Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

বডিগার্ড লাইন্সে যুবকের রহস্যমৃত্যুতে ঘুষের কথা জেরায় কবুল পুলিশের

মৃতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানো, অপরাধের সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে মামলা করে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।

নিথর: প্রসেনজিৎ সিংহ। আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে। —নিজস্ব চিত্র।

নিথর: প্রসেনজিৎ সিংহ। আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০১৯ ০২:১২
Share: Save:

আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের ভিতরে যুবকের রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় দুই যুবককে আটক করেছে পুলিশ। আটক যুবকদের বিরুদ্ধে এক জন কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল। তাঁর বিরুদ্ধে অবিলম্বে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হচ্ছে বলে জানায় লালবাজার।

লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘আটক যুবকদের অন্যতম বিশ্বজিৎ মণ্ডল জেরায় স্বীকার করেছে, চাকরি দেওয়ার নামে সে প্রসেনজিতের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছে।’’ মৃতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে অনিচ্ছাকৃত ভাবে মৃত্যু ঘটানো, অপরাধের সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগে মামলা করে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ।

শনিবার বিকেলে বডিগার্ড লাইন্সের একটি পুকুরে বছর তিরিশের এক যুবকের দেহ ভাসতে দেখা যায়। খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে, মৃতের নাম প্রসেনজিৎ সিংহ। তাঁর বাড়ি মালদহের পুকুরিয়ায়। তাঁর বাবা উত্তমকুমার সিংহ উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার থানার পুলিশকর্মী। উত্তমবাবু রবিবার ওয়াটগঞ্জ থানায় বিশ্বজিৎ মণ্ডল এবং তাঁর ভাই ইন্দ্রজিৎ মণ্ডলের বিরুদ্ধে তাঁর ছেলেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। ওই দুই যুবকের বাড়ি উত্তমবাবুদের পাশের গ্রামে। উত্তমবাবু পুলিশকে লিখিত অভিযোগে জানান, কলকাতা পুলিশের রিজার্ভ ফোর্সের কনস্টেবল ইন্দ্রজিৎ এবং তাঁর ভাই, বড়বাজারের ডাক বিভাগের কর্মী বিশ্বজিৎ সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে প্রসেনজিতের কাছ থেকে ২০১৭ সালে তিন দফায় তিন লক্ষ টাকা নেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৮ সালের মধ্যে চাকরি না-পাওয়ায় প্রসেনজিৎ টাকা ফেরত চান। টাকা নিতে গত ৯ অগস্ট রাতে ট্রেন ধরে কলকাতা রওনা দেন প্রসেনজিৎ। উত্তমবাবু বলেন, ‘‘ছেলের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়েছে ১৬ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ৭টা নাগাদ। বলেছিল, ওরা টাকা দেয়নি। রবিবারেই বাড়ি ফিরে যাবে বলে জানিয়েছিল প্রসেনজিৎ।’’ মোবাইলের ও-প্রান্ত থেকে কাঁদতে কাঁদতে উত্তমবাবু বারবার বলছিলেন, ‘‘টাকা না-পেয়ে প্রতিবাদ করাতেই ছেলেকে মেরে পুকুরে ফেলে দিয়েছে ওরা। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করুক।’’

মৃতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে রবিবার গভীর রাতে বিশ্বজিৎ ও ইন্দ্রজিৎকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ওয়াটগঞ্জ থানার পুলিশ। শনিবার রাতে এসএসকেএম হাসপাতালে প্রসেনজিতের দেহ প্রথমে শনাক্ত করেন তাঁর জেঠতুতো ভাই প্রতীক সিংহ। যাদবপুরের কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র প্রতীকের অভিযোগ, ‘‘জলে ডুবে মৃত্যু হলে হাতের তালুতে কাদা থাকার কথা। কিন্তু প্রসেনজিতের কোনও তালুতেই কাদার চিহ্ন ছিল না। ওর কপালের বাঁ দিকে ক্ষতচিহ্ন ছিল।’’

পুলিশ জানায়, শনিবার বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সের পিছনের পুকুরে প্রসেনজিতের দেহ ভেসে ওঠার সময় তাঁর শরীরের নীচের অংশে কোনও কাপড় ছিল না। উপরে কেবল একটি জামা ছিল। একটি গামছা পড়ে ছিল পুকুরের পাড়ে। পুকুরের লাগোয়া শিবমন্দিরের পাশে একটি ছাউনির নীচে বিছানায় প্রসেনজিতের প্যান্ট, মোবাইল, ব্যাগ পাওয়া গিয়েছে। গত কয়েক দিন তিনি ওখানেই থাকতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘‘ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে খুনের তথ্যপ্রমাণ না-মিললেও আমরা সব কিছু খতিয়ে দেখছি। ওই যুবককে কেউ ঠেলে জলে ফেলে দিয়েছে, নাকি জলে ডুবিয়ে মেরে ফেলেছে, সব কিছুই তদন্তসাপেক্ষ। মৃতের মোবাইল ফোনের কললিস্ট যাচাই করা হচ্ছে। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Alipore Bodyguard Line Bribe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy