুমায় ৯টি ব্লকের মধ্যে ৪টি ব্লকে কাজ এখনও শুরু হয়নি। অথচ রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসার পরই ঘোষণা করেছিল, জেলার প্রতিটি ব্লকে আইটিআই কলেজ নির্মাণ করা হবে। সরকারি চাকরির প্রতীক্ষায় বসে না থেকে যাতে বেকার ছেলেমেয়েরা নিজেরাই হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিয়ে স্বনির্ভর হতে পারে, সে জন্যই রাজ্য সরকারের এই উদ্যোগ।
ডায়মন্ড হারবারের ৯টি ব্লকের মধ্যে ডায়মন্ড হারবার-১ আব্দালপুর গ্রামের কাছে হুগলি নদী লাগোয়া সেচ দফতরের জমিতে আইটিআই ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের মুখে ছিল। কিন্তু ডায়মন্ডহারবার-২ ব্লকে রায়চক মোড়ের কাছে জমি পাওয়া গেলেও অনুমোদন না মেলায় এত দিনেও ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা যায়নি। কুলপি ব্লকে করঞ্জলি পঞ্চায়েতে দামোদরপুর গ্রামের কাছে জমি পাওয়া গিয়েছিল বটে। কিন্তু সেই জমির দখলদারি সরাতেই অনেক সময় কেটে গিয়েছে। মাস ছ’য়েক আগের থেকে এখানে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হলেও এখনও দখলদারির সমস্যা সমাধান হয়নি।
আইটিআই কলেজ নির্মাণের জন্য ওই দখলদারি জমি চিহ্নিত করেছিল ব্লক প্রশাসন থেকে। কিন্তু সমস্যা হল ৩৫ বছর ধরে এই ফাঁকা জমিগুলিতে ৪০-৪৫টি পরিবার বসবাস করছে। বামজমানায় এই জমিতে রাস্তার বসবাসকারীদের থাকতে দেওয়া হয়েছিল। বসবাসের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা এই জমিতে চাষের কাজও করতেন। ব্লক প্রশাসন থেকে কৃষি জমি যাঁরা দখল করে রেখেছিলেন, তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে জমি নিলে ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা করা হবে। তবে প্রশাসন যতই ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিক না কেন, আতঙ্কে রয়েছে এই পরিবারগুলিা। তাঁদের মধ্যে বাবুলাল হালদার, প্রবীর হালদারেরা বললেন, “আমরা এখানে এত দিন ধরে রয়েছি। অথচ সরকার আমাদের জন্য কোনও বিকল্প ব্যবস্থা না করে জমি দখল করার চেষ্টা করছে।” এ বিষয়ে কুলপি বিডিও সেবানন্দ পণ্ডা বলেন, “কলেজ ভবন নির্মাণের প্রায় ৪ একর জমি পাওয়া গিয়েছে। যাঁদের ওই জমি দখলে ছিল সে সমস্ত পরিবারকে অন্য প্রকল্পের মাধ্যমে ক্ষতিপুরণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ।”
অন্য দিকে, আইটিআই ভবনের জন্য মথুরাপুর-১ ব্লকে মথুরাপুর স্টেশন মোড়ের পাশে প্রায় দুই একর জমি ব্লক প্রশাসন থেকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও সেই একই সমস্যা দেখা দিয়েছে। সরকার থেকে আর্থিক অনুমোদন না পাওয়ায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। মথুরাপুর-২ ব্লকে রায়দিঘি বাজারের কাছে ১১ বিঘা জমি সেচ দফতর থেকে চিহ্নিত করা হয়েছিল। ওই জমির দখলদারদের দাবি মত ক্ষতিপূরণ না দেওয়ায় তারা জমি ছাড়েনি। ফলে কলেজ নির্মাণের জন্য সেই জমি অনুমোদন হয়নি।
কাজ তাড়াতাড়ি শুরু করার জন্যে মগরাহাট-১ ব্লকে কানপুর গ্রামের কাছে আইটিআই ভবন নির্মাণের জমির বিস্তারিত খোঁজ নিতে যান স্থানীয় বিধায়ক তথা সংখ্যালঘু উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী গিয়াসউদ্দিন মোল্লা এবং জেলা প্রশাসনের আধিকারিকরা। অন্য দিকে, মগরাহাট-২ ব্লকে মগরাহাট পশ্চিম পঞ্চায়েতে বেলাড়িয়া গ্রামের কাছে প্রায় দুই একর দানের ও সরকারি জমি পাওয়া যায়। কিন্তু ওই জমির মধ্যে ১৫ শতক জমির মালিক জমি দিতে রাজি না হওয়ায় কাজ শুরু হওয়ার পর পরই তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিডিওর মধ্যস্থতায় ওই জমি কিনে নিয়ে কাজ শুরু হয়।
বিডিও খোকনচন্দ্র বালা বলেন, “ওই ১৫ শতক জমির সমস্যার জন্য আইটিআই কলেজ নির্মাণের কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার মুখে পড়েছিল। সে সময় কোনও মতে ওই জমির মালিককে বুঝিয়ে টাকা দিয়ে জমি কিনে কাজ শুরু করি। বর্তমানে ভবন নির্মাণের কাজ অনেকটা এগিয়েছে।” যে কয়েকটি ব্লকে আইটিআই কলেজ নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি সে প্রসঙ্গে ডায়মন্ড হারবার মহকুমাশাসক শান্তনু বসু বলেন, “সরকারি পরিকল্পনা অনুযায়ী আস্তে আস্তে সব ব্লকেই কাজ শুরু হয়ে যাবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy