জঙ্গলমহল কাপের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। সোমবার সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।
মুখ্যমন্ত্রী যে তাঁর ‘প্রেরণা’, মঞ্চ থেকে সে কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন তিনি।
লালগড়ে আন্দোলন থিতিয়ে আসার পরে, পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর কৃতিত্বের সবটুকু মুখ্যমন্ত্রীকে সঁপে দিয়ে তিনি দাবি করেছিলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলের ত্রাতা’।
সোমবার, সেই তালিকায় নতুন সংযোজন ঘটালেন পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ। মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে জঙ্গলমহল কাপের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে এ দিন তিনি বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী জঙ্গলমহলের মা। মমতাময়ী মায়ের মতো জঙ্গলমহল আগলে রেখেছেন। উনি জঙ্গলমহলের হৃদয়।”
পালাবদলের পরে, পুলিশ-প্রশাসন থেকে দলতন্ত্রের ‘অবসানের’ ডাক দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তা কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের একাংশের কার্যকলাপে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বার বার। এ দিন, ভারতী ঘোষের ওই মন্তব্য, সেই তালিকায় ‘নব্য পালক’ বলেই মনে করছেন রাজ্য প্রশাসনের একাংশ। রাজ্যের এক পদস্থ পুলিশ কর্তা বলেন, “পুলিশের একাংশের মধ্যে শাসক দলের প্রতি আনুগত্য দেখানো যে কতটা বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে, এ দিন ওই পুলিশ কর্তার কথায় তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।”
সরকারি মঞ্চ থেকে পুলিশ সুপারের এই মন্তব্যকে শুধু ‘প্রথা বিরুদ্ধ’ নয়, ‘নির্লজ্জ দালালি’ বলেই মনে করছেন বিরোধীরা। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী মনে করেন, ‘পদন্নোতি’র জন্য পুলিশকে যে কী ভাবে ‘মুখ্যমন্ত্রীর তোষণ’ করতে হয় এ ঘটনা তারই প্রমাণ। তিনি বলেন, “এই নির্লজ্জ দালালির পরে ওই পুলিশ কর্তাকে অপসারণ করা উচিত।” রাজ্য বিজেপি-র সহ-সভাপতি সুভাষ সরকার বলেন, “সরকারি মঞ্চ থেকে এই প্রথা বিরুদ্ধ মন্তব্যের পরে ওই পুলিশ কর্তার তৃণমূলে যোগ দেওয়া উচিত।”
তবে, পুলিশ সুপারের কথায় তিনি যে যারপরনাই ‘সন্তুষ্ট’, অনুষ্ঠান মঞ্চেই ভারতী ঘোষকে দরাজ সার্টিফিকেট দিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ভারতী অ্যাঙ্কার হিসেবে দারুণ কাজ করেছে। দেখছেন, পুলিশে কাজ করলেও অ্যাঙ্কার হওয়া যায়। যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে।”
দ্রুত মঞ্চ ছাড়ার আগে এর পরেই মমতা অবশ্য জানিয়ে দেন, খেলাধুলোর উন্নয়নে রাজ্যের ৬০০টি থানাকে এক লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। সেই সরকারি অর্থে জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় ক্রীড়া প্রসারই হবে পুলিশের লক্ষ্য। পাল্টা ধন্যবাদ জানিয়ে ভারতীও বলেন, “আমার পরমপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী খেলাধুলোর উন্নয়নে এক লক্ষ টাকা করে অনুদান দিচ্ছেন। এতে নিশ্চয় ভাল হবে।”
দান-খয়রাতির ক্ষেত্রে তাঁর সরকার যে অকৃপণ, এ দিনের পুরস্কার বিরতরণ অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রীর একের পর এক ঘোষণায় তা আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামী ১০ জানুয়ারি কলকাতায় ‘স্পোর্টস ডে’ পালন করা হবে। সেখানে রাজ্যের আরও দু-হাজার ক্লাবকে ২ লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে। তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে আমরা ৪ হাজার ক্লাবকে ২ লক্ষ টাকা করে দিয়েছি। আরও ২ হাজার ক্লাব ২ লক্ষ টাকা করে পাবে। সব মিলিয়ে ৬ হাজার ক্লাব হয়ে যাবে।” তিনি জানান, রাজ্যের যে সব ক্লাব আগে ২ লক্ষ করে পেয়েছে, এ বার তাদেরও এক লক্ষ টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে।
স্পোর্টস ডে-তে ‘কৃতী খেলোয়াড়’দের ‘খেলরত্ন’ সম্মান দেওয়ার পরিকল্পনার কথাও মনে করিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে সংযোজন, “সামনে নানা উৎসব। আজ জঙ্গলমহল উৎসব শুরু হয়ে গেল। ২০ জানুয়ারি উত্তরবঙ্গ উৎসবের সূচনা করব। ২১ জানুয়ারি তরাই-ডুয়ার্স উৎসব শুরু হবে। তারপর সুন্দরবন উৎসব হবে।”
বিকেল ফুরিয়ে আসছে, ভিড় হাল্কা হয়ে আসছে দেখে মিনিট কুড়ির মধ্যেই মঞ্চ থেকে নেমে পড়েন তিনি। যাওয়ার আগে ভারতীয় দিকে তাকিয়ে বলে যান, “ওরা (জঙ্গলমহলের খেলোয়াড়রা) অনেকক্ষণ এসেছে। হয়তো খিদে পেয়ে গেছে। ওদের দেখো।”
পুলিশ সুপার ব্যস্ত হয়ে পড়েন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “গৌতম, এ বার তোমরা দেখাও তো, কেমন করতে পারো।” অনুষ্ঠানের ব্যাটন হাতে নয় পায়ে তুলে নেন, প্রাক্তন খেলোয়াড় গৌতম সরকার। ফুটবল পায়ে নিয়ে নাচাতে শুরু করেন তিনি। তাঁর দেখাদেখি নেমে পড়েন আর এক প্রাক্তনী প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চ থেকে নামতে নামতে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “দেখো, তোমরা ভেল্কি দেখো।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy