তৃণমূল নেত্রী যে দিন পুরভোটে বিজেপি-প্রতিরোধের ডাক দিলেন, সে দিনই কলকাতায় এক সাংবাদিক বৈঠকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়া সরব হলেন অনুপ্রবেশ নিয়ে। বুধবার প্রেস ক্লাবে।—নিজস্ব চিত্র।
নেত্রী নিশ্চিত, তাঁর ‘কানন’ই ফের মেয়র হবেন!
কানন, অর্থাৎ শোভন চট্টোপাধ্যায়। কলকাতার বর্তমান মেয়র। ফের তাঁকেই সামনে রেখে আসন্ন পুরভোটে দল বিজেপির মোকাবিলায় নামবে বলে বুধবার ঘোষণা করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনার পৈলানে দলের কর্মিসভায় সংবামাধ্যমের একাংশকে ‘উচ্ছিষ্ট’ বলে তোপ দেগে মমতা বলেছেন, “সংবাদমাধ্যম যতই ‘পুর নির্বাচন এগিয়ে এসেছে’ লিখুক। ওদের বলছি, নির্বাচন যথাসময়েই হবে। আর কলকাতা পুরসভা তৃণমূলের দখলে থাকবে। কানন (শোভন চট্টোপাধ্যায়) ফের মেয়র হবে।”
মুখে এ কথা বললেও পুর-যুদ্ধের দামামা ইতিমধ্যেই বাজিয়ে দিয়েছেন মমতা। গত সোমবার কালীঘাটের বাড়িতে সাংসদ-বিধায়কদের পাশাপাশি পুরসভার নেতৃত্বকেও বৈঠকে ডেকেছিলেন তিনি। সেই বৈঠকের সুরেই এ দিন পৈলানে
তিনি আরও স্পষ্ট করে দেন যে, বিজেপিই এখন তাঁদের প্রধান প্রতিপক্ষ। এবং বিজেপির মোকাবিলায় যে এখন থেকেই সক্রিয় হতে হবে, সে কথাও কর্মীদের মনে করিয়ে দিয়েছেন নেত্রী। স্বভাবতই কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন, পুরভোট যদি নির্ধারিত সময়ে, অর্থাৎ ২০১৫-র মাঝামাঝিই হয়, তা হলে মমতা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে কর্মীদের কোমর বাঁধতে বলছেন কেন?
কী কী নির্দেশ এ দিন দিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী?
বিজেপি এবং আরএসএসের শাখা সংগঠন দুর্গা বাহিনী, বনবাসী কল্যাণ সমিতি, টাইগার ফোর্স এবং হিন্দু জাগরণ সমিতি-র নাম করে করে তাদের দিকে দলীয় কর্মীদের নজর রাখতে বলেছেন মমতা। বলেছেন, “আমি বললাম। আপনারা শুনলেন আর ঘুমিয়ে পড়লেন, তা চলবে না। আমি সব খবর নেব। এলাকায় নতুন মুখ দেখলে খোঁজ রাখুন। তেমন কিছু হলে থানায় অভিযোগ দায়ের করুন। আর ওই অভিযোগের একটা কপি আমার বাড়িতে পাঠিয়ে দিন। তা ছাড়া পার্থদা, বক্সীদা, অরূপ, শোভনকে ওই কাগজ পাঠিয়ে দিন।” মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, প্রশাসন তার মতো ব্যবস্থা নেবে। দল দলের মতো।
এলাকায় বিজেপি-প্রতিরোধের কৌশলের পাশাপাশি সংগঠন জোরদার করার পরামর্শও দিয়েছেন মমতা। কর্মীদের নতুন প্রজন্মকে সামনে নিয়ে আসতে বলেছেন তিনি। বলেছেন নতুন ছেলেমেয়েদের মোবাইল নম্বর জোগাড় করে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে। সম্প্রতি এসএমএসের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহের পন্থা নিয়েছে বিজেপি। এ বার তারই পাল্টা পথ বাতলে দিলেন মমতা।
পাশাপাশি, বিজেপি-বিরোধিতার প্রশ্নে মমতা এ দিন সুকৌশলে ফের উস্কে দিয়েছেন অনুপ্রবেশ-বিতর্ক। যাকে তাঁর সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ককে এককাট্টা রাখার প্রয়াস হিসেবেই দেখছেন অনেকে। এমনকী কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর রাজ্যে গোষ্ঠী সংঘর্ষের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেও তৃণমূল নেত্রী এ দিন অভিযোগ করেছেন। লোকসভা ভোটে রাজ্যে অনুপ্রবেশ নিয়ে সরব হয়েছিল বিজেপি। সেই প্রসঙ্গ টেনে মমতা বলেছেন, “একটা নিদিষ্ট জাতির বদনাম করার চেষ্টা হচ্ছে। আর এক দিকে বিদেশ থেকে টাকা নিয়ে এসে নানা সংগঠন এখানে কাজ করছে, সেই বিষয়ে কোনও নামগন্ধ করা হচ্ছে না। আমার কাছেও খবর আছে। কোথায় থেকে টাকা আসছে। আর কী করা হচ্ছে। আমি সব নজর রাখছি।” খাগড়াগড়ের বাংলাদেশি জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ ঘিরে ইতিমধ্যেই বিরোধীদের আক্রমণের মুখে পড়তে হয়েছে তৃণমূল নেতৃত্বকে। মমতা আজ সেই অভিযোগও খণ্ডনের চেষ্টা করলেন বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে এ দিনই কলকাতায় অনুপ্রবেশের প্রশ্নে কড়া সুর বজায় রেখেছেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়া। বাংলাদেশ থেকে যে সব মুসলিম ভারতে আসছেন, তাঁদের ‘অনুপ্রবেশকারী’ বলেই মন্তব্য করেছেন তোগাড়িয়া। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গ, অসম, মেঘালয় দিয়ে অনুপ্রবেশকারীরা এ দেশে ঢুকছে। তারপর সারা দেশেই ওরা ছড়িয়ে পড়ছে। অপরাধমূলক কাজকর্ম করছে। অবিলম্বে ওই সব অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাক সরকার।” বস্তুত, এ দেশে যাঁরা থাকবেন, প্রত্যেকেরই দেশের হিন্দু ভাবাবেগকে মর্যাদা দিতে হবে বলে তিনি এ দিন মন্তব্য করেছেন তিনি। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পঞ্চাশ বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে ২০ ডিসেম্বর কলকাতায় হিন্দু সমাবেশের আয়োজন করা হবে বলে তোগাড়িয়া জানিয়েছেন।
এ দিনই বিজেপির চার জেলা কমিটি ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করেছে। দলীয় সূত্রে খবর, ওয়ার্ড ধরে ধরে এলাকার মানুষের আবেগ জড়িত, এমন দু’টি করে বিষয় বেছে নিয়ে প্রচার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। পাশাপাশি তৃণমূল যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত বার পুরভোটে জয়ী হয়েছিল, পাঁচ বছরে তার কতগুলি বাস্তবায়িত হয়নি, তা নিয়েই ভোটের ইস্তেহার তৈরি হবে। এ দিন রাজ্য বিজেপির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ অভিযানের সূচনা করেন দলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দীনেশ শর্মা। তিনি দলের রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সদস্যপদ নবীকরণের মাধ্যমে এই অভিযানের সূচনা করে বলেন, “আমাদের লক্ষ্য, এ রাজ্যে সদস্য সংখ্যা অন্তত তিন গুণ বৃদ্ধি করা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy