বাংলার গোপালপুরে কিসের টানে যাবেন পর্যটকেরা? ছবি: সংগৃহীত।
গোপালপুর বললেই ওড়িশার কথাই সবচেয়ে আগে মাথায় আসে। সুদীর্ঘ বালুতটে অরিরাম আছড়ে পড়া ঢেউ, বঙ্গোপসাগরের রূপ একেবারেই আলাদা সেখানে।
তবে গোপালপুরে কি শুধু সমুদ্রই আছে? যদি বলা হয়, সেখানে আছে শাল, শিমুল, পিয়ালের বন। সঙ্গে পুরনো মন্দির, প্রাচীন গড়। তবে মানবেন কি? আসলে এ-ও এক গোপালপুর। তবে তার সাকিন এই বাংলায়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোপালপুরেও ইদানীং বাড়ছে পর্যটকদের আনাগোনা।
কলকাতা বা শহরতলি থেকে যাঁরা মাত্র দিন দুয়েকের জন্য চেনা ছকের বাইরে কোথাও বেড়াতে যেতে চান, তাঁরাই বেছে নিচ্ছেন এই স্থান। তার কারণও আছে। মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টায় পৌঁছনো যায় শাল, পিয়ালের সুবিশাল জঙ্গলে, মিঠে রোদে পিঠ দিয়ে পা ডোবানো যায় স্বচ্ছ জলে, সারা দিন চুপ করে বসে নিবিড় ভাবে উপভোগ করা যায় প্রকৃতির সান্নিধ্য।
কলকাতা থেকে গোপালপুরের দূরত্ব সড়কপথে কমবেশি ১৩৫ কিলোমিটার। মেদিনীপুর ট্রাফিক মোড় থেকে দূরত্ব মোটামুটি ৭-৮ কিলোমিটার। সেখান থেকে মেদিনীপুর শহরের গান্ধী মোড় হয়ে গেলেই পড়বে গোপালপুর বায়োডাভার্সিটি পার্ক।
প্রবেশমূল্য দিয়ে সেখানে প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সাজানো গাছগাছালি। আরও খানিক এগোলে পুষ্করিণী। সেখান থেকেই চোখে পড়বে শালের জঙ্গল। পার্ক ঘুরে গাড়ি বা টোটো ভাড়া করে বেরিয়ে পড়া যায় আশপাশের কয়েকটি জায়গা ঘুরে দেখতে। মুড়াকাটার কাছাকাছি রয়েছে কুন্দ্রামাতার থান। এ ছাড়াও এখান থেকে যেতে পারেন কংসাবতীর জোড়া ব্রিজ। নদীর বুকে দু’টি ব্রিজ পাশাপাশি। দেখে নিতে পারেন জমিদার বাঁধ। গাছগাছালি ঘেরা গ্রামীণ পরিবেশে, জলাধারের স্বচ্ছ জলে পা ডুবিয়ে খানিকটা সময় দিব্যি কেটে যাবে সেখানে। আর আছে লালগড়ের জঙ্গল।
এ তো গেল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। রয়েছে ইতিহাসও। গোপালপুরে রয়েছে বহু পুরনো দু’টি একচালা মন্দির। জায়গাটি দাসপুর থানার অন্তর্গত। গোপালপুর স্কুল থেকে খানিকটা গেলেই দেখা মিলবে ভুবনেশ্বর এবং গগনেশ্বর নামে দুই শিবমন্দিরের। কালের প্রকোপে দেওয়ালের রং ফিকে হয়ে গেলেও এখন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়নি মন্দিরের টেরাকোটার কারুকাজ। বিভিন্ন মূর্তি ঠাঁই পেয়েছে সেখানে। দু’টি মন্দিরের দরজায় রয়েছে দ্বারপালের রিলিফ। মুখোমুখি দুই মন্দিরের অদূরেই রয়েছে রাসমঞ্চ। তিনটি খিলানের অলিন্দ রয়েছে তাতে। রাস এবং দোলে এখনও উৎসব হয়। আসেন ভক্তেরা।
গোপালপুরে দুপুরের মধ্যে পৌঁছে কাছেপিঠের জায়গাগুলি ঘুরে নিতে পারেন সে দিনই। পরদিন চলে যেতে পারে কর্ণগড়ে। মেদিনীপুর শহর থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার দূরে এমনই একটি গ্রাম কর্ণগড়, যা রানি শিরোমণির নেতৃত্বে চুয়াড় বিদ্রোহের ইতিহাস বহন করে চলেছে।
১৭৯৮ সালে স্থানীয় চুয়াড় সম্প্রদায়ের মানুষ ব্রিটিশদের জোর করে কর আদায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন এখানেই। নেতৃত্ব দেন রানি শিরোমণি। এই বিদ্রোহ দমন করতে ব্রিটিশদের কম ঝক্কি পোয়াতে হয়নি। তবে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়ে কারাবরণ করতে হয় রানিকে। তার পর সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। গড় সংরক্ষিত এলাকা। টিকিট কেটে ঢুকতে হয়।
পরিখা ঘেরা গড়ের দক্ষিণাংশে কর্ণগড়ের রাজাদের কুলদেবতা দণ্ডেশ্বর শিব এবং দেবী মহামায়ার মন্দির। জানা যায়, গড় থেকে রানি শিরোমণি প্রতি দিন মহামায়ার মন্দিরে পুজো দিতে আসতেন। এখনও গ্রামবাসীরা সেখানে পুজো দিতে আসেন।
কী ভাবে যাবেন?
ট্রেনে গেলে নামতে হবে মেদিনীপুর স্টেশনে। সেখান থেকে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে গেলে দূরত্ব ১০ কিলোমিটারের মতো। ধেরুয়া, মুরাকাটা হয়েও যাওয়া যায়। কলকাতা থেকে গাড়িতে এলে কোলাঘাট পার করে ডেবরা টোল প্লাজ়া হয়ে কংসাবতীর ব্রিজ পেরিয়ে আসতে পারেন। ট্রাফিক মোড় হয়ে গোপালপুর।
কোথায় থাকবেন?
বায়োডাইভারসিটি পার্কে থাকার জন্য রয়েছে চারটি কটেজ। তিনটি কটেজ দ্বিশয্যার এবং একটিতে চার জন থাকতে পারবেন। খরচ দৈনিক মাথাপিছু থাকা এবং খাওয়া নিয়ে ১৭০০-২০০০ টাকা। ‘মৃত্তিকা’ নামে পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরও একটি থাকার জায়গা রয়েছে। এ ছাড়া রয়েছে রাঙামাটি যুব আবাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy