গরমে একটু বুদ্ধি করে যদি পোশাক চয়ন করা যায়, তবে সাজ যেমন স্বতন্ত্র হয়ে বাকিদের চোখ জুড়োবে, তেমনই নিজে থাকবেন আরামে। গরমে মহিলাদের ক্ষেত্রে তেমনই এক আরামদায়ক পোশাক হতে পারে শাড়ি!
এই গরমে যদি অফিসে বা বন্ধুদের সঙ্গে সাক্ষাতে শাড়ি পরবেন বলে ভেবে থাকেন, তবে আলমারিতে আনুন গ্রীষ্মকালীন বদল। ভারী কাজের, ভারী পাড়ের শাড়ি, সিল্কের শাড়ি অথবা সিন্থেটিক শাড়িকে আপাতত নাগালের বাইরে রাখুন। বদলে হাতের কাছে কোন কোন শাড়ি রাখবেন? বেছে নিন
১। নরম তাঁত

তাঁতের শাড়ির জনপ্রিয়তা সাধারণের গণ্ডী পেরিয়ে তারকাদের কাছেও পৌঁছেছে। ছবিতে তাঁতের শাড়িতে শোভিতা ধূলিপালা। ছবি: সংগৃহীত।
নতুন তাঁতের শাড়ি পড়ার কথা হলে এক কালে আতঙ্কিত হতেন বঙ্গললনারা। কারণ, সে কালে তাঁত মানে ছিল শাড়িতে কড়কড়ে মাড়। সেই শাড়ি গুছিয়ে পরা যেমন ঝক্কির, তেমনই মাড় দেওয়া শাড়ি পরলে গরমও হত বেশি। এখন অবশ্য বাজারে মাড় ছাড়া নরম তাঁতের শাড়ি পাওয়া যায়। ধনেখালি, শান্তিপুরী তো বটেই। বেগমপুরী শাড়িও নরম হয়। আলমারিতে ওই ধরনের শাড়ি থাকলে সেগুলিকে হাতের নাগালে গুছিয়ে রাখুন। সুতির হালকা ব্লাউজ়ের সঙ্গে এই ধরনের তাঁতের শাড়ি পরলে মনেই হবে না গায়ে বাড়তি কিছু আছে।
২। কোটা শাড়ি

হালকা সবুজ রঙের কোটা শাড়িটি হতে পারে আপনারও গ্রীষ্মের সাজ। ছবিতে অভিনেত্রী সঞ্জনা সঙ্ঘি। ছবি: সংগৃহীত।
শাড়ির দুনিয়ায় যদি ‘হাওয়ামহল’ নামের কোনও উপাধি থাকত, তবে সে শিরোপা নিঃসন্দেহে এই শাড়িরই হত। রাজস্থানের ওই শাড়ি দেখলে মনে হবে শাড়ি নয় স্বচ্ছ জাল বোনা হয়েছে। সুতি কিংবা রেশম সুতোর ছোট ছোট স্বচ্ছ চৌখুপি। তার মধ্যে দিয়ে হাওয়া চলাচলের বাধা নেই কোনও। বাহুল্যহীন রাজস্থানী ব্লক প্রিন্ট থাকে বেশির ভাগ শাড়িতে। তা ছাড়া, রাজস্থানের ঐতিহ্যবাহী বাঁধনি বা লেহরিয়ার নকশা দিয়েও তৈরি হয় কোটা শাড়ি। গ্রীষ্মের শাড়ি সংগ্রহে কেতাদুরস্ত এবং আরামদায়ক সংযোজন হিসাবে দু’-একটি কোটা শাড়ি রাখাই যেতে পারে।
৩। মলমল শাড়ি

গরমে মলমল শাড়ি নায়িকাদেরও পছন্দ। মলমল শাড়িতে ক্যাটরিনা কাইফ। ছবি: সংগৃহীত।
নাম শুনেই বোঝা যায় এ শাড়ি নরম হবে। মিহি সুতোয় বোনা হালকা মাড়হীন কাপড়। মলমলের জনপ্রিয়তা তার নরম ভাবের জন্যই। মলমলের সুতির শাড়িতে নানা ধরনের প্রাকৃতিক রঙের নকশা করা হয়। আবার এক রঙা মলমল শাড়িও পাওয়া যায়। গরমের শাড়ি সংগ্রহে কয়েকটি উজ্জ্বল এবং কয়েকটি হালকা রঙের মলমল রাখতে পারেন।
৪। মসলিন

হাতে বোনা সুতির মসলিন শাড়িতে দিয়া মির্জা। ছবি: সংগৃহীত।
বাংলার অতি প্রাচীন মিহি বুননের সুতির শাড়ি হল মসলিন। বলা হয়, এ শাড়ির বুনন এতটাই নরম হত যে বারো হাতের শাড়ি একটি আংটির ফাঁক দিয়ে অনায়াসে গলে যেত। একেবারেই সাধারণ বুনন পদ্ধতিতে বোনা হয় মসলিন শাড়ি। তাই নরম হলেও টেকসই হয়। এ কাপড় কিনতেন রাজাবাদশাহরা। এমনকি, ব্রিটিশ শাসিত ভারত থেকে মসলিন যেত ইউরোপে। সেখানে ওই কাপড়ের গাউন তৈরি করা হত রাজবংশীয় রমণীদের জন্য। বিভিন্ন মানের মসলিনের শাড়ি এখনও পাওয়া যায়। গ্রীষ্মের শাড়ির সংগ্রহে সম্ভব হলে রাখুন একটি মসলিন।
৫। চান্দেরি

চান্দেরি কটন শাড়িতে সুতির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় রেশম সুতোও। ছবিতে চান্দেরি কটন শাড়িতে দক্ষিণী অভিনেত্রী নয়নতারা। ছবি: সংগৃহীত।
মধ্যপ্রদেশের চান্দেরিতে তৈরি শাড়ি। জায়গার নামেই শাড়ির নাম। চান্দেরি শাড়ির রকমফের আছে— চান্দেরি সিল্ক, সুতির চান্দেরি ইত্যাদি। এর মধ্যে চান্দেরি কটন শাড়িতে সুতির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয় রেশম সুতোও। শাড়ি হয় হালকা, নরম আবার সামলানোর জন্যও বেশ ভাল। সাধারণত প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করা হয়। ব্লকপ্রিন্ট থাকে সুতির চান্দেরি শাড়িতে। পাড়ে থাকে সরু জরির রুলি। হালকা এই শাড়িও হতে পারে গরমের উপযুক্ত পোশাক।
৬। শিফন

নব্বইয়ের দশকে বলিউডে রাজত্ব করা শিফন শাড়ি যে এখনকার আধুনিকাদেরও পছন্দ হতে পারে, তা আলিয়া প্রমাণ করে দিয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত।
সুতি ছাড়া হালকা-নরম শাড়ি যদি খুঁজতে হয়, তবে তা নিঃসন্দেহে শিফন শাড়ি। ‘রকি অ্যান্ড রানি কি প্রেম কহানি’ ছবিকে আলিয়া ভট্টের শাড়ির কথা মনে আছে? নব্বইয়ের দশকে বলিউডে রাজত্ব করা শিফন শাড়ি যে এখনকার আধুনিকাদেরও পছন্দ হতে পারে, তা আলিয়া প্রমাণ করে দিয়েছেন। গরমে হালকা শিফনে আরামদায়ক ফ্যাশন খুঁজে নিতে পারেন আপনিও। শিফনে বড় বড় ফুলের নকশা গরমের ফ্যাশনে তরতাজা ভাব আনতে পারে।
৭। ঢাকাই জামদানি

সাদা লালের রংমিলন্তি ঢাকাই জামদানিতে। পরেছেন অভিনেত্রী রাইমা সেন। ছবি: সংগৃহীত।
মিহি সুতোয় বোনা স্বচ্ছ শাড়ি। তার জমি জুড়ে ছোট-বড়-মাঝারি মাপের বুটি। কিংবা কোনাকুনি করাতের নকশা। দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনই ওজনে হালকা। ঢাকাই জামদানিও গরমের আরামদায়ক শাড়ি হতে পারে।