সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে এ পর্যন্ত ৬০ জনকে নোটিস পাঠিয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। গত সেপ্টেম্বরে তদন্তের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ধাপে ধাপে এই নোটিসগুলি পাঠানো হয়েছে বলে শনিবার জনিয়েছেন ইডির কর্তারা। তলব করা ব্যক্তিদের মধ্যে কোনও রাজনীতিক আছেন কি? এই প্রশ্নের জবাবে ইডি কর্তাদের মন্তব্য, “তদন্তের স্বার্থে এ ব্যাপারে এখনই কিছু বলা যাবে না।”
যদিও ইডি সূত্রের খবর, সারদার উধাও হয়ে যাওয়া বিপুল টাকা কোথায় গেল তার তদন্তে বেশ ক’জন নেতা-মন্ত্রী চিহ্নিত হয়েছেন। তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে পারেন বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। সবাইকেই জেরা করা হবে বলে ইডি সূত্রের দাবি। তবে ওই সূত্রে একই সঙ্গে এ-ও বলা হচ্ছে যে, বুধবার সারদা কর্তা সুদীপ্ত সেনের স্ত্রী-পুত্রকে গ্রেফতার করার পর থেকে নতুন করে কাউকে নোটিস পাঠানো হয়নি। এ রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীদের কেউ কেউ আগেই নোটিস পেয়ে থাকতে পারেন। তৃণমূলের দুই সাংসদ এবং কলকাতার একটি নামজাদা ফুটবল ক্লাবের কর্তাকে তো আগেই দিল্লিতে তাদের সদর দফতরে ডেকে পাঠিয়ে জেরা করেছে ইডি।
যাঁদের কাছ থেকে সারদার টাকা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলে ইডির তদন্তকারীরা মনে করছেন, সেই তালিকায় আছেন: রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রী: সারদা-সাম্রাজ্যের কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ ছিল ওই মন্ত্রীর। নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়াম-সহ সারদার একাধিক অনুষ্ঠানে সুদীপ্তর ভূয়সী প্রশংসাও শোনা গিয়েছিল তাঁর মুখে। সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে সারদার অফিস মিডল্যান্ড পার্কেও তাঁর যাতায়াত ছিল। সুদীপ্তর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী পিয়ালি বাগুইআটির যে ফ্ল্যাটে ভাড়া ছিলেন, সেটিও ওই মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠরা খুঁজে দেন বলে ইডি সূত্রের দাবি। সূত্রটি জানায়, তদন্তকারীদের জেরায় পিয়ালি ও সুদীপ্তর ছেলে শুভজিৎ বলেছেন, তাঁদের অন্তরালে রাখার ব্যাপারে ওই মন্ত্রীর সক্রিয় ভূমিকা ছিল।
তৃণমূলের প্রভাবশালী এক নেতা: তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষের মাধ্যমে এই নেতার সঙ্গে সুদীপ্তর পরিচয়। সারদা কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পরে সুদীপ্ত কী ভাবে কলকাতা ছেড়ে পালান সেই ধোঁয়াশা কাটানোয় ওই নেতা সাহায্য করতে পারেন বলে মনে করছে ইডি। তা ছাড়া, সারদা কর্তার পরিবারকে সুরক্ষার ব্যবস্থা করার ব্যাপারেও ওই নেতার ভূমিকা থাকতে পারে বলে তদন্তকারীদের ধারণা।
তৃণমূলের এক সাংসদ ও লোকসভার প্রার্থী: সারদার এক কর্তা গত লোকসভা নির্বাচনে তাঁর প্রচারের খরচ বহন করেন বলে অভিযোগ। মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে সুদীপ্তর সঙ্গে দেখাও করতে যেতেন। প্রকাশ্য অনুষ্ঠানে সারদায় লগ্নির আহ্বানও জানিয়েছিলেন তিনি।
তৃণমূলের এক ছাত্র নেতা: সারদার থেকে মাসোহারা পেতেন বলে অভিযোগ। মিডল্যান্ড পার্কের অফিসে যাতায়াত ছিল।
কংগ্রেসের এক সাংসদ: ইডি সূত্রের দাবি, তাঁকে টাকা দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে সারদার খাতায়।
কংগ্রেসের এক নেতা: সারদা কর্তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ ছিল এই নেতার। তাঁর সুপারিশে অনেকে সারদার অফিসে কাজও পেয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা।
কলকাতার এক তৃণমূল নেতা: সারদার বিপণন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত উত্তর কলকাতার ওই নেতার নামে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছিলেন সুদীপ্ত। সারদার আর্থিক বিপর্যয়ের জন্য যাঁদের কাঠগড়ায় তুলে সিবিআই-কে চিঠি লিখেছিলেন তিনি, তাঁদের মধ্যে ওই নেতার নামও রয়েছে।
সল্টলেকের এক তৃণমূল নেতা: সারদা-কাণ্ডের পরে ওই সংস্থার অধীন একটি চ্যানেল চালিয়ে যাওয়ার পিছনে এই ব্যবসায়ী-রাজনীতিকের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন ইডির তদন্তকারীরা। সারদা-তদন্তে যাঁরা সাহায্য করতে পারেন বলে তালিকা সংবাদমাধ্যমকে দিয়েছিলেন কুণাল ঘোষ, তাতে এই নেতার নাম ছিল।
এক ক্রীড়া প্রশাসক: ময়দানের বড় মাপের ফুটবল ক্লাবের কর্মকর্তা। সারদার সঙ্গে একটি সংস্থার চুক্তির ক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা ছিল বলে জানিয়েছেন সুদীপ্ত। সেবির তদন্ত ঠেকাতে ওই নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু কর্তার সঙ্গে সুদীপ্তের বোঝাপড়ায় তিনি মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছিলেন বলে ইডির কাছে খবর।
এক ব্যবসায়ী: সিবিআই-কে দেওয়া সুদীপ্তর অভিযোগপত্রে এঁর নাম রয়েছে। সল্টলেক পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। সারদার টাকা লেনদেন নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারেন বলেই অনুমান তদন্তকারীদের।
ভিন রাজ্যের এক ব্যবসায়ী: এই ব্যবসায়ীর নামও সিবিআই-কে লেখা সুদীপ্তর চিঠিতে রয়েছে। এঁর নাম উল্লেখ করেছেন কুণালও। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে দু’টি রাজ্যে সারদার ব্যবসার সম্প্রসারণে তাঁর ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
ইডির যুগ্ম অধিকর্তার নেতৃত্বাধীন একটি তদন্তকারী দল এখন কলকাতায় রয়েছে। আগামী কয়েক দিনে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে তালিকায় থাকা কাউকে কাউকে ডেকে পাঠিয়ে জেরা করা হতে পারে বলে ইডির একটি সূত্রের অভিমত।
সুদীপ্তর স্ত্রী-পুত্রকে জেরা করে সারদার টাকা কোথায় গিয়েছে তা খোঁজারও কাজ চলছে। এক তদন্তকারী বলেন, “সল্টলেকের বেসরকারি ব্যাঙ্কে পিয়ালি সেনের নামে দু’টি লকার চিহ্নিত করেছি। ভিতরে কী আছে, তা অবশ্য এখনও জানা যায়নি।” পিয়ালি ও শুভজিতের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ দিনই আলিপুর জেলে গিয়ে সুদীপ্তর সঙ্গে দেখা করেন তাঁর আইনজীবী সমীর দাস। তিনি জানান, স্ত্রী-পুত্রের গ্রেফতারে সারদা কর্তা ভেঙে পড়েছেন। সুদীপ্তর দাবি, পিয়ালি ও শুভজিৎ নির্দোষ। সারদার টাকার ব্যাপারে তাঁরা কিছুই জানতেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy