Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
kurseong

রোদ ঢেকে দিচ্ছে মেঘ, চোখ ঢাকছে কুয়াশা

পাহাড়ি পাকদণ্ডী পথ। ভেলভেট চা-বাগানের চাদর ঢেকে দিচ্ছে মনখারাপিয়া মেঘ। কুয়াশায় ঘিরে থাকা রাস্তা দিয়ে ছুটে যায় টয়ট্রেন। আশ্চর্য মায়ার নাম বৃষ্টি-সবুজ কার্শিয়াং।

মায়া-সবুজ: শিবখোলার পথে

মায়া-সবুজ: শিবখোলার পথে

সোহিনী দাস
শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৯ ১৪:৩৯
Share: Save:

চরাচর জুড়ে শুধু জল। ডুবে গিয়েছে মাঠ, ধানজমি, কোমর জলে দাঁড়িয়ে বড় বড় গাছ। সূর্যটাকে বড় ক্লান্ত দেখাচ্ছে। ট্রেন থেকে এ সব দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। দিনকয়েকের বৃষ্টি ভাসিয়ে দিয়েছে উত্তরবঙ্গ। বেলা গড়াতেই ঘন কালো হয়ে এল আকাশের মুখ।

কী জানি কপালে কী আছে, এই ভাবনাতেই ট্রেন দাঁড়াল এনজেপিতে। সামনে টয়ট্রেনের রেপ্লিকা। স্টেশন থেকে বেরোতেই লম্বা দেওয়াল জুড়ে বসেছে ঝুলন্ত সব পাতাবাহার।

গাড়ি ছুটল কার্শিয়াং। যানজটময় শহরের পথ বেশ কিছুক্ষণ। তার পরে রোহিণীর পথ। ধু ধু মাঠ, সেনাবাহিনীর ট্রেনিং ক্যাম্প এলাকা আশপাশে। দূর থেকে উঁকি মারছে পাহাড়। গাড়ি ছুটতে ছুটতে পাকদণ্ডী পথ নিল। মাঝখানে গাড়ি থামিয়ে ব্রেকফাস্ট। গরম মোমোর ধোঁয়ায় দু’চামচ স্বাদ ঢেলে দিল পাহাড়ি সাদা মেঘ।

কার্শিয়াংয়ে কী দেখতে এসেছি, সে সব ভুলিয়ে দিয়েছে রাস্তা। এক একটা মোড়ে যেন অপেক্ষা করছে রহস্য। রোদ ঢেকে দিচ্ছে মেঘ, চোখ ঢাকছে কুয়াশা। দশ হাত দূরের গাছটাও যেন দেখতে দেবে না। বর্ষাকাল, পাথরের ফাঁকে ফাঁকে উপচে নামছে ঝরনা। জলের কুচি উড়ে এসে লাগছে মুখে।

পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে টয়ট্রেনের লাইন। বসত বাড়িগুলোর একেবারে গা ঘেঁষে। আমরা ঢুকে পড়ছি কার্শিয়া‌ং— সাদা অর্কিডের দেশে।

ছোট ম্যালটুকু বাদ দিয়ে বাকি শহরটা ছিমছাম। সরকারি লজের সামনেই উঠে গিয়েছে একটা পাথুরে রাস্তা, তার মাথায় চার্চ। পাহাড়ঘেরা লজে পা রাখতেই ঝেঁপে বৃষ্টি এল।

মেঘমুলুকে: শহর কার্শিয়াং

ফ্রেশ হয়েই বেরিয়ে পড়লাম গাড়ি নিয়ে। পথে একটা দারুণ ভিউ পয়েন্টে খানিকটা কুয়াশা মেখে ফের ছুটল গাড়ি— নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু মিউজ়িয়াম। আদতে শরৎচন্দ্র বসুর বাড়ি। রয়েছে বসু পরিবারের ব্যবহৃত পালঙ্ক, পড়ার টেবিল আর ইতিহাস। ভারি সুন্দর বাড়িখানা। হিমালয়ের নানা ভাষা শেখানোর একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে মিউজ়িয়ামের সঙ্গেই।

সে সব সেরে রওনা দিলাম ডাউহিলের উদ্দেশে। পাইন গাছের সারি ঘেরা পাহাড়ি পথ। গাড়ি যত এগোয়, ঘন হয় কুয়াশা। ওই রহস্যঘেরা মায়াবী জঙ্গল আমাকে ছাড়তে চায় না। পথে পড়ে ফরেস্ট মিউজ়িয়াম। সংগ্রহশালার আশপাশখানা ভারী সুন্দর। বন্য পশু-পাখির নানা নমুনা, ফসিল সব ছাপিয়ে আমার মন পড়ে থাকে ওই মেঘ-কুয়াশা মাখা পাইন বনের সারিতে। বৃষ্টি নামল ফের। কিছুটা পথ গিয়ে ডাউহিল ইকো পার্ক। রয়েছে কোটরা হরিণ আর খরগোশ। সঙ্গী কুয়াশা-বৃষ্টি আর ছাতা। পার্ক ছেড়ে বেরোতেই ড্রাইভার দাদা বললেন, ‘‘হন্টেড হাউস যানা হ্যায়?’’ পাহাড়ি ভূত, ছাড়া যায় নাকি! ছুটল এবং থামল গাড়ি...

তখন বিকেল। বৃষ্টি ভেজা সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে উঠে দেখি পরিত্যক্ত চার্চ। আলো জ্বলছে। ঘাসজমিতে দু’-একটা পাহাড়ি ছাগল। পাশেই স্কুল। ঘরে ফিরছে স্কুল ফিরতি পাখির দল। চার্চের দরজা হাত দিয়ে ঠেলতেই খুলে গেল। দেখি একদল কচিকাঁচার ব্যাডমিন্টন প্র্যাকটিসের নেট। ফের বৃষ্টি এসে কপাল ছুঁল। ফেরার পথে ঘুরে দেখলাম মকাইবাড়ি চা বাগান।

বলা যায়, ঝটিকা সফরে কার্শিয়াং। পরের দিন সকালে উঠে এক ছুট্টে দেখে এলাম চার্চ। প্রাতঃরাশ সেরে ফের বেরিয়ে পড়া। চিমনি নামে আর একটা ভিউ পয়েন্ট দেখার প্ল্যান, আকাশের ভার হওয়া মুখের সামনে বাতিল হয়ে গেল। গাড়ি ছোটালাম রংটংয়ের উদ্দেশে। সেখান থেকে শিবখোলা। পথেই পড়বে ‘স্মৃতিবন’— ছোট্ট বাগানে কাটাকুটি খেলেছে টয়ট্রেনের লাইন। পথে মন মাতাল পাগলাঝোরা।

রংটং পাখিপ্রিয়দের কাছে স্বর্গরাজ্য। নাম-না-জানা রঙিন পাখিদের মেলা গাছে গাছে। সেখান থেকে চা-বাগান ঘেরা পাহাড়ি পথ ধরে শিবখোলা। দুটো নদী মিলেছে। পাথর বুকে বয়ে চলেছে খরস্রোতা। নদীর উপরে শিবমন্দির।

পাহাড়ে রাস্তাই আসলে সব। মনখারাপিয়া বৃষ্টি, কুয়াশামাখা সেই সব পথ, যা ছেড়ে আসা যায় না। সেই যেমন বাদল সরকার ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’ নাটকের শেষে বলেছিলেন— ‘তীর্থ নয়, তীর্থপথ মনে যেন রয়।’

দ্রষ্টব্য

ডাউহিল জঙ্গল, ফরেস্ট মিউজ়িয়াম, পাগলাঝোরা ফলস, ইগলস ক্রেগ ভিউ পয়েন্ট

অন্য বিষয়গুলি:

kurseong
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy