প্রশ্নপত্রের খসড়া তৈরি। এ বার তা নিয়ে সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে জেরা করতে চলেছে কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই)।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্তভার পেয়ে সিবিআই ইতিমধ্যে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গড়েছে, যার ক্যাম্প অফিস করা হয়েছে সল্টলেকে। ওড়িশা-গুয়াহাটির পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক সেরে সোমবার সিটের সদস্যেরা পৌঁছেও গিয়েছেন কলকাতায়। সিবিআই-সূত্রের খবর, সিট প্রথম দফায় খোদ সারদা-কর্তাকে জেরা করতে চাইছে। যে কারণে বিভিন্ন রাজ্য থেকে সংগৃহীত সারদা সংক্রান্ত বিবিধ তথ্যের ভিত্তিতে একটি প্রশ্নপত্র বানানো হয়েছে। সুদীপ্ত সেনকে মুখোমুখি বসিয়ে তাঁর মুখ থেকে ওই সব প্রশ্নের উত্তর চাইবেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
এবং এই কারণে সিবিআই চাইছে সুদীপ্তকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজেদের হেফাজতে নিয়ে ফেলতে। তাই দ্রুত এফআইআর দায়েরের চেষ্টা চলছে। প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, আইনজীবীদের পরামর্শক্রমে সিবিআই এ মাসের শেষাশেষি সারদা-কাণ্ডে এফআইআর দায়ের করবে। তার পরেই শুরু হবে জেরাপর্ব।
তদন্তে তাঁদের কী কী কাগজপত্র লাগবে, সোমবার বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীবকুমারের সঙ্গে দেখা করে তা জানিয়ে এসেছিলেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। বিধাননগর পুলিশের তরফে তাঁদের বলা হয়, কাগজপত্র হাতে পেতে হলে রাজ্য পুলিশের ডিজি’র অনুমতি লাগবে। মঙ্গলবার সিবিআই-সিটের প্রধান তথা ব্যুরোর উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় যুগ্ম অধিকর্তা রাজীব সিংহ পাঁচ সদস্যের দল নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব ও ডিজি’র সঙ্গে দেখা করে সারদা-তদন্তে প্রয়োজনীয় নথিপত্র হস্তান্তরের আর্জি জানান আনুষ্ঠানিক ভাবে। ওড়িশা প্রশাসনের কাছেও সিট একই আর্জি পেশ করেছে।
পাশাপাশি সিবিআই-সূত্র এ-ও জানিয়ে রাখছে যে, রাজ্য সরকার একান্তই নথি হস্তান্তরে নারাজ হলে তাদের অন্য পথে হাঁটতে হবে। সারদা-কাণ্ডে রাজ্য জুড়ে দায়ের হওয়া ৩৮৫টি মামলার তদন্তকারী অফিসারদের ডেকে পাঠিয়ে প্রত্যেকের কাছ থেকে আলাদা আলাদা ভাবে নথি আদায় করতে হবে। তখন ব্যাপারটা তারা সর্বোচ্চ আদালতেরও গোচরে আনবে। কিন্তু রাজ্য সরকারের সহযোগিতা মিলবে না এমন আশঙ্কা কেন?
এ ক্ষেত্রে ‘অতীত অভিজ্ঞতা’কে দায়ী করছেন সিবিআই-কর্তাদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য: সারদা-তদন্তে ইডি-কে সাহায্য না-করার যে অভিযোগ রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে উঠেছে, তারই প্রেক্ষাপটে সিট যাবতীয় সম্ভাবনা মাথায় রেখে এগোতে চাইছে। প্রসঙ্গত, সারদা ছাড়াও বেশ ক’টি অর্থলগ্নি সংস্থার কাজকর্ম সম্পর্কে সুপ্রিম কোর্ট তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। কোন সংস্থা মানুষের থেকে কত টাকা তুলেছে, আমানতকারীদের ফেরতযোগ্য কত টাকা মেটানো হয়নি, সে অর্থ কোথায় গিয়েছে, কারা ফায়দা তুলেছে এ সব খুঁজে বার করা সিবিআই-তদন্তের মূল উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছেন ব্যুরো-কর্তারা। “যদিও সারদার ব্যাপারটাকে আমরা একেবারে আলাদা ভাবে দেখছি। মূলত ইডি, এসএফআইও এবং সেবি-র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সারদার বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু হবে।” বলেন সিবিআইয়ের এক অফিসার।
কলকাতায় এসে আপাতত তারই প্রস্তুতি চালাচ্ছে সিট। সিবিআইয়ের খবর: সুদীপ্তকে জেরার উদ্দেশ্যে তৈরি করা প্রশ্নাবলির জবাব মিললে তাঁর একদা ‘ছায়াসঙ্গিনী’ দেবযানী মুখোপাধ্যায় ও তৃণমূলের সাসপেন্ডেড সাংসদ কুণাল ঘোষকেও জেরা করা হবে। প্রয়োজনে কুণাল-দেবযানীকে সুদীপ্তের মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দেখা হবে, সারদার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তা বা মন্ত্রীদের উপস্থিতি সংস্থার কারবারে বাড়তি সুবিধা জুগিয়েছিল কি না। সারদাকে ব্যবসা বাড়নোর সুযোগ দিয়ে থাকলে বিনিময়ে ওঁরা কী পেয়েছেন, তা-ও জানা জরুরি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy