Top Places to Visit in Goa Other than Beaches dgtl
Goa
চেনা সৈকতের কাছেই আছে অচেনা মন্দির! গির্জা-বালির গোয়ায় অন্য কী কী দেখতে পারেন?
ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মেলবন্ধনে দক্ষিণ গোয়ায় এমন অনেক জায়গা আছে, যা অনেকেরই চেনা মানচিত্রের বাইরে। সাগর সৈকতের হাত ছাড়িয়ে অল্প চেনা পথে পাহাড়ের আঁচলে জড়ানো অন্য গোয়ার সুলুক সন্ধান রইল।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতাশেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৪ ১৮:৫৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
গো...গোয়া..গন! বেড়াতে যাওয়ার বাই উঠলে কটক না গিয়ে ইদানীং অনেকেই গোয়া চলে যাচ্ছেন। মধুচন্দ্রিমার ঠিকানা হিসাবে গোয়া বেশ জনপ্রিয়। পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ও তার অসংখ্য শাখা-প্রশাখা গোয়ার প্রকৃতিকে ঢেলে সাজিয়েছে। অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দেশের সর্বাধিক পর্যটকবান্ধব রাজ্য হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে।
০২২১
শহরে যেমন থাকার ব্যবস্থা আছে, তেমনই গোয়ার সমুদ্র সৈকতেও কিন্তু কম মনোরম নয়। তবে শুধু বিচ নয়, পুরনো মন্দির, পাহাড়়, অরণ্য, জলপ্রপাত— গোয়ার সঙ্গে জুড়ে আছে এ সবও। ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মেলবন্ধনে দক্ষিণ গোয়ায় এমন অনেক জায়গা আছে, যা অনেকেরই চেনা মানচিত্রের বাইরে। সাগর সৈকতের হাত ছাড়িয়ে অল্পচেনা পথে পাহাড়ের আঁচলে জড়ানো অন্য গোয়ার সুলুক সন্ধান রইল।
০৩২১
শ্রী শান্তাদুর্গা মন্দির: এই মন্দিরের ঠিকানা দক্ষিণ গোয়ার ভেরনেম গ্রাম। মন্দিরটি ১৭৩৮ সালে সাতারার শাসক শাহুরাজিৎ নির্মাণ করেছিলেন। এই মন্দিরকে কেন্দ্র করে নানা গল্প প্রচলিত। কথিত আছে, শিব এবং পার্বতীর পুর্নমিলনের পরে এখানে এসেছিলেন। সেই কারণেই এই মন্দির তৈরি করা হয়েছিল।
০৪২১
এই মন্দিরে পার্বতী হল দুর্গার নমনীয় এবং শান্ত রূপ। সেখান থেকেই এই মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছে। এই মন্দির চত্বরের অভিনব স্থাপত্য মুগ্ধ করে। মন্দিরের প্রধান প্রবেশদ্বারে রূপোর কারুকার্য। পাহাড়ের কোলে মন্দিরটি দেখতে অনেকটা গম্বুজের মতো। দর্শনার্থীদের ভিড়ে সারা বছরই গমগম করে মন্দির চত্বর।
০৫২১
ভগবান মহাবীর অভয়ারণ্য: দক্ষিণ গোয়ার আরও এক মনোমুগ্ধকর ঠিকানা। মনোরম বনের ভিতর দিয়ে চলা। নানা রকমের বন্যপ্রাণী থাকলেও কেউ হিংস্র নয়। এক জায়গায় রাস্তার নীচের দিকে কলকল করে পাহাড়ি চরিত্রের নদী বয়ে চলেছে। জনবসতিহীন বিস্তীর্ণ এলাকা। বনের ভিতরে পশ্চিমঘাট পর্বতের ছায়ায় তামদি সুরলা শিবমন্দির যাবার সুন্দর রাস্তা হয়েছে। আলো-ছায়ায় মোড়া আঁকা পথ। গোয়ার প্রাচীনতম মন্দির ‘আর্কিয়োলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’ সংরক্ষণ করেছে।
০৬২১
স্লেট পাথরের মন্দির কদম্ব যাদব শাসনকালের নিদর্শন। কয়েকটি অভিনব খোদাই শিল্পের নিদর্শন রয়েছে। এরই আদল অনুসরণ করে পরবর্তীকালে সপ্তকোটেশ্বর, মঙ্গেশির মতো গোয়ার অন্যান্য মন্দির তৈরি করা হয়েছে। নজর কাড়ে চারদিকের মনোরম প্রকৃতি। নীচ দিয়ে একটি ছোট ঝোরা বয়ে গিয়েছে। নিরাপদ অরণ্য পাখিপ্রেমিকদের প্রিয়। শুকনো খাবার নিয়ে গেলে বনের ছায়ায় বনভোজন হতেই পারে।
০৭২১
দুধসাগর ফল্স: কোলেম শহর থেকে গাড়ি করে তিন ঘণ্টার পথ। গাড়ি যত সামনের দিকে এগোবে, এক অন্য অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবেন। প্রথমে গাড়ি করে একটা চওড়া নদী পাড় হওয়া। তার পর গভীর জঙ্গল। প্রায় ৪০০ মিটার হেঁটে গেলেই ঝর্নার আওয়াজ কানে আসবে।
০৮২১
বিরাট বিরাট পাথরের রাজ্যে ঝর্না নেমে আসছে, বিরাট দুধসাগর জলপ্রপাতের শাখাপ্রশাখা। দু’টি প্রাকৃতিক জলাশয় তৈরি হয়েছে। এখানে দাঁড়িয়ে সামনে দেখলে পাহাড়ের উপরে দুধসাগর প্রপাত। বর্ষার পরে কয়েক মাস তার ভয়ঙ্কর সুন্দর রূপের বর্ণনা ভাষায় প্রকাশের অতীত। প্রপাতের নীচে সেতু। তার উপর দিয়ে ট্রেন চলে যায়। সে এক অসাধারণ দৃশ্য।
০৯২১
নেত্রাভালি অভয়ারণ্য: গোয়ায় গিয়ে নেত্রাভালি অভয়ারণ্যে এক বার ঢুঁ না মারলে বেড়াতে যাওয়াটাই বৃথা হয়ে যাবে। সমুদ্র এবং জঙ্গলের সহাবস্থানের কারণেই গোয়া অনেকের পছন্দের জায়গা। এই অভয়ারণ্যে এক বার প্রবেশ করলে মনে হবে বাইরের জগতের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। আলো-আঁধারি পরিবেশ। একটা গা ছমছমে ভাব আর অপরূপ সৌন্দর্যে মন হারিয়ে যাবে।
১০২১
প্রচুর পরিযায়ী পাখির আনাগোনা এই জঙ্গলে। বছর তিনেক আগে এক বার ব্ল্যাক প্যান্থার দেখা গিয়েছিলে গভীর জঙ্গলে। তার পর থেকে এই জঙ্গলে আসার প্রতি ঝোঁক বেড়েছে পর্যটকদের। চাইলে ট্রেকিংও করতে পারেন।
১১২১
কাবো দে রামা দুর্গ: কাভেলোসিম এবং আগোন্ডা— দক্ষিণ গোয়ার দু’টি জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকতে সংযোগস্থলে দাঁড়িয়ে আছে ‘কাবো দে রামা দুর্গ’। এই দুর্গের প্রতিটি ইট বহু যুগের ওপার হতে নানা ইতিহাস বলে যায়। এর স্থাপত্য দেখলেও বিস্মিত হতে হয়।
১২২১
দুর্গের চূড়ায় পৌঁছলে মনে হবে যেন হাত বাড়ালেই আকাশ ছোঁয়া যায়। সেই সঙ্গে মেঘের আনাগোনা তো আছেই। সামনে যত দূর চোখ যায়, ধূ ধূ করছে সমুদ্রের নীল জলরাশি। এখানে একটি গির্জাও আছে। দুর্গের অন্য এক দরজা দিয়ে সেখানে যেতে পারেন।
১৩২১
সাদোলক্সেম ব্রিজ: দক্ষিণ গোয়ার অন্যতম বিখ্যাত সেতু। চারদিক মনোরম পরিবেশ। ছবির মতো জায়গা। ছবি তোলার আদর্শ জায়গা। নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে স্থানীয় তালপোনা নদী। নৌকাবিহারেরও সুযোগ রয়েছে। তার জন্য মাঝিদের সঙ্গে কথা বলে নৌকা ভাড়া করতে হবে।
১৪২১
মাঝনদীতে নৌকার বুকের বসে দুলতে দুলতে ভূরিভোজও সারতে পারেন। তেমন চাইলে সঙ্গে করে খাবার নিয়ে যেতে হবে। দক্ষিণ গোয়া ভ্রমণের অন্যতম অভিজ্ঞতাগুলির মধ্যে একটা।
১৫২১
হাউসবোট ক্রুজিং: আদিম উপকূলরেখা, মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এবং প্রশান্ত নদীঘেরা দক্ষিণ গোয়ার আরও একটি উপভোগ্য জায়গা হল হাউসবোট ক্রুজিং। মান্ডোভি এবং চাপোরার মতো বিখ্যাত কিছু নদীর জলে ভেসে থাকা যায় এই হাউসবোটে চড়লে।
১৬২১
ভাগ্য ভাল থাকলে মাঝেমাঝেই জলের উপরে মাথা তুলবে ডলফিন, কুমির। হাউসবোটের ছাদে বসে সূর্যাস্ত দেখার স্মৃতি মনে থেকে যাবে আজীবন। সন্ধ্যার দিকে ওয়াইন আর গোয়ান স্বাদের খাবার খেতে খেতে সঙ্গীর সঙ্গে গল্প করার এক অন্য অনুভূতি।
১৭২১
রেইস ম্যাগোস দুর্গ: মান্ডবী নদীর তীরে বহু পুরনো এই দুর্গে পৌঁছনো যাবে পায়ে হেঁটেই। ১৫৫১ সালে নির্মিত এই দুর্গ পর্তুগিজদের হাতে নির্মিত। আগে এই দুর্গ কারাগার হিসাবে ব্যবহৃত হত। এখানে গেলে চোখে পড়বে ঔপনিবেশিক আমলের কামান। যার মুখ এখনও আরবসাগরের দিকে করা আছে।
১৮২১
শত্রুদের হাত থেকে বাঁচতে এই কামান ব্যবহার করা হত। এখানে বেশ কিছু দোকান রয়েছে। যেখান থেকে কাছের মানুষদের জন্য উপহার কিনতে পারেন। গোয়ায় গেলে এক বার হলেও এই দুর্গে যেতে পারেন।
১৯২১
ব্যাসিলিকা অফ বোম জেসাস: ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’-এর তকমা পেয়েছে এই চার্চ। গোয়ার অত্যন্ত বিখ্যাত এক চার্চ ব্যাসিলিকা অফ বোম জেসাস। ষোল শতকে এই চার্চ নির্মিত হয়েছিল। সেন্ট ফ্রান্সিস জেভিয়ারের বাসস্থান ছিল এটি। পরে এটি চার্চ হয়ে যায়।
২০২১
শান্ত, নিরিবিলি জায়গা। চার্চের প্রতিটি কোণে কোণে শান্তি বিরাজ করে। তবে পাখির ডাকে মাঝেমাঝে সেই নীরবতা ভেঙে খান খান হয়ে যায়। তবে সেটাও মনের আরাম।
২১২১
মশলা বাগান: গোয়ার মশলা বিখ্যাত। তাই এখানকার মশলা বাগানে ঢুঁ মারতে ভুলবেন না। লবঙ্গ, জায়ফল, জিরে, কারিপাতা, গোলমরিচ, ভ্যানিলা, ধনে, কলা, নারকেল, কাজু— এই তালিকা দীর্ঘ। কিছু স্পাইস ফার্মও আছে। সেখানে গেলে স্বচক্ষে মশলা তৈরি দেখা যায়। চেনা মশলার কোথায়, কী ভাবে চাষ করা হয়, তা দেখার জন্য স্বাভাবিক ভাবেই একটা কৌতূহল থাকে। সেই কৌতূহল নিরসন করতেই যেতে হবে বাগানগুলিতে।