ইডি দফতর থেকে বেরোচ্ছেন সিবিআই অফিসারেরা। নিজস্ব চিত্র
ভোট পর্ব মিটতেই সারদা-কেলেঙ্কারির তদন্তে সোমবার কলকাতায় এল সিবিআইয়ের বিশেষ তদন্ত দল (সিট)।
সারদা-তদন্তের ভার সুপ্রিম কোর্ট হাতে দেওয়ার পরেই সিট তৈরি করে ফেলেছে সিবিআই। এ বার এফআইআর দায়ের করে তদন্ত শুরু করবে তারা। এফআইআরের অভিমুখ ঠিক করতে এ দিন এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর তদন্তকারী অফিসারদের সঙ্গেও বৈঠক করেন সিবিআই সিট-এর সদস্যরা। সারদা তদন্তে ইতিমধ্যেই অনেক নথি জোগাড় করেছে ইডি। সিটের সদস্যরা কথা বলেছেন বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারের সঙ্গেও। রাজ্য সরকার সারদা-তদন্তে যে সিট তৈরি করেছিল, রাজীব কুমার তার সদস্য ছিলেন। সারদা-কাণ্ডের তদন্তভার প্রথমে শুরু করেছিল বিধাননগর কমিশনারেটই।
সিবিআই সূত্রে বলা হয়, মূল তদন্ত শুরু হওয়ার আগে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ তাঁদের বিশেষ দলটি সেরে ফেলতে চান। সারদা সংস্থার কম্পিউটারে থাকা নথি পেতে ইতিমধ্যেই ইন্টারপোল মারফত আমেরিকায় যোগাযোগ শুরু করে দিয়েছে এই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থাটি। ওই নথি হাতে এলে সারদা সংস্থার টাকা পয়সার লেনদেনের বিষয়টি তাঁদের কাছে যেমন পরিষ্কার হবে, তেমনই এই কেলেঙ্কারির আন্তর্জাতিক যোগাযোগটিও স্পষ্ট হবে।
সম্প্রতি কয়লা কেলেঙ্কারির তদন্তে নেমে শীর্ষ আদালতে অপদস্থ হতে হয়েছে সিবিআইকে। সিবিআইয়ের ডিরেক্টরকে সরাসরি ডেকে সংস্থাটিকে কেন্দ্রীয় সরকার তথা শাসক দলের ‘তোতাপাখি’ হিসেবে উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট। সারদা-তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের সেই মন্তব্যকে ভুল প্রমাণ করে তাঁরা নিজেদের কর্মকুশলতার প্রমাণ দিতে চান বলে মন্তব্য করেছেন সিটের এক সদস্য। তিনি বলেন, এফআইআরে যাতে কোনও ফাঁক না থাকে, সে জন্যই ইডি এবং রাজীব কুমারের সঙ্গে তাঁরা এ দিন কথা বলে নেন।
সারদা-কাণ্ডে ২০০-র বেশি মামলা রয়েছে। কিন্তু, তার মধ্যে বাছাই করা কয়েকটি মামলার তদন্ত করবে সিবিআই। প্রতিটি মামলার জন্য আলাদা এফআইআর-ও করা হবে। তদন্ত করবে আলাদা আলাদা দলও। এখন কয়েক দিন ধরে আইনজীবীদের পরামর্শ নিচ্ছে সিআইডি।
ভোট পর্বের মধ্যেই সারদা-তদন্ত চালানোর জন্য তাদের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যুগ্ম অধিকর্তা রাজীব সিংহের নেতৃত্বে সিট গড়ে ফেলে সিবিআই। কিন্তু কেন্দ্রে সরকার বদলের পরে সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের গতি কী হবে, তা নিয়ে সিবিআই কর্তারাই অনেকে বিভ্রান্ত ছিলেন। তবে অনেকের ধারণা, সারদা-তদন্তের বিষয়টি খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখবে নতুন সরকার। নির্বাচনী প্রচারে পশ্চিমবঙ্গে এসেও সেই আশ্বাস দিয়ে গিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। বিজেপির রাজ্য শাখাও সেটাই চায়।
এ দিনই গুয়াহাটি এবং দিল্লি থেকে সিটের পাঁচ সদস্য কলকাতায় পৌঁছে চলে যান সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআইয়ের অফিসে। ওই ভবনেই ইডি-রও অফিস। ইডি তাদের তদন্তে এখনও পর্যন্ত কী কী তথ্য পেয়েছে, এ দিন তার খোঁজখবর নেন সিবিআই কর্তারা। এই প্রথম সারদা-কাণ্ড নিয়ে ইডি-র অফিসারদের সঙ্গে খোলাখুলি কথা বললেন সিবিআই অফিসারেরা। এফআইআরের বয়ান ঠিক করতে দু-এক দিনের মধ্যে সিটের অফিসারেরা সেবি ও সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস (এসএফআইও)-এর অফিসারদের সঙ্গেও কথা বলবেন। কথা বলা হবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গেও।
ইডি সূত্র থেকে জানানো হয় সারদা-কর্তা সুদীপ্ত সেন গত বছর সিবিআইয়ের কাছে প্রথম যে চিঠিটি পাঠিয়েছিলেন, তাতে তিনি কয়েক জনের নাম উল্লেখ করেছিলেন। পরে অবশ্য প্রথম চিঠিটি বাতিল করে নতুন একটি চিঠি সিবিআই-কে দেন সুদীপ্ত। তবে সিবিআই মনে করে, দ্বিতীয় চিঠিটি সুদীপ্ত চাপে পড়ে লিখতে বাধ্য হন। প্রথম চিঠিতে সুদীপ্ত যাঁদের নাম উল্লেখ করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ইডি কারওকে জেরা করেছে কী না, সে ব্যাপারে এ দিন সিবিআই অফিসারেরা খোঁজ নিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy