এমনিতেই আর্থিকভাবে ধুঁকছে এনবিএসটিসি। এই আর্থিক বছরে সংস্থার জন্য রাজ্য সরকার যা বরাদ্দ করেছিল, তা ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। নিগম সূত্রের খবর, গত বছর বরাদ্দের বাইরের আদালতের বিভিন্ন মামলার খরচ, বকেয়া পেনশন-সহ নানা খরচ মেটাতে গিয়ে ওই টাকা ফুরিয়েছে। এই অবস্থায় চলতি মাসে তো বটেই, আগামী দু’মাসেও (মার্চ অবধি) এনবিএসটিসির কর্মী, অফিসারদের বেতন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
চলতি সপ্তাহেই নিগমের গত মাসের বেতন হওয়ার কথা। এই অবস্থায় কোচবিহার থেকে নিগমের আধিকারিকেরা প্রতিটি ডিভিশনে যোগাযোগ করে নিজেদের আয় থেকে বেতন দিতে পারবেন কি না, তা দেখার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই বিষয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যের বিরোধীরা। সিপিএম, বিজেপির মত দলগুলির অভিযোগ, রাজ্য সরকার নানা উত্সব নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে। সেখানে কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ সরকারি সংস্থার হাজার হাজার কর্মী গোটা মাস কাজের পর বেতন পাবেন কি না, তার নিশ্চয়তা নেই।
নিগম সূত্রের খবর, আর্থিক সমস্যার জেরে এমনিতেই প্রতি মাসে কর্মীরা দীর্ঘদিন ধরে প্রায় ৭৫ শতাংশ বেতন পাচ্ছেন। কোচবিহার, রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি ও বহরমপুর ডিভিশন মিলিয়ে প্রায় ৩০ কোটি বকেয়া বেতনের পাহাড় জমছে। সেখানে এ বার মাসের বেতনই পাবেন কি না নিয়ে আতঙ্কিত কর্মীরা।
যদিও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন নিগমের চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, “বিষয়টি দেখা হচ্ছে। নতুন করে বরাদ্দ চেয়ে পাঠানো হয়েছে। এডির সঙ্গে কথা হয়েছে। উনি বিষয়টি দেখছেন।” আর নিগমের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর (এমডি) সুবলচন্দ্র রায় বলেন, “সব কিছুই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানেন। সবটাই সংস্থার আভ্যন্তরীণ বিষয়। এর বাইরে এ নিয়ে কিছু বলার নেই।”
নিগম সূত্রের খবর, চলতি আর্থিক বছরে নিগমের জন্য রাজ্য সরকার প্রায় ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করে। এরমধ্যে বেতন বাবদ ভর্তুকির পরিমাণ প্রায় ৬৫ কোটি টাকা। নিগমের স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ২২৯৬ জন। চুক্তির ভিত্তিতে কর্মী রয়েছেন ১২০০ জনের মত। বর্তমানে সংস্থার নিজস্ব আয় মাসে ৮ কোটি টাকার মত। সেখানে বেতন বাবদ মাসে লাগে ৬ কোটি ৭৭ লক্ষ টাকা। অন্যান্য খরচের জন্য মাসে আরও প্রায় ৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা লাগে।
আদালতের নির্দেশে অবসরপ্রাপ্তদের বকেয়া ১৯ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। তারমধ্যে ৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়াও গত ফেব্রুয়ারিতে স্বেচ্ছাবসর প্রকল্পে মঞ্জুর হওয়া ৫৬৭ জনকে জুন মাস অবধি ধাপে ধাপে ছাড়া হয়। স্বেচ্ছাবসরের জন্য প্রয়োজনীয় ৮৬ কোটি টাকা দেয় সরকার। কিন্তু স্বেচ্ছাবসর ধীরে ধীরে চলায় প্রতিমাসে আধ কোটি টাকা করে ওই কর্মীদের সাধারণ বেতন বাবদ দিতে হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে সব টাকা খরচের পর তাই বিপাকে পড়ে গিয়েছেন নিগম কর্তৃপক্ষ।
৬৮৪টি বাস চালিয়ে মাসিক আয় থেকে বেতন মেটালে গাড়ি চালানো তো দূরের কথা, সংস্থার রক্ষণাবেক্ষণ-সহ আর কোনও কাজই হবে না বলে নিগমের অফিসারদের একাংশ জানিয়ে দিয়েছেন।
তাঁদের কয়েকজন জানান, সম্প্রতি কলকাতায় বিভিন্ন বকেয়া-সহ বেতনের বিষয়টি উল্লেখ করে বাজেট বরাদ্দের বাইরে ৪৭ কোটি টাকা চাওয়া হয়। ফাইল ফেরত আসে। ফের তা পরিবহণ দফতরে পাঠিয়ে গত সপ্তাহে তদ্বির করা হয়। পরিবহণ দফতর ওই টাকার অঙ্ক কমিয়ে প্রায় ৪২ কোটি টাকা করে অর্থ দফতরে পাঠিয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও সুবজ সংকেত মেলেনি।
সংস্থার এই অবস্থার জন্য অব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “শিলিগুড়ি কার্নিভ্যাল, উত্তরবঙ্গ ও ডুয়ার্স উত্সবের জন্য কোটি কোটি খরচ হচ্ছে। আর সরকারি কোষাগারের বরাদ্দ অর্থ অব্যবস্থা, দূরদর্শিতার অভাবে ঠিকঠাক খরচ হচ্ছে না। এনবিএসটিসি এর ব্যতিক্রম নয়।” আর বিজেপি-র দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন বসু বলেন, “প্রতি ক্ষেত্রে সরকারের এ ধরণের ছবি ফুটে উঠছে। আসলে সরকার উত্সব, অনুদান, পুরস্কারের টাকা নিয়ে এত ব্যস্ত, যে সরকারি সংস্থাগুলির দিকে খেয়ালই রাখতে পারছে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy