সোনামাখা: তখন সূর্যের প্রথম আলো ঠিকরে পড়ছে চার পাশে
ভোর চারটে। ১২ জনের দল চড়াই ভাঙতে ভাঙতে এগিয়ে চলেছে। গন্তব্য চন্দ্রশিলা পিক, প্রায় ১৩,০০০ ফুট। উদ্দেশ্য ওখান থেকে সূর্যোদয় দেখা। গতকালই ট্রেক করে চোপতা থেকে তুঙ্গনাথ পৌঁছেছি চার ঘণ্টার পরিশ্রমে। ১৯-৬২ বছর বয়সি নানা সদস্যের মধ্যে আমার মতো অনেকেই অনভিজ্ঞ। কিন্তু তা বোঝার জো নেই। কারণ অবশ্যই ইচ্ছাশক্তির জোর আর লিডারের নেতৃত্ব।
সার বেঁধে এগিয়ে চলেছি। চার দিক নিঝুম। আওয়াজ বলতে শুধু লাঠি ঠুকে এগিয়ে যাওয়ার শব্দ। শুরুর কিছুটা পথ আলগা পাথুরে, সামান্য চড়াই। কিন্তু অনতিদূরেই সেই পথ ত্রিকোণমিতির অঙ্কের কথা মনে করায়। শুরুতে শালের সালোয়ার, বডি ওয়র্মার, জ্যাকেটে কাঁপছিলাম। আর এখন ঘামছি। পাহাড় নিজে ধীর-স্থির। তাই সেখানে নেই সময়ের তাড়া। সবাই এগিয়ে চলেছি নিজের ছন্দে, গতিতে। খাড়াই পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে খেয়ালই করিনি বুগিয়ালকে। গাইডের নির্দেশে যখন তাকালাম, চোখ ঝলসে গেল। সবুজ বুগিয়াল। মিহি বরফে ঢাকা, জ্যোৎস্নার সুধাধারা ঢেলে দিয়েছে চাঁদ। কে বলে চাঁদের কলঙ্ক আছে! ফের পথ চলা চড়াই পানে। সে পথ যে কঠিন, হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম। হঠাৎ তুঙ্গনাথের মন্দির থেকে ভেসে এল ঘণ্টার ধ্বনি। কী মনোরম অনুভূতি! এ সব কারণেই বোধহয় এত পরিশ্রম সত্ত্বেও মানুষ ট্রেক করে যুগ যুগ ধরে।
লাঠি তখন আমাদের তৃতীয় পা। ওর সাহায্যেই এগিয়ে চলেছি। এ বার রাস্তা আরও খারাপ। মাথায় আছে লিডারের নির্দেশ, পাশাপাশি পথ চলা বারণ। অবশেষে পরিশ্রম সার্থক। ঘড়িতে ছ’টা বাজতে কিছু বাকি। প্রকৃতির প্যালেটে রং মেশানো তখনও শুরু হয়নি। নীচের দিকে হালকা মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। ছোট ছোট সবুজে মোড়া পাহাড়কে সামনে রেখে পিছনে বরফমোড়া নীলকণ্ঠ, চৌখাম্বা, হাতি-ঘোড়া, কেদারনাথ, কেদারডোম...
যে ভাবে মন্দিরের সারসার ঘণ্টা পরপর বাজিয়ে চলে যাই, সে ভাবেই সোনা রঙের আভা একটি একটি করে শৃঙ্গ ছুঁয়ে যাচ্ছে। মন ভরে দেখে নিচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই ‘সোনার লুঠ’ শেষ হল। চারপাশ তখন শ্বেতময়। জনশ্রুতি, রাবণ বধের পরে রামচন্দ্র এখানে সাধনা করেন। গঙ্গামন্দিরে প্রণাম সেরে ফের নামা শুরু। বরফ গলতে শুরু করেছে। পাথরে পা দেওয়া মানেই সর্বনাশ। তা-ও শক্ত পায়ে নেমে আসছি। রােত বোধ করি ভাল করে দেখিনি। দিনের বেলা যা দেখলাম, চমকে উঠলাম— এই রাস্তা দিয়েই আমরা উঠেছিলাম!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy