Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
পাঠকের কলমে
Travel

এক অনাঘ্রাত সৈকত

লাল কাঁকড়া ও বালি দিয়ে গড়া ওড়িশার এক নির্জন সমুদ্র সৈকত দাগারা

স্রোতে ভেসে: মাছ ধরার নৌকা নিয়ে

স্রোতে ভেসে: মাছ ধরার নৌকা নিয়ে

অমর নন্দী
শেষ আপডেট: ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৪:৫২
Share: Save:

বাংলার সীমানা পেরিয়ে এসেছি বেশ কিছুক্ষণ। ওড়িশার বালাসোর জেলার কোমোরদারমোড় থেকে সোজা রাস্তা চলেগিয়েছে জলেশ্বরের দিকে। এবার গাড়ি ঘুরল বাঁদিকে। আমরা চলেছি নতুন একসাগর বালুকার সন্ধানে। নাম তার দাগারা।

দু’পাশে সবুজ আনাজের খেত। কোথাও কোথাও সদ্য ওঠা পাকা ধানের গাদা মাঠের মাঝে। চাষির বৌ হাত লাগিয়েছেন কাজে। এ ভাবেই শীত-সকালের নরম উষ্ণতা মাখতে মাখতে দেখা সুবর্ণরেখার সঙ্গে। প্রায় সওয়া কিলোমিটার দীর্ঘ সুবর্ণরেখার ব্রিজ। চকচকে সোনালি বালির উপর দিয়ে স্ফটিক স্বচ্ছ জল উত্তুরে হাওয়ায় তিরতির করে বয়ে চলেছে। একটু এগিয়ে বালিয়া পাল থেকে রাস্তা আবার ওবাঁদিকে বেঁকে চলে গিয়েছে কালিপদার দিকে। সেখান থেকে সোজা অনাঘ্রাত দাগারা সমুদ্র সৈকত। স্থানীয়রা অবশ্য এই সমুদ্রতটকে ডোগরাবিচও বলেন। এখনও এখানে সে ভাবে ভিড় জমেনি ভ্রমণ পিপাসুদের।

গাড়ি ছুটে চলেছে। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে সবুজ এক অরণ্যরেখা। আরও কাছে যেতে স্পষ্ট হল, নিবিড়-নিশ্ছিদ্র কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ ঝাউবন। ‘বিকেলে ভোরের ফুল’-এর পুরনো দিঘার স্মৃতি উসকে দিল। দু’পাশে ঘন সবুজ ঝাউবনের বুক ফুঁড়ে লাল রাস্তা চলেগিয়েছে সোজা সমুদ্রতটে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার লম্বা আর প্রশস্ত সোনালি বালির এই সৈকতে এসে দাঁড়ালে যে অনুভূতি ঘিরে ধরে, তার নাম মুগ্ধতা।

বালাসোর শহর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে (দিঘা থেকেও প্রায় একই দূরত্ব) এটিই সম্ভবত ওড়িশার সবচেয়ে দূষণমুক্ত সমুদ্র সৈকত। প্রায় সমস্ত তট জুড়ে লাজুক লাল কাঁকড়ার বালি দিয়ে গড়া ছন্দোবদ্ধ আলপনা। এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেই প্লাস্টিক, চায়ের কাপ। নেই মোটর সাইকেল আর চার চাকার সদর্প দাপাদাপি। সামনে আদিগন্ত সমুদ্র। আর পিছনে যত দূর চোখ যায়, যেন ক্যান ভাসে শিল্পীর তুলির গাঢ় সবুজ রঙের আঁচড়ের মতো ঝাউবন। ঘুরতে আসা গুটিকয় মানুষ ইতিউতি সেরে নিচ্ছেন সমুদ্র স্নান। শুনলাম, সমতল এই সৈকত স্নানের পক্ষেও উপযোগী।

এখানে জল চলে আসে অনেক ভিতর পর্যন্ত। তবে ঝাউবনে একমাত্র ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের সময়েই জল ঢুকেছিল। জেলে-ডিঙিতে রং করতে করতে একথা জানালেন পাশের গ্রাম নারায়ণপুরের এক বাসিন্দা। বেশ কিছু মাছ ধরার ডিঙিতে চলছে মেরামতির ব্যস্ততা। দিন কয়েক পরেই গভীর সমুদ্রে নাও ভাসবে পমফ্রেট (স্থানীয় ভাষায় ফিরকা), পার্শে, ভোলা মাছের আশায়। কোস্টাল ট্রেকিং করতে এলে কিছু পর্যটক উদয়পুর থেকে সরাসরি চলে আসেন দাগারা বিচ বরা বর। ঝাউবনে চড়ুইভাতি করতে আসা স্থানীয় কিছু মানুষেরও দেখা মিলল। সারা দিন বনভোজনের পরে তাঁরা সূর্য ডোবার আগেই ঘর মুখো। তবে শান্ত সমুদ্র সৈকত মুখরিত হয়ে ওঠে পৌষ সংক্রান্তি আর চৈত্রমাসের আম-বারুণির সময়ে। সমুদ্র স্নানের পুণ্য অর্জনের জন্য দূরদূরান্ত থেকে আসেন মানুষজন। এক দোকানি চা তৈরি করতে করতে সেই জমজমাট স্মৃতির ঝুলি উপুড় করে দিলেন।

নাগরিক কোলাহল থেকে দূরে যেতে ইচ্ছে করলেই হারিয়ে যাওয়া যায় ঘন ঝাউবনের সবুজ অন্ধকারে। যেখানে নাম না জানা পাখির কলরব আর ঝিরঝিরে হাওয়া মনকে বিশ্রাম দেয়, ভুলিয়ে রাখে স্নিগ্ধতায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Travel Sea Dagara West Bengal Travel spot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE