Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Manimahesh Lake

বরফস্নাত উজ্জ্বল এক আলোকবিন্দু

হিমাচল প্রদেশের মণিমহেশ লেক প্রত্যক্ষ করা এক বিরল অভিজ্ঞতাহাদসার থেকেই মূল ট্রেকিং শুরু হল। সাধারণত জন্মাষ্টমী থেকে রাধাষ্টমী পর্যন্ত এই রুটে বেশি ভিড় থাকে।

নীলিমা: মণিমহেশ লেক

নীলিমা: মণিমহেশ লেক

প্লাবন ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:৩৭
Share: Save:

বরফে ঢাকা পাহাড়, খরস্রোতা জলরাশি, নিস্তব্ধতার মাঝে বন্য প্রকৃতির নিজস্ব শব্দ চিরকাল আমাকে টানে। আর সে টান উপেক্ষা করা আমার পক্ষে দুরূহ। তাই ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লাম, গন্তব্য হিমাচল প্রদেশের ভারমোরে অবস্থিত মণিমহেশ লেক। সময় সেপ্টেম্বরের প্রথম দিক, হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে পৌঁছলাম পাঠানকোট। সেখান থেকে গাড়িতে চাম্বা হয়ে পৌঁছলাম ভারমোর। দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার। হোটেলে পৌঁছে বুঝলাম, এই মুহূর্তে শুধুমাত্র আমরাই অতিথি। দ্বিতীয় দিন ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম ভারমানি মাতার মন্দির দর্শনের জন্য। গাড়ি না নিয়ে হাঁটা পথে যাত্রা শুরু করলাম। দু’দিকে বিস্তৃত আপেল বাগান, ছোট ছোট সুন্দর গ্রাম পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম মন্দিরে। দুপুরের পরে দিনটা বিশ্রাম করেই কাটল। পরদিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ ভারমোর থেকে গাড়িতে পৌঁছলাম হাদসার।

হাদসার থেকেই মূল ট্রেকিং শুরু হল। সাধারণত জন্মাষ্টমী থেকে রাধাষ্টমী পর্যন্ত এই রুটে বেশি ভিড় থাকে। আমরা যে সময়ে এসেছি, সে সময়ে বাকি যাত্রীদের ভিড় একেবারে নেই বললেই চলে। সামান্য কিছুটা চলার পরে কানে এল প্রচণ্ড বেগে বয়ে চলা জলের শব্দ। আমরা যে পথ ধরে চলেছি, ঠিক তার পাশ দিয়েই বয়ে যাচ্ছে বুধিল নদী। প্রথম ২ কিলোমিটার তেমন চড়াই নেই। কিন্তু তার পর থেকে পুরোটা চড়াই রাস্তা। ঠিক করলাম, আজ ধানচো পর্যন্ত যাব। হাদসার থেকে ধানচোর দূরত্ব ৫ কিলোমিটার। আকাশ পরিষ্কার, রোদের তেজও প্রচণ্ড। যেখানে কিছুটা গাছের ছায়া পাচ্ছিলাম, সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চললাম। জলের শব্দ আরও তীব্র হচ্ছিল। উঁচু উঁচু পাহাড় আর ঝর্নাগুলো আরও কাছে এগিয়ে এল। আমরা ধীরেসুস্থে ছবি আর ভিডিয়ো তুলতে তুলতে যখন ধানচো পৌঁছলাম, তখন বাজে বিকেল সাড়ে চারটে। রাতে থাকার জন্য টেন্ট বুক করলাম। এখানেও আজকের যাত্রী শুধু আমরাই। ধানচো জায়গাটি বেশ সুন্দর। চারদিকে উঁচু উঁচু পাহাড় আর তার মাঝে আমাদের টেন্ট। ডিনার সেরে ক্লান্ত শরীরে ঘুমিয়ে পড়লাম।

কুয়াশামাখা: গন্তব্য যখন ধানচো

সকালে উঠে চা আর আলুর পরোটা দিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম গৌরীকুণ্ডের উদ্দেশে। দূরত্ব ৬ কিলোমিটার। যত উপরে উঠছি, সৌন্দর্যের বহর যেন বাড়ছে। সাদা মেঘে মাঝেমাঝে ঢেকে যাচ্ছে পাহাড়চুড়ো। দূরে পাহাড়ের ঢালে ভেড়ার পাল চড়ে বেড়াচ্ছে। পাহাড়ের রং এক-এক জায়গায় এক-এক রকম। কোথাও সবুজ, কোথাও নীল, কোথাও বা ধূসর। কোথাও আবার পাহাড়ের চুড়োয় একচিলতে বরফ লেগে রয়েছে। তার মাঝে খরস্রোতা নদী কখনও দৃশ্যমান, কখনও অদৃশ্য। যেন আমাদের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে। এ ভাবে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ চলার পরে পৌঁছলাম সুন্দরাশি। ঘড়িতে তখন বাজে আড়াইটে। আবহাওয়ার কিছুটা পরিবর্তন হয়ে হালকা বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তবে সে বৃষ্টি বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। আমাদের শরীর ক্লান্ত আর গতি ধীর হয়ে পড়ল। তার মধ্যেও এই উন্মুক্ত পাহাড়ি উপত্যকা, দূরে ভাসমান সাদা মেঘের সারি মনে চলনশক্তি জোগাচ্ছিল। উঁচু পাহাড় থেকে নীচে ফেলে আশা সেই নদীটি দেখে মনে হচ্ছিল, সবুজ কার্পেটের উপরে কেউ যেন সরু একটা ফিতে বিছিয়ে দিয়ে গিয়েছে।

এর পরে ছোট হিমবাহ পেরিয়ে পৌঁছলাম গৌরীকুণ্ড। সূর্য তখন প্রায় অস্তাচলে। স্থানীয় কিছু লোক ঠান্ডায় আগুন পোহাচ্ছেন। আমিও যোগ দিলাম। দেখলাম, সামনে মণিমহেশ কৈলাস পর্বত। পর দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ বাকি দেড় কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পৌঁছে গেলাম অপূর্ব মণিমহেশ লেকের সামনে। দেখলাম, মণিমহেশের শিখরে সূর্যোদয়। মনে হল, পাহাড়ের পিছন থেকে এক টুকরো উজ্জ্বল মণি অন্ধকার ভেদ করে বেরিয়ে এল। এই অপূর্ব প্রাকৃতিক দৃশ্যকে ক্যামেরাবন্দি করে ফিরে চললাম ভারমোরের উদ্দেশে।

অন্য বিষয়গুলি:

Manimahesh Lake Himachal Pradesh
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy