গোয়ার ব্যাসিলিকা বম জেসাস। ছবি : সংগৃহীত।
চলতি শীতে গোয়ায় গেলে ‘বিরল’ অভিজ্ঞতা হতে পারে। কারণ, গোয়ায় এই মুহূর্তে চলছে এমন একটি অনুষ্ঠান, যা দশ বছরে এক বার দেখার সুযোগ মেলে। গত ২১ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে ওই অনুষ্ঠান। চলবে ডিসেম্বর পেরিয়ে জানুয়ারির ৫ তারিখ পর্যন্ত। ৪৬ দিন ধরে চললেও ওই অনুষ্ঠান ঘিরে ভিড়ের অন্ত নেই। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তো বটেই, বিদেশ থেকেও তীর্থযাত্রীদের ঢল নেমেছে কোঙ্কন উপকূলে।
কী দেখতে আসছেন সকলে?
প্রায় সব ধর্মেই ঈশ্বর বিশ্বাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা রকম অলৌকিকতার উপাখ্যান। খ্রিষ্ট ধর্মও তার ব্যতিক্রম নয়। গোয়ার ওই অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িয়ে তেমনই এক অলৌকিক গাথা। যা তৈরি হয়েছে খ্রিষ্ট ধর্মের সন্ত ফ্রান্সিস জেভিয়ার্সকে ঘিরে। গোয়ায় খ্রিষ্ট ধর্মের প্রচার এবং প্রসার দুই-ই করেছিলেন সন্ত জেভিয়ার্স। স্পেনদেশীয় ওই সন্ত গোয়ার নানা উন্নতিরও মূলে। দশ বছর অন্তর গোয়ায় যে বিশেষ অনুষ্ঠানটি হয়, তা ওই সন্তের জন্যই। প্রয় ৫০০ বছর আগে প্রয়াত ওই সন্তের দেহাবশেষ জনসমক্ষে রাখা হয় অনুষ্ঠান চলাকালীন। বিশ্বাস, ওই দেহাবশেষের দর্শণে পূন্যার্জন হয়। তাই রুপো আর কাচের সিন্দুকে রাখা সন্তের দেহাবশেষ দেখতে এবং তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন পুন্যার্থীরা। শুধু খ্রিষ্টধর্মের মানুষ নয়, হিন্দু, মুসলিম এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও সন্তের দর্শনে আসেন গোয়ায়। কারণ, ৪৬ দিনের প্রদর্শনীর পরে সন্তের দেহাবশেষ চলে যাবে পুরনো গোয়ার বম জেসাস বাসিলিকার গর্ভগৃহে। দু’টি মজবুত দরজার আড়ালে তালাবন্ধ করা থাকবে। সেই তালা আবার খুলবে দশ বছর পরে। যেমন এর আগে ২০১৪ সালে শেষ খুলেছিল। ২০২৪ সালের পর আবার সিন্দুক বন্দি সন্তকে দেখা যাবে ২০৩৪ সালে।
কী বিশ্বাস?
১৫৫৪ সালে সন্ত জেভিয়ার্সের মৃত্যুর পরে তাঁর দেহাবশেষ নিয়ে আসা হয় গোয়ায়। বিশ্বাস ছিল, তাঁর দেহাবশেষ ইহলোক আর পরলোকের সংযোগ করতে সাহায্য করে। তাই সেই সময়ে যাঁরা ওই দেহের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা অনেকেই দেহের কিছু কিছু অংশ সমাজের বিশিষ্টদের হাতে তুলে দেন। দেহাবশেষ রাখা হয় গোয়ার বিভিন্ন চার্চেও। কোথাও চামড়ার টুকরো, কোথাও হাড়ের, কোথাও সন্তের পরনের কাপড়ের টুকরোও। কথিত আছে, এক মহিলা নাকি সন্তের দেহের সামান্য অংশ পেতে এতটাই মরিয়া ছিলেন যে, সন্তের মৃতদেহের পায়ের একটি আঙুল কামড়ে নিয়েছিলেন। সেই দেহাবশেষ আজও রয়েছে ওই পরিবারের কাছে। একই বিশ্বাসে, সন্তের একটি হাত রাখা আছে রোমের গির্জাতেও। খ্রিষ্ট ধর্মীয়রা বিশ্বাস করেন, ওই দেহাবশেষ সৌভাগ্যেরও প্রতীক। দর্শনেও সেই সৌভাগ্য মেলে। অলৌকিকতার প্রমাণ হিসাবে তাঁরা বলেন প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো সন্তের দেহে আজও পচন ধরেনি। সন্তের দেহাবশেষ দেখতে তাই পুন্যার্থীরা ভিড় করেন গোয়ায়।
কোথায় দেখা যায়?
পুরনো গোয়ার ব্যাসিলিকা বম জেসাসে থাকলেও প্রদর্শনীর ক’টি দিন সন্তের দেহাবশেষ থাকে সে ক্যাথিড্রালে। আগে কাঁধে করে রুপোর সিন্দুক বয়ে নিয়ে যেতেন ব্যাসিলিকার সদস্য এবং পুন্যার্থীরা। এ বছর অবশ্য ওই সিন্দুকের আদলের একটি বৈদ্যুতিন শকটবাহী যান তৈরি করা হয়েছে। মিছিল করে সেই শকট নিয়ে আসা হয়েছে ব্যাসিলিকা বম জেসাস থেকে সে ক্যাথিড্রালে। ৫ জানুয়ারি তা ফেরানো হবে একই ভাবে শোভাযাত্রা করে। আপাতত সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকবে সে ক্যাথিড্রালে। সেখানেই শায়িত থাকবেন একটি হাত এবং শরীরের নানা অংশ খোয়ানো ‘অবিনশ্বর’ সন্ত জেভিয়ার্স।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy