তিনি যে মদন মিত্রের পাশেই আছেন, আরও এক বার প্রকাশ্যে সে কথা জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সাত হাজার ক্লাবকে কোটি টাকার উপর ডোল বিলির অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “মদন এই কাজগুলো শুরু করেছে। আজ সে নেই (অবশ্যই এখানে অনুপস্থিত অর্থে)। তবে তার শুভেচ্ছা নিশ্চয়ই আছে সবার সঙ্গে।”
সারদা-কাণ্ডে গত ১৯ নভেম্বর মদনকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। প্রশ্ন উঠছে, দলের এই প্রথম সারির নেতার বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠার পরেও মুখ্যমন্ত্রী কী ভাবে মঞ্চে তাঁর পাশে দাঁড়াছেন? এবং কেনই বা এই কাজটা ক্রমাগত করে যেতে হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে?
বিরোধীরা বলছেন, এটা একই ভয়ের এ-পিঠ ও-পিঠ! যে ভয়ে মমতা এক সময় মদনকে এড়িয়ে চলতে শুরু করেছিলেন, একই ভয়ে এখন তিনি পরিবহণ মন্ত্রীর পাশে। কারণ, ডুবলে যে একা নন, ডালপালা নিয়েই ডুববেন জেলে যাওয়ার অনেক আগে সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মদন। মমতার কাছে এটাও স্পষ্ট যে, সারদা তদন্তে সিবিআই যে ভাবে এগোচ্ছে, তাতে মাথার উপর দিকে টান পড়াটা এখন সময়ের অপেক্ষা। ফলে মদন পাছে বিগড়ে গিয়ে বা কোণঠাসা হয়ে বেফাঁস কিছু উগরে দেন, সেটাই এখন দলনেত্রীর বড় উদ্বেগের বিষয়। সারদা তদন্তের জাল যে ভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে এই ভয়টাকে আড়াল করতেই প্রকাশ্যে এমন মদন-স্তুতি। শাসক দলের অনেক নেতার মতে, এ ছাড়া মমতার আর উপায়ও নেই। মদনকে বাঁচানো কার্যত অসম্ভব জেনেও তাঁর হয়ে ব্যাট ধরেছেন নেত্রী। কারণ, মদন যদি ঝোলা থেকে নানা রকমের বেড়াল বের করে আনেন, তা হলে তিনিও কি রেহাই পাবেন?
মজার কথা হল, সারদা তদন্তে ফেঁসে যাওয়ার এই ভয় থেকেই কিন্তু একটা সময় মমতা তাঁর দীর্ঘদিনের এই রাজনৈতিক সঙ্গীকে দূরে ঠেলতে তৎপর ছিলেন। সিবিআই পরিবহণ মন্ত্রীকে জেরার জন্য ডেকে পাঠানোর পর থেকেই প্রকাশ্যে তাঁর সঙ্গে দুরত্ব রেখে চলতে শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। এমনও হয়েছে যে, পরিবহণ ও ক্রীড়া দফতরের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকায় ব্রাত্য হয়ে থাকতে হয়েছে মদনকে। মুখ্যমন্ত্রী চাননি বলে তখন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকেও দেখা যায়নি পরিবহণ মন্ত্রীকে।
কিছু দিন এ রকম চলার পরেই কিন্তু ভোল বদলে ফেলেন মুখ্যমন্ত্রী। মদন ধরার পড়ার ঠিক আগেই কালীঘাটে নিজের বাড়িতে দলের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে তিনি বলেন, “মুকুল চোর, মদন চোর আমি বিশ্বাস করি না।” মদন ধরা পড়ার পরে সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে চক্রান্তের তত্ত্ব সামনে এনে তাঁর মন্ত্রিত্ব রেখে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দেন, পাশে আছেন তাঁর। সরাসরি অভিযোগ করে বলেন, “যা করেছে, জঘন্য চক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রীকে বলছি, প্রথমে আমাকে তোল্। না সরি, ধরো। তোমাদের কাছে আমি তো চোর-ডাকাত।” কখনও আবার, “হু ইজ সিবিআই? ওরা এক্তিয়ারের সীমা ছাড়াচ্ছে।” তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ভাবে কুৎসা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। দলকেও মদনের পাশে দাঁড়াতে বলে গোষ্ঠ পালের মূর্তির সামনে ধর্নামঞ্চ গড়ে তীব্র প্রতিবাদের নির্দেশ দেন তিনি। মদনকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে দল যে রাজনৈতিক লড়াই শুরু করবে, সেই বার্তাও দেন মমতা। তারই অঙ্গ হিসেবে রাস্তা অবরোধ ও রীতিমতো তাণ্ডব চালায় শাসক দলের কর্মী-সমর্থকরা। সেই ধারাবাহিকতা এ দিনও বজায় রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর এ ভাবে এক বন্দির পাশে দাঁড়ানোকে কটাক্ষ করে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী শনিবার বলেন, “খারাপ বললে তো তাঁরই (মুখ্যমন্ত্রীর) বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে। কারণ, আগেও তো তিনি মদনের প্রশংসা করে কথা বলেছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy