জমি আন্দোলনের প্রশ্নে সিঙ্গুরের থেকে তাদের আলাদা করে দেখার চেষ্টার প্রতিবাদ জানাল অন্ডালের কৃষি জমি রক্ষা কমিটি। বরং ‘সিঙ্গুর আর অন্ডাল, একই গাছের দুই ডাল’ বলে স্লোগান তোলা হয়েছে।
রাজ্যে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে মাঠে নামা বিজেপি ইতিমধ্যেই অন্ডালের অনিচ্ছুক চাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছে। ঠিক যে ভাবে সিঙ্গুরের জমিহারাদের পাশে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপি এখন সেই অস্ত্রেই তাঁকে বধ করতে চাইছে। তৃণমূলকে বিপাকে ফেলতে সিঙ্গুর আন্দোলনের দুই নেতা, বর্তমানে রাজ্য মন্ত্রিসভার দুই সদস্যকে চিঠি দিয়ে অন্ডালের অনিচ্ছুক কৃষকদের পাশে থাকার আবেদনও জানাতে পারে কমিটি।
অন্ডালে প্রস্তাবিত বিমাননগরীর জন্য অনিচ্ছুক জমিদাতাদের নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। বুধবার দুর্গাপুরে তিনি জানিয়ে দেন, এক বার জমি অধিগ্রহণ করা হলে তা ফেরত দেওয়ার আইনি সংস্থান নেই। এ প্রসঙ্গে সিঙ্গুরের কথাও তোলেন তিনি। ঘটনাচক্রে, তৃণমূল সরকারে এসেই যখন রাতারাতি অর্ডিন্যান্স জারি করে অধিগৃহীত জমি নিজেদের দখলে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল, তখন মলয়বাবুই ছিলেন রাজ্যের আইনমন্ত্রী। সেই চেষ্টা বৈধ না অবৈধ, তা আগামী নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্টে ফয়সালা হওয়ার কথা।
তার আগেই মলয়বাবু প্রকাশ্যে অধিগৃহীত জমি ফেরানো যায় না বলে মন্তব্য করে বসায় প্রবল চাপে পড়ে যায় তৃণমূল। দলের চাপের মুখে পিছু হটে বৃহস্পতিবার মলয়বাবু দাবি করেন, তাঁর বক্তব্যের অপব্যখ্যা করা হয়েছে। সিঙ্গুর আর অন্ডাল এক নয়। দাবি করেন, “অন্ডালের আন্দোলনের সঙ্গে সিঙ্গুরের তুলনা করে সিঙ্গুরকে ছোট করার চেষ্টা হয়েছে।... অন্ডালের আন্দোলন এক নয়। এখানে চাষ হয় না, হলেও একফসলি। জমিমালিকেরা কেউই অনিচ্ছুক নন। তাঁরা বর্ধিত দাম চাইছেন, জমি দিতে তাঁরা রাজি।’
অন্ডালের জমি রক্ষা কমিটির সম্পাদক সুশীল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “মন্ত্রী যা বলেছেন, তা দুঃখজনক। এখানে অনেকেই অনিচ্ছুক রয়েছেন। তৃণমূল এক সময়ে জমি আন্দোলন করেই ক্ষমতায় এসেছিল। এখন তারা সিঙ্গুরের সঙ্গে অন্ডালের বিভাজন করার রাস্তা নিয়েছে। এটা অন্যায়।” সিঙ্গুরের মতো অন্ডালেও অধিগ্রহণ হয়েছিল বিগত বাম আমলে। জাতীয় সড়কের পাশে প্রায় ১০৯ একর জমির ছ’শোরও বেশি জমিমালিক চেক নেননি। সুশীলবাবু বলেন, “এঁদের অনেকে জমি দিতে অনিচ্ছুক। সে কথা আমরা বহু বার জানিয়েছি। এ ছাড়াও ক্ষতিপূরণ পাননি প্রায় হাজার তিনেক খেতমজুর ও বর্গাদার।”
অন্ডালের চাষিরা শুধু বর্ধিত দামের জন্যই আন্দোলন করছেন বলে মলয়বাবু বিবৃতি দেওয়াতেও ক্ষিপ্ত বহু চাষি। স্থানীয় চাষি সঞ্জয় গড়াই বলেন, “অনিচ্ছুক কেউ নেই? আমিই তো জমি দিতে চাই না। আমার যা আয় জমি থেকেই। জমি চলে গেলে করব কী?” একই বক্তব্য পার্থ পান্ডে, কল্লোল ঘোষ, শক্তি ভট্টাচার্য, সঞ্চয় গড়াই, সুপ্রিয় গঙ্গোপাধ্যায়, শেখ ফারহাদদের। আর এক চাষি সুকুমার ঘোষ বলেন, “জমি দিতে চাইনি। জোর করে পুলিশ পাঠিয়ে বাম আমলে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। তখন তৃণমূল পাশে ছিল। এখন পরিবর্তনের পরিবর্তন দেখছি। নানা ভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।” সুশীলবাবু বলেন, “ক্ষমতায় এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, অনিচ্ছুক চাষিদের জমি নেওয়া হবে না। আমরা চাই, বিমাননগরী হোক। কিন্তু অনিচ্ছুকদের জমি না নিয়ে।”
অন্ডালের জমি একফসলি বা অনাবাদি মন্ত্রীর এই বক্তব্যেরও বিরোধিতা করেছেন সুশীলবাবুরা। তাঁদের দাবি, “অন্ডালের জমি আদৌ অনাবাদি নয়। সেচের ভাল ব্যবস্থা নেই তাই সারা বছর চাষ হয় না। সেটা আমাদের দুর্ভাগ্য।”
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য নরেশ কোনারের মতে, “সিঙ্গুর এক অর্থে চাষি ও খেতমজুরদের সাহস জুগিয়েছিল। কিন্তু আজ রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য চরম মিথ্যাচার করা হচ্ছে।” কমিটি সূত্রের খবর, শনিবারই সিঙ্গুর আন্দোলনের সামনে থাকা দুই তৃণমূল নেতার সমর্থন চেয়ে চিঠি দেবে তারা। ওই দুই নেতাকে রাত পর্যন্ত ধরা যায়নি। ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি মন্ত্রী মলয়বাবু ও তৃণমূলের জেলা সভাপতি (শিল্পাঞ্চল) অপূর্ব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। জবাব আসেনি এসএমএসেরও। তবে তৃণমূলের অন্ডাল ব্লক সভাপতি কাঞ্চন মিত্রর দাবি, “এখানে কেউ অনিচ্ছুক নন। সবাই জমি দিতে চান। বিজেপি রাজনৈতিক ফায়দার জন্য স্থানীয় মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy