Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
travel

গুজরাতের প্রবাল দ্বীপ, পরিযায়ী পাখি ও ম্যানগ্রোভ

ভারতের অন্যতম মেরিন ন্যাশনাল পার্ক গুজরাতে। এই রাজ্যের প্রাকৃতিক শোভা দেখলে বিস্মিত হতে হয়। লিখছেন নবনীতা দত্তভারতের অন্যতম মেরিন ন্যাশনাল পার্ক গুজরাতে। এই রাজ্যের প্রাকৃতিক শোভা দেখলে বিস্মিত হতে হয়। লিখছেন নবনীতা দত্ত

পেন্টেড স্টর্ক

পেন্টেড স্টর্ক

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৯ ১৮:৫৮
Share: Save:

অতঃপর সঙ্গে করে যে জুতো এনেছিলাম, সেই জুতোজোড়া পরেই এগোলাম এই মেরিন পার্কের দিকে। তবে এখানে জলে পরার মতো গামবুট ধরনের জুতো নিয়ে গেলে বেশি সুবিধে হবে। গাড়ি থেকে নামতেই চোখ চলে গেল চারপাশের ভূ-প্রকৃতিতে। এক দিকে যেমন রয়েছে ম্যানগ্রোভের শ্বাসমূল, মাডফ্ল্যাট্‌স, তার মাঝেই আবার সরু খাঁড়ি। ছোট ছোট পানসিও ভেসে বেড়াচ্ছে জলের উপরে। আর ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন রকমের পাখি। জলের বুকে ভেসে যাচ্ছে নানা রকমের পানা। বলতে গেলে ফ্লোরা ও ফনার খনি। মেরিন ন্যাশনাল পার্ক ও স্যাংচুয়ারির হিসেব অনুসারে, প্রায় ৩৭ প্রজাতির প্রবাল, ২৭ রকমের প্রন, ৩০ রকম প্রজাতির কাঁকড়া ও ২০০ রকমের শামুক-ঝিনুক রয়েছে। জলের দিকে ঝুঁকে পড়লে বিভিন্ন মাছ ও অক্টোপাসও আপনার চোখে চোখ রাখবে জলের ভিতর থেকে। তবে এখনও পর্যন্ত খুব বেশি পর্যটকের ভিড় জমেনি এখানে। তাই বেশ ফাঁকায় ঘুরে বেড়াতে পারবেন সমুদ্রের বুকে।

আরও পড়ুন: কল্পনার হিমাচল যখন সত্যিকারের

ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে

শুধু সুন্দরবনে নয়, এখানেও আছে ম্যানগ্রোভের জঙ্গল। শ্বাসমূল ছড়িয়ে থাকে সমুদ্রের ধার ঘেঁষে। তবে এই ম্যানগ্রোভের জঙ্গলই উপকূল রক্ষা করছে। আর এই জঙ্গলেই দেখা মেলে প্রায় বিলুপ্ত প্রজাতির পাখিদের। পচা পাতা ও কাদার পোকা খেতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত জলের উপরে ভিড় জমায় অজস্র পরিযায়ী পাখি। এদের মধ্যে রয়েছে ব্ল্যাক-নেকেড আইবিস, সি-গাল্‌স, মাছরাঙা, পেন্টেড স্টর্ক, মার্শ হ্যারিয়ার। শীতের শুরুতে প্রায় ২০০ প্রজাতির পাখির দেখা মেলে এখানে। ফলে বার্ডওয়াচারদের স্বর্গ এই জায়গা। ক্যামেরা তাক করে এগোলাম কয়েকটি পাখিকে বন্দি করতে। বেশির ভাগই উড়ে পালাল! কপালজোরে তিন-চারটি প্রজাতিকে লেন্সবন্দি করা গেল।

দ্বীপ থেকে দ্বীপান্তরে

সমুদ্রের মধ্যে ইতিউতি ছড়িয়ে আছে একাধিক দ্বীপ। তার মধ্যে নারারা রিফটি উল্লেখযোগ্য। সেই দ্বীপে পৌঁছে গেলাম কিছু ক্ষণের মধ্যেই। এখানেও গোড়ালি ডোবা জল, কিন্তু পা কেটে যেতে পারে প্রবালে বা নুড়িতে। তাই সন্তর্পণে ধীরে-ধীরে এগোতে লাগলাম। জলের মধ্যে একটু এগোতেই পায়ের কাছে দেখা মিলল ঈষৎ হরিদ্রাভ ব্রেন কোরাল ও মুন কোরালের। গায়ে অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত ব্রেন কোরাল দেখে অনেকেই খচাখচ ছবি তুলছে। কিন্তু এই রহস্যের খনি ততক্ষণে আমায় টেনে নিয়ে গিয়েছে আরও ভিতরে। সেখানে চোখের সামনে দিয়ে, থুড়ি পায়ের সামনে দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে স্টারফিশ, শামুক, কাঁকড়া ও ইনভার্টিব্রেটরা। সেখানেই দেখা মিলল পাফার ফিশদের। এই মাছ ধরতে গেলেই তারা রাগে মুখ ফোলানোর মতো সারা শরীর ফুলিয়ে বেলুনের মতো হয়ে যায়। জানা গেল, তা নাকি তাদের জন্য প্রাণঘাতীও। ছোট ছোট অক্টোপাসের সঙ্গেও আলাপ হল। তারা এতই ছোট যে হাতেও তুলে নিতে পারেন। শুধু কি তাই? এ ছাড়াও জেলি ফিশ, বিভিন্ন ক্র্যাব, প্রন, ডলফিন... কী নেই সেখানে! কিন্তু পর্যটকের হঠাৎ আগমনে তারা যেন ভীত-সন্ত্রস্ত। ছবি তুলতে কাছে যেতেই দৌড়ে পালিয়ে গেল। সামুদ্রিক প্রাণীদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে ফিরে এলাম বোটে। বোট ঘুরল পিরোটান দ্বীপের দিকে। ম্যানগ্রোভের জঙ্গলকে দু’পাশে রেখে বোট চলল মাঝখান দিয়ে। এখানকার যাত্রা মনে উসকে দেয় সুন্দরবন ভ্রমণের স্মৃতি। তবে বোটে করে জলে ঘুরে বেড়ানোর আগে জেনে নিতে হবে জোয়ার-ভাটার সময়।

ব্রেন কোরাল

বিস্মিত মন তখনও পড়ে রয়েছে অগভীর জলের তলায় জেলি ফিশদের সঙ্গে। অবাক হয়ে ভাবছি, একই জায়গায় এত কিছু! বোটে স্থানীয় লোকদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করলাম, কবে থেকে এই পার্ক হয়েছে, কী বৃত্তান্ত। তবে যে সত্য সামনে এল, তাতে নিমেষে মুখ শুকিয়ে গেল। দ্বীপের চারপাশে জীবন্তর চেয়ে মৃত কোরালের সংখ্যাই নাকি বেশি! ব্যবসায়িক প্রয়োজনে অনেকেই এই সমুদ্রের বুক ছেঁচে তুলে নিয়ে যায় বালি ও প্রবাল। একই সঙ্গে উপকূলও ক্ষতিগ্রস্ত। বন্দর, তেলের পাইপ ও ইন্ডাস্ট্রির দাপটে সংশয়ে রয়েছে এই হাজার হাজার পাখি ও সামুদ্রিক প্রাণীর জীবন। যখন তীরে এসে নামলাম, তখন মনখারাপের মেঘ জমেছে ঈশান কোণে।

হঠাৎ দেখা সি টার্টল।

কী ভাবে যাবেন

জামনগরের খুব কাছেই অবস্থিত এই মেরিন ন্যাশনাল পার্ক। যে কোনও গাড়িতে পৌঁছে যেতে পারেন সহজে। সেখানে পৌঁছে বোট ভাড়া নিতে হবে। তবে স্থানীয়দের কাছ থেকে জোয়ার-ভাটার সময় জেনে তবেই বোটের সময় স্থির করবেন।

গুজরাতের আকর্ষণ

গুজরাতে এলে অবশ্যই দেখে যেতে হবে ১৮২ মিটার উচ্চতার স্ট্যাচু অফ ইউনিটি। সর্দার বল্লভভাই পটেলের এই স্ট্যাচু গুজরাতের অন্যতম আকর্ষণ। এ ছাড়াও এখানে রয়েছে ডায়নোসর ফসিল পার্ক। বালাসিনোরের রায়োলি গ্রামে ভারতের প্রথম ডায়নোসর মিউজ়িয়াম ও ফসিল পার্ক তৈরি হয়। এখানেই নাকি ডায়নোসরের প্রায় ১০,০০০ ডিম পাওয়া গিয়েছিল। এই স‌ংগ্রহশালায় ৫০টি ডায়নোসরের কাঠামো রয়েছে ও রাজাসরাস নর্মাডেনসিস নামক এক প্রজাতির ডায়নোসরের জীবাশ্ম রাখা আছে। এ ছাড়াও এখানে থ্রিডি প্রোজেকশনে শো দেখারও সুযোগ পাওয়া যায়। সুতরাং গুজরাতে গেলে এই দু’টি জিনিস দেখার জন্য একটা দিন বরাদ্দ করাই যায়।

অদ্ভুত দর্শন পাফার ফিশ

আরও পড়ুন: উত্তরাখণ্ডের পাহাড়ে জড়ানো মায়া চুম্বক

অন্য বিষয়গুলি:

travel Gujrat Coral Mangrove
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy