Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

রেজ্জাকে বাধ্যতা, লক্ষ্মণে নীরব রিপোর্ট

শোধরানোর কোনও লক্ষণ তাঁর মধ্যে দেখা যায়নি। লোকসভা ভোটের আগে তাই আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে বহিষ্কার করা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না বলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে লিখিত ভাবে জানাল আলিমুদ্দিন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, দলের আর এক বিক্ষুব্ধ নেতা লক্ষ্মণ শেঠ সম্পর্কে সেই রিপোর্ট সম্পূর্ণ নীরব!

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৮:৩৯
Share: Save:

শোধরানোর কোনও লক্ষণ তাঁর মধ্যে দেখা যায়নি। লোকসভা ভোটের আগে তাই আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে বহিষ্কার করা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না বলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিকে লিখিত ভাবে জানাল আলিমুদ্দিন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, দলের আর এক বিক্ষুব্ধ নেতা লক্ষ্মণ শেঠ সম্পর্কে সেই রিপোর্ট সম্পূর্ণ নীরব!

প্রবীণ বিধায়ক রেজ্জাকের সঙ্গে সিপিএমের সম্পর্ক যে ক্রমেই বিচ্ছেদের দিকে গড়াচ্ছিল, তা নিয়ে কোনও মহলেই কোনও সংশয় ছিল না। কিন্তু ‘সামাজিক ন্যায়বিচার মঞ্চ’ গড়ে রেজ্জাক আগামী বিধানসভা ভোটে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দেওয়ায় একতরফা ভাবেই দ্রুত বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে আলিমুদ্দিনকে। বাধ্য হয়েই তাঁরা যে রেজ্জাকের ক্ষেত্রে ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট দিয়ে সেই কথাই জানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। দলিত ও মুসলিমদের বঞ্চনা এবং ক্ষমতায়নের বিষয়ে রেজ্জাক যে সব প্রশ্ন তুলেছেন, সিপিএমের তরফে তার জবাব দেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করছিল বামফ্রন্টেরই একাংশ। কিন্তু বিমানবাবুদের রিপোর্টে তার কোনও উল্লেখ না-থাকায় রেজ্জাকের আক্রমণকে উপেক্ষার কৌশলই স্পষ্ট বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।

রেজ্জাকের বহিষ্কার এবং সাম্প্রতিক রাজ্যসভা ভোটে বাম শিবিরের তিন বিধায়কের দল বদলের ঘটনায় উদ্বেগের কথা আলিমুদ্দিনে পেশ করা রিপোর্টে স্থান পেয়েছে। কিন্তু সেখানে লক্ষ্মণ-পর্ব নিয়ে কোনও আলোচনা নেই! সিপিএমের অন্দরেই প্রশ্ন রয়েছে, জনসমক্ষে দলের ভাবমূর্তি হেয় করার যে অভিযোগে রেজ্জাককে ছেঁটে ফেলা হয়েছে, সেই একই অপরাধে তমলুকের প্রাক্তন সাংসদও অভিযুক্ত। তা হলে তাঁর ক্ষেত্রে কেন অন্য নীতি হবে? কিন্তু রেজ্জাক ও লক্ষ্মণকে এক মাপকাঠিতে ফেলতে আলিমুদ্দিন যে এখনও রাজি নয়, এই রিপোর্ট থেকেই তার ইঙ্গিত মিলছে বলে দলের একাংশের অভিমত। দিল্লিতে শনি ও রবিবার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে এ রাজ্যের এক সদস্য অবশ্য মৌখিক ভাবে লক্ষ্মণ-পর্বের কথা জানিয়েছেন। তমলুকে গিয়ে লক্ষ্মণ-অনুগামীদের হাতে সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর যে তিন সদস্য হেনস্থার মুখে পড়েছিলেন, তাঁদের মধ্যে দু’জনই কেন্দ্রীয় কমিটিতে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বিষয়টি আপাতত রিপোর্টে নথিভুক্তির পথে যায়নি আলিমুদ্দিন।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর তরফে কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছে: ‘গুরুতর দল-বিরোধী কার্যকলাপের জন্য রাজ্য কমিটির সদস্য ও বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লাকে দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে একতরফা ভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী। এর আগে শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য তাঁকে দু’বার তিরষ্কার করা হয়েছিল। রাজ্য কমিটি তাঁকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনাও করেছিল। কিন্তু রাজ্য কমিটি দেখেছে, নিজেকে সংশোধন করার বিষয়ে তিনি কোনও গুরুত্বই দেননি’! গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁর নবগঠিত মঞ্চের কনভেনশন থেকে আগামী বিধানসভা ভোটে প্রার্থী দেওয়ার কথা ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল। সেই তথ্য উল্লেখ করেই রিপোর্ট বলছে: ‘এই পরিস্থিতিতে পার্টি বাধ্য হয়েছে এই ধরনের চরম শৃঙ্খলামূলক পদক্ষেপ করতে। পার্টির সামনে আর কোনও বিকল্প ছিল না’।

দলের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের ব্যাখ্যা, “রাজ্য কমিটির বৈঠকে রেজ্জাক এক বার দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন তাঁর অবাঞ্ছিত মন্তব্যের জন্য। কিন্তু তার পরেও তিনি শোধরাননি। দলীয় নেতৃত্বকে ব্যক্তিগত আক্রমণ তো বটেই, ভোটে প্রার্থী দেওয়ার কথাও তিনি ঘোষণা করে দিয়েছেন। এই অবস্থায় তাঁর আর কোনও ব্যাখ্যা শোনার পরিস্থিতি ছিল না। কোনও দলই এই ধরনের আচরণ বরদাস্ত করতে পারে না!” কিন্তু লক্ষ্মণ? ওই নেতার বক্তব্য, “লক্ষ্মণও দলকে প্রকাশ্যে হেয় করেছেন। তবে পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় দলীয় তদন্তের কাজ চলছে। তার পরেই যা ব্যবস্থা নেওয়ার, নেওয়া হবে।” মুখে এই ব্যাখ্যা দিলেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার সংগঠনে লক্ষ্মণ-অনুগামীদের প্রভাবই লোকসভা ভোটের আগে আলিমুদ্দিনকে বাড়তি সতর্কতা নিতে বাধ্য করছে বলে সিপিএমেরই একাংশের অভিমত।

ঘটনাচক্রে, এই রিপোর্ট যখন কেন্দ্রীয় কমিটিতে পেশ হচ্ছে, স্বয়ং রেজ্জাক তখন ছিলেন দিল্লিতেই। নিজের নতুন মঞ্চের জন্য সমর্থন জোগাড় করতে নেমেছেন তিনি। এর পরে কেরলেও যাবেন বলে জানিয়েছেন। রেজ্জাকের কথায়, “দিল্লিতে তো বেড়াতে আসিনি! বহুজন মুক্তি পার্টি বলে একটা দল এবং আরও কিছু সংগঠনের সঙ্গে কথা হয়েছে। আরও অনেকের সঙ্গে কথা বলব।” যাবতীয় তৎপরতাই ২০১৬-র বিধানসভার ভোটের দিকে তাকিয়ে, ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন রেজ্জাক।

রাজ্যসভার ভোটে বিধায়ক ‘কেনাবেচা’র ঘটনাও এ বার প্রকাশ কারাটদের অবহিত করেছেন বিমানবাবুরা। রিপোর্টের ভাষায়, ‘বিশাল অর্থ নিয়ে এমন দুর্বৃত্তসুলভ কাজকর্ম (গ্যাংস্টারিজম) গণতন্ত্রে নির্বাচনী ব্যবস্থার সামনে এমন বিপদ নিয়ে এসেছে, যা আগে দেখা যায়নি’।

অন্য বিষয়গুলি:

abdur rejjak alimuddim expulsion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy