Advertisement
০১ জুলাই ২০২৪
Belpahari In Monsoon

বর্ষায় ঘাঘরা, ঢাঙ্গিকুসুমের রূপ উপভোগে চলুন জঙ্গল ঘেরা বেলপাহাড়িতে, ঘুরে নিতে পারে দু’দিনেই

এক সময় এই জায়গার নাম বললেই মাওবাদীদের ভয়ে কাঁপত সকলে। সেই বেলপাহাড়িতে এখন পর্যটনের ভরা মরসুমে ঘর পাওয়া যায় না। পাহাড়, জলাধার, ঝর্না ও সবুজের সৌন্দর্য উপভোগে বর্ষাই উপযুক্ত সময়।

বর্ষায় চলুন বেলপাহাড়ি।

বর্ষায় চলুন বেলপাহাড়ি। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০২৪ ১৭:৫৮
Share: Save:

ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি। বছর দশেক পিছিয়ে গেলে এই স্থানের নাম শুনলেই প্রথমেই মাথায় আসত মাওবাদীদের কথা। মাও-ভয়ে জুজু হয়ে থাকা সেই বেলপাহাড়ি এখন পর্যটকদের কোলাহলে মুখর। শীতকাল হলেই খ্যাঁদারানির ধারে, ঘাঘরার পাড়ে বসে চড়ুইভাতির আসর। কলকাতা থেকে অসংখ্য পর্যটক ভিড় করেন সেখানে। বেলপাহাড়ির আনাচ-কানাচে শালের জঙ্গেলর ভিতরে কোথাও রয়েছে জলাধার, কোথাও আবার প্রাগৈতিহাসিক গুহা।

শীতের বেলপাহাড়ির এক রূপ। আর ঘনঘোর বর্ষায় আকাশ মেঘে ঢাকলে সেই বেলপাহাড়ি অন্য রকম। গাছপালা ঘন সবুজ, শুকনো ঝর্না তখন জলে ভর্তি। বর্ষা তো এসেই গিয়েছে। সপ্তাহান্তে সপরিবার ঘুরে আসতে পারেন সেখান থেকে। খোলা প্রান্তর, সবুজ মাঠঘাট, শালের জঙ্গল ভুলিয়ে দেবে শহুরে ক্লান্তি।

বেলপাহাড়িতে কোথায় ঘুরবেন?

গাড়রাসিনী পাহাড়- জঙ্গলের মধ্যে পাহাড়। উঠে গিয়েছে পাথুরে রাস্তা। গাছপালা ঘেরা সেই পথে উঠলে প্রথমেই পড়বে ছোট্ট একটি বাসুদেব মন্দির। সেখানে খানিক জিরিয়ে নিতে পারেন। মন্দিরের পাশ দিয়ে রাস্তা উঠে গিয়েছে চূড়ায়। সেখানেও রয়েছে একটি মন্দির। তবে পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে চারপাশের রূপ। পাহাড় থেকে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজের সমারোহ অনিন্দ্যসুন্দর।

পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে চারপাশের রূপ।

পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে চারপাশের রূপ। ছবি: সংগৃহীত।

ঢাঙ্গিকুসুম-পাথরের উপর দিয়ে কুলু কুলু শব্দে বয়ে যাচ্ছে জল। তবে বর্ষায় এখানে না এলে উপভোগ্য মনে হবে না।

ঘাঘরা জলপ্রপাত- বেলপাহাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে এই জলপ্রপাত। ঘাঘরার সৌন্দর্য সম্পূর্ণ উপভোগ করতে যেতে হবে ভরা বর্ষায়। অদ্ভূত পাথুরে ভূ-প্রকৃতি এই জায়গায়। এখানে রয়েছে একটি গিরিখাত। জলের তোড়ে পাথরের বিভিন্ন জায়গায় গর্ত তৈরি হয়েছে। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে যখন প্রবল শব্দে জল বয়ে যায়, তখন সে রূপের আকর্ষণই আলাদা।

ঘাঘরায় রয়েছে একটি গিরিখাত।

ঘাঘরায় রয়েছে একটি গিরিখাত। ছবি: সংগৃহীত।

তারাফেনি জলাধার- ঘাঘরার কাছেই রয়েছে তারাফেনি জলাধার। সবুজের মাঝে টলটলে জলের এই জলাধার দেখতে বেশ লাগে।

খ্যাঁদারানি হ্রদ- শালে ঘেরা জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে খ্যাঁদারানি হ্রদ। তার এমন নাম কেন, জানা নেই। তবে পড়ন্ত বিকেলে খ্যাঁদারানির সৌন্দর্য মন ভরিয়ে দেব। হ্রদের পাশেই রয়েছে একটি কংক্রিটের সেতু। সেখান থেকেই পাহাড়ের কোলে সূর্যের টুপ করে ডুব দেওয়া দেখতে দিব্যি লাগবে। জায়গাটির আশপাশে তেমন জনবসতি নেই। এক দিকে জঙ্গলের মধ্যে হ্রদ, অন্য দিকে ঢেউ খেলানো সবুজ প্রান্তর।

খ্যাঁদারানি হ্রদ।

খ্যাঁদারানি হ্রদ। ছবি: সংগৃহীত।

চাতন পাহাড়- বেলপাহাড়ির লালজল ছবির মতো সুন্দর গ্রাম। এই গ্রামে রয়েছে প্রাকৃতিক গুহা। এ ছাড়াও ঘুরে নিতে পারেন বেলপাহাড়ির চাতন পাহাড়। পাহাড় চড়তে খানিক কষ্ট হলেও, সেখান থেকে চারপাশের নিসর্গ মন ভাল করে দেবে। বেলপাহাড়ি থেকে কাঁকড়াঝোরের দিকে যাওয়ার পথ শালবনের পাহাড়ি পথে ২০০ মিটার উঠলে রয়েছে আদিম তিন গুহা। জনশ্রুতি, এগুলি প্রাগৈতিহাসিক আমলের।

এ ছাড়াও এখানে দেখার অনেক কিছু রয়েছে। ঝাড়গ্রাম দিয়ে বেলপাহাড়ি যাওয়ার পথেই ঘুরে নেওয়া যায় বেশ কিছুটা জায়গা। বেলপাহাড়ি থেকে দ্বিতীয় দিনে ঘুরে নিতে পারেন তালবেড়িয়া জলাধার, মকুটমণিপুর। তবে দু’দিনের জায়গায় দিন তিনেক থাকলে কাঁকড়াঝোরের দিকটাও ভাল করে ঘুরে নেওয়া যাবে।

কী ভাবে যাবেন?

সড়কপথে কলকাতা থেকে বেলপাহাড়ির দূরত্ব ২০০ কিলোমিটারের মতো। ঝাড়গ্রাম হয়ে বেলপাহাড়ি যেতে পারেন বিভিন্ন জায়গা ঘুরতে ঘুরতে। ঝাড়গ্রাম স্টেশনে এসে সেখান থেকেই গাড়ি ভাড়া করে বেলপাহাড়ি যেতে পারেন। কলকাতা থেকেও বেলপাহাড়ির বাস পাওয়া যায়। বেলপাহাড়িতে একাধিক থাকার জায়গা রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE