রাম্ভি নদী , সিক্সিন
সিক্সিন
ছবি আঁকা এক সুন্দর গ্রাম-ঠিকানা। দার্জিলিং যাওয়ার পথে ৩ মাইল মোড় থেকে বাঁয়ে মোড়। মিশকালো পিচরাস্তা ধরে কিছুটা যেতেই জড়িয়ে ধরবে পাইন, ধুপি সমেত নানা মহীরুহদের আচ্ছাদনে নীল আকাশ মাঝে মাঝেই উঁকি দেয়। গোটা পথ জুড়ে ঝি ঝি পোকার সিম্ফনি। আর পথের ধারে খাদের ধারে দূরের কাঞ্চনজঙ্ঘার হাতছানি। মাঝে রাম্ভি নদীর ব্রিজ পেরিয়ে ছোট্ট বাজার। কিছুটা গেলেই নতুন এক গ্রাম-ঠিকানা। সিক্সিন। এখানে থাকার জন্য মাত্র একটি সুন্দর হোমস্টে। ৩ মাইল থেকে মাত্র ১৭ কিমি।
চারধারে পাখির কলতান। নীল আকাশের বুকে ছবি আঁকা কাঞ্চনজঙ্ঘার সাজানো সংসার। নেপালিদের গ্রাম। দেখে নিন, দূরে মাথার উপর সবুজমেশা সিঞ্চল ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারির গহিন অরণ্যের হাতছানি। সিঙ্কোনার প্ল্যান্ট, পাহাড়ের ধাপে ধাপে অরগানিক ফসলের বাহার। আলু, ফুলকপি, মুলো, স্কোয়াশ সমেত নানা প্রকার শাকসব্জির সম্ভার। চারদিকে শুধুই নির্জনতা, অপার নির্জনতা ভঙ্গ করে ঝি ঝি পোকার ঝিল্লি আর এই নিয়েই সিক্সিনের সংসার। পাখি দেখার অন্যতম সেরা ঠিকানা উত্তরবঙ্গের নতুন এই গ্রাম। প্রায় ৫০টি প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। কাছেই মংপু। সুরেল বাংলো, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য মৈত্রেয়ী দেবীর বাংলো, মংপু মনাস্ট্রি আর বেশ কিছু ট্রেকরুট ঘুরে আসতে পারেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিধন্য মৈত্রেয়ী দেবীর বাংলো
কী ভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ট্রেনে এনজেপি। গাড়িতে ৩ মাইল থেকে আরও ১৭ কিমি গেলেই সিক্সিন গ্রাম।
কোথায় থাকবেন: এখানে থাকার জন্য রয়েছে সিক্সিন হোমস্টে। ১৪০০ টাকা জনপ্রতি থাকাখাওয়া সমেত। ৭৯৮০৮৯৮৯৭৪/ ৯৮৩১৭১৮৬৩৪
আরও পড়ুন: কাঁধে হোল্ডল, রাতের মায়াবী ট্রেনে বাঙালি যেত বেড়াতে
দাওয়াইপানি
বারে বারে দার্জিলিং ছুটে যান। ভিড়ে ভরপুর দার্জিলিং যাওয়ার পথে ১৮ কিমি আগে এক নিরিবিলি হিলটপ। দাওয়াইপানি ভুটিয়া বস্তি। যাঁরা একটু অন্য রুট, অন্য গন্তব্যে নিরিবিলিতে কাটাতে চান, তারা অবশ্যই চলে আসতে পারেন, দাওয়াইপানি। পোশাকি নাম আববোটে দাওয়াইপানি ভুটিয়া বস্তি।
মিথ বলছে, চর্মরোগাক্রান্ত এক ইংরেজসাহেব এখানকার এক ঝর্নার জলে স্নান করতেই তিনি তাঁর চর্মরোগ থেকে মুক্তি পান। সেই থেকেই দাওয়াইপানি। হিলটপ হওয়ার কারণে, মেঘমুক্ত আকাশে আদি অকৃত্রিম কাঞ্চনজঙ্ঘার হাতছানি। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে আসা চা-বাগান। পাহাড়ের কোলে বসানো আছে ছোট ছোট গ্রাম। মূলত ভুটিয়াদের বাস। এক দিকে চা-বাগানের ঢেউ। তাকদা, রঙ্গারুনের বিস্তার, অন্য দিকে নীল আকাশের নীচে কাঞ্চনজঙ্ঘার ফ্যামিলি অ্যালবামের হাতছানি মুগ্ধ করবে।
মেঘে ঢাকা দাওয়াইপানি
প্রতিটি বাড়ির কার্নিশের রংবেরঙের ফুল কুর্নিশ জানায়। পাহাড়ের ধাপে জ্যামিতিক নকশার ক্ষেতে অরগানিক ফসলের বাহার। টম্যাটো, স্কোয়াশ, বাঁধাকপি, আদা, হলুদ, দারচিনি, এলাচের চাষের বাহার মুগ্ধ করবে। পাহাড়ের গায়ে বিশাল পাথরের বোল্ডার খাঁজে ছোট ছোট গুহার আকার নিয়েছে। যারা নিরিবিলিতে মেডিটেশন করতে চান, এই সব গুহা তাদের পক্ষে আদর্শ। দাওয়াইপানি থেকে হাল্কা ট্রেকে চলে আসতে পারেন রুংদুং খোলার ধারে। রুংদুং খোলা থেকে ট্রেক করে রঙ্গিত নদীর পাড়ে চলে আসতে পারেন। এই রুংদুং খোলা মিশেছে রঙ্গিতে। আবার সূর্যোদয় দেখতে হলে টাইগার হিল চলে আসা যায়। রাতে হীরকদ্যুতির আলোকমালায় দূরের দার্জিলিংকে অসাধারণ লাগে।
দাওয়াইপানিকে বার্ডওয়াচারদের স্বর্গ বললেও ভুল হবে না। সিঞ্চুলা স্যাংচুয়ারির অন্তর্গত এই জায়গায় প্রায় ১২০টি প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে।
দাওয়াইপানির পথে একটি ঝর্না
কী ভাবে যাবেন: এনজেপি থেকে ঘুম-জোড়বাংলো হয়ে দাওয়াইপানি ৬৭ কিমি। গাড়ি ভাড়া ২,৮০০-৩,০০০ টাকা। দাওয়াইপানি থেকে দার্জিলিং ১৮ কিমি। জোড়বাংলো থেকে ৮ কিমি। টাইগার হিল ১৫ কিমি। চটকপুর ১৭ কিমি।
কোথায় থাকবেন: এখানে থাকার জন্য রয়েছে বেশ কিছু হোমস্টে। রয়েছে ব্লমশেফিল্ড হোমস্টে (ফোন: ৯৮৩২৬৬৭৫৭০), ভাড়া ১২৫০ টাকা জনপ্রতি থাকাখাওয়া সমেত। গৌতম প্যারাডাইস (৯৯৩২৩১৭২৯৯), থাকাখাওয়া সমেত জনপ্রতি ২০০০ টাকা। জিম্বা হোমস্টে (৯৪৩৪০৭২৫৫২), থাকাখাওয়া সমেত ১,৫০০ টাকা জনপ্রতি। রয়েছে নেচার হল্ট (ফোন: ৮৩৩৫৮৭০৯৯৩/৯৩৩৯৯৬৫৩২৩), ভাড়া ১২০০ টাকা জনপ্রতি খাওয়াদাওয়া সমেত।
আরও পড়ুন: পাহাড়-চা বাগান-নদী ঘেরা অজানা উত্তরবঙ্গে যেতে চান?
চার দিকে থোকা থোকা ফুটে থাকা ফুল। আর অর্কিডের বাহারে শোভা পাচ্ছে প্রতিটি বাড়ির কার্নিশ। তিন পাহাড়ের মাঝের এই গ্রাম উত্তরবঙ্গ গ্রাম পর্যটনের সেরা ঠিকানা তিনচুলে। ঠিক বিপরীতে কালিম্পংয়ের পাহাড় আর মাঝে বয়ে চলা তিস্তার বহতা স্রোত মুগ্ধ করবে। নীল আকাশ জুড়ে কাঞ্চনজঙ্ঘার বাহার আর উষ্ণ অতিথেয়তায় ভরপুর। দেখে নিন লোপচু–পেশকের চা বাগান, তিনচুলে মনাস্ট্রি, পাখিদের ওড়াউড়ি। বিকেলের দিকে চলে আসুন, গোম্বাদাঁড়া। কাঞ্চনজঙ্ঘার পরিপাটি সংসারের অসাধারণ রূপ মনের মণিকোঠায় থেকে যায়। প্রায় ৭৫টি প্রজাতির পাখির দেখা মেলে। পক্ষীপ্রেমীদের এ যেন স্বর্গরাজ্য।
তিনচুলের পাহাড়ি সৌন্দর্য মুগ্ধ করার মতো
কী ভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ট্রেনে এনজেপি। তিস্তাবাজার-পেশক-তাকদা হয়ে চলে আসুন তিনচুলে। দূরত্ব ৭৫ কিমি।
কোথায় থাকবেন: বেশ কিছু হোমস্টে থাকলেও এখানে থাকার সেরা ঠিকানা রত্নবজ্র বটিকা (৭৯৮০৪৫৩২১৮ / ৯৭৭৫৯৪৩৭৯০) ভাড়া ৩,০০০- ৪,৫০০ টাকা। ব্রেকফাস্ট সমেত। রয়েছে গোম্বাদাঁড়া হোমস্টে (৯৮৩০০১১৭১৫) ভাড়া ১৪০০ টাকা।
লেবং
টুং, সোনাদা, ঘুম পেরিয়ে সেই চিরচেনা দার্জিলিং। বাতাসিয়া লুপ, ভিড়ে থিকথিক, ম্যাল, কেভেন্টার্স, ভুটিয়া বস্তি, চৌরাস্তা, মেঘমুক্ত আকাশ থাকলে আদি-অকৃএিম কাঞ্চনজঙ্ঘার অসাধারণ রূপের জাদু চিরকাল মনে থেকে যাবে। এই নিয়েই দার্জিলিং। হিলস অব কুইন্স। পাহাড়ের রানি। একটা দিন বাঙালির নস্টালজিয়ায় ভরপুর পাহাড়ের রানির কোলে কাটিয়ে তেনজিং নোরগে মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, পদ্মজা নাইডু চিড়িয়াখানা দেখে চলে আসুন এক নতুন ঠিকানায়।
সবুজে ঘেরা লেবং
রাস্তার বাঁ দিক ধরে এলেই দেখা মিলবে ঢেউখেলানো দু’টি পাতা একটি কুঁড়ির বাগান। ছোট ছোট চায়ের গুমটি। এখানেই নানান বাগানের চা বিক্রি করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এখান থেকেই শুরু লেবং। ব্রিটিশদের পুরনো রেসকোর্স, সুপ্রাচীন চায়ের বাগান ছাড়িয়ে চলে আসুন লেবং। লেবং বাজার পেরিয়ে পাহাড়ের ঢালে থাকার দারুণ ব্যবস্থা। দূরের আকাশে মুকুট পরে থাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার হাসিমুখ সর্বদা সঙ্গী হয়ে থাকে। প্রতিটি বাড়িতে রঙিন ফুলের মেলা, পাহাড়ের ধাপে ধাপে অরগানিক ফসলের বাহার, সঙ্গে কমলালেবুর হলদে আবেশের মুগ্ধতা আর হিমালয়ের তাজা হিমেল বাতাসে কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসতে পারেন লেবং-এ। এখান থেকে আবিষ্কার করুন এক অন্য দার্জিলিংকে।
কী ভাবে যাবেন: কলকাতা থেকে ট্রেনে এনজেপি হয়ে দার্জিলিং। সেখান থেকে ১২ কিমি গেলেই লেবং।
কোথায় থাকবেন: এখানে থাকার জন্য রয়েছে সুমা আবাস ফার্ম অ্যান্ড হোমস্টে (৯৭৩৩০২৪২৩৯)। ভাড়া ১৭৫০ থেকে ৪২০০ টাকা। নন্দিনী ফার্ম হাউস (৯৩৩০২০২৪৫৪)। ভাড়া ৪০০০ টাকা। খাওয়া খরচ আলাদা।
ছবি: লেখক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy