বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে সারদায় জড়িত ‘প্রভাবশালী’দের গ্রেফতার করাতে পারেননি বটে। তবে রীতিমতো বলেকয়ে ঘুমের ওষুধ খেয়ে কুণাল ঘোষ কিন্তু প্রশাসনের শীর্ষ স্তরে হইচই বাধিয়ে দিলেন।
কুণাল আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন শুক্রবার ভোর থেকে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রবল অস্বস্তির মুখে পড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। জেল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি কার্যত স্বীকার করে নিয়ে কিছু ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু আগে থেকে হুমকি দেওয়া সত্ত্বেও কেন কুণালের নিরাপত্তায় ফাঁক থেকে গেল আর কী করেই বা তাঁর হাতে পৌঁছে গেল ঘুমের ওষুধ তার জবাব মেলেনি।
এ দিন সকাল থেকে প্রশ্নগুলো ঝড়ের গতিতে ছড়িয়ে পড়তেই পরিস্থিতি সামাল দিতে আসরে নামেন খোদ মমতা। কুণাল এখন বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রয়েছেন। তাঁর কিছু হলে কারা দফতরকে জবাবদিহি করতে হবে আদালতের কাছে। তা সত্ত্বেও, বিচারকের নির্দেশ পাওয়ার পরেও কেন কারাকর্তারা পর্যাপ্ত সতর্কতা নিলেন না, তা নিয়ে বেজায় চটেছেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তিন জনের তদন্ত কমিটিও গড়া হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের বক্তব্য, প্রথম দফায় প্রেসিডেন্সি জেল সুপার, জেলেরে ডাক্তারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে সরকারের মুখরক্ষার চেষ্টা করেছেন মমতা। কারামন্ত্রী হায়দার আজিজ সফিকেও দায়িত্ব ছাড়তে হতে পারে বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের ইঙ্গিত।
মুখ্যমন্ত্রী নিজে এ দিন অনেকটা সময় বিধানসভায় ছিলেন। তাঁর সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারাও ছিলেন। সকালে স্বরাষ্ট্রসচিবের কাছে ঘটনার রিপোর্ট নেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কাছেই জানতে চান, এত ঘুমের ওষুধ কী করে পেলেন কুণাল? তার অব্যবহিত পরেই স্বরাষ্ট্রসচিবের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গড়ার কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। পরে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় এবং মন্ত্রিসভার প্রথম সারির কয়েক জন সদস্যকে নিয়ে বিধানসভায় নিজের ঘরে বৈঠকে বসেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি সূত্রের খবর, সেখানেই কারামন্ত্রীর ভূমিকায় প্রবল অসন্তোষ জানান মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর প্রশ্ন ছিল, একটা লোক বলেকয়ে আত্মহত্যা করতে গেল! প্রশাসনের সবাই কি ঘুমোচ্ছিলেন?
মুখ্যমন্ত্রী নিজে গোটা ঘটনায় এ ভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করা সত্ত্বেও বিরোধীদের আক্রমণ অবশ্য থেমে থাকেনি। তাঁদের অভিযোগ, যে মেডিক্যাল অফিসারকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তিনি জেলের সর্বক্ষণের কর্মীই নন। এ সব করে ‘আসল অপরাধীদের’ আড়াল করতে চাইছে সরকার।
সিপিএম প্রশ্ন তুলেছে, সারদা-কাণ্ডে রাঘব-বোয়ালদের হদিস পেতে গেলে কুণালের বেঁচে থাকা জরুরি জেনেই কি সরকার সতর্কতা নিল না? বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র এ দিন বলেন, “সুদীপ্ত সেন ধরা পড়ার দিন থেকেই আমরা বলে আসছি, ধৃতদের নিরাপত্তা চাই। রাঘব-বোয়াল পর্যন্ত পৌঁছতে গেলে কুণালদের নিরাপত্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এঁদের মুখ বন্ধ করে দিলে রাঘব-বোয়ালদের আর ধরা যাবে না!”
বিরোধী শিবিরে কারও কারও প্রশ্ন, কুণালকে কি সুপরিকল্পিত ভাবে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়া হয়েছিল, যার জেরে কুণাল ঘুমের ওষুধ খেতে বাধ্য হলেন? এক ধাপ এগিয়ে কেউ কেউ এ প্রশ্নও তুলেছেন, এটা কুণালকে মেরে ফেলার জন্য কোনও চক্রান্ত নয় তো? এই অংশের দাবি, কুণালের মৃত্যু হলে সারদা কেলেঙ্কারিতে জড়িত মাথাদের আড়াল করতে সুবিধা হবে শাসক দলের। কুণাল নিজেও ঠিক এই প্রশ্নই উস্কে দিয়ে বলেছেন, “আমি মরে গেলে ওদের ভাল।”
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা এবং এ রাজ্যে দলের পর্যবেক্ষক সিদ্ধার্থনাথ সিংহের অভিযোগ, “রাজ্য পুলিশ এবং জেল কর্তৃপক্ষ কুণালকে জেলের ভিতরে আত্মহত্যার চেষ্টা করতে দিয়েছেন! এটা কি আত্মহত্যার চেষ্টা, নাকি তাঁকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আত্মহত্যা করতে দেওয়া?” আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ তুলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও বলেন, “এরা কুণালকে মুখ বন্ধ করানোর চেষ্টা করেছে! এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের কারাগারের হাল কী, তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল।”
প্রাক্তন জেল-কর্তারা অবশ্য অবাক নয়। এর আগে শাসক দলের ধৃত কাউন্সিলর শম্ভুনাথ কাউ জেল থেকে মোবাইলে ফোন করে হইচই ফেলেছিলেন। কুণাল ঘুমের ওষুধ খেয়ে দেখিয়ে দিলেন। অবসরপ্রাপ্ত এক জেল-কর্তার মন্তব্য, “এ নিয়ে গবেষণার প্রয়োজন নেই। এখানে জেলের ভিতর কোনও বন্দি ইচ্ছে করলে সব কিছুই পেতে পারেন। তা সে ওষুধই হোক কিংবা নেশার জিনিস বা মোবাইল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy