Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Puri Offbeat

চেনা পুরীর স্বল্পচেনা ঠিকানা, শ্রীক্ষেত্রে ভ্রমণ হোক অন্য পথেও

পুরীর কাছাকাছি ঘুরে নিতে পারেন স্বল্পচেনা কয়েকটি জায়গায়। গত কয়েক বছরে এই জায়গাগুলি ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্বাদ বদলে একবার ঘুরে আসতে পারেন সেখানে।

পুরীর গোল্ডেন বিচ।

পুরীর গোল্ডেন বিচ। ছবি: সংগৃহীত।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০২৪ ১৯:২৪
Share: Save:

পুরী বললেই চোখের সমানে ভেসে ওঠে এক উত্তাল সমুদ্রের ছবি। অবিরাম সেই ঢেউ উঠছে, ভেঙে পড়ছে বালুতটে। ভেসে আসছে ঝিনুক-শাঁখের টুকরো। পুরী বললেই, মনে ভেসে ওঠে জগন্নাথ মন্দির, রথটান।, মণ্ডিের ভোগ খাওয়া বা পুজো দেওয়া। বাঙালির ঘোরার তিন জনপ্রিয় জায়গা ‘দীপুদা’। তারই মধ্যে পড়ে পুরী। ওড়িশার এই সৈকত শহরের সঙ্গে সেই কোনকাল থেকে বাঙালির নিবিড় সম্পর্ক। এখন অবশ্য এই শহর অনেক বেশি ঝকঝকে। বিলাসবহুল হোটেলের ভিড়। নাম করা বাঙালি রেস্তোরাঁ চেনের অনেকেই এখানে শাখা খুলেছে। বদলেছে জীবনযাত্রা। তবে এতদিনেও একইরকম রয়ে গিয়েছে, বাঙালির পুরীর প্রতি মনের টান, মন্দিরে গিয়ে জগন্নাথ দর্শন, সমুদ্রে স্নান, সন্ধ্যা হলেই সমুদ্রের ধারে বশে গল্প, খাওয়া ও কেনাকাটা। রথযাত্রা উপলক্ষে পুরীতে গেলে, চেনা জায়গার ভিড় এড়াতে ঘুরে নিতে পারেন স্বল্পচেনা জায়গাতেও।

গোল্ডেন বিচ

পুরী বললেই প্রথমেই নাম আসে স্বর্গদ্বারের। কথিত আছে, স্বর্গদ্বারে স্নান করলে সব পাপ ধুয়ে যায়। কাছেই রয়েছে শ্মশানও। বেশ জমজমাট এলাকাটি। তবে এত ভিড়ে যদি গা-ভাসাতে না চান, স্বর্গদ্বার থেকে টোটো চেপে মিনিট দশেকেই পৌঁছে যেতে পারেন ওড়িশার এক পরিচ্ছন্ন ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সৈকত গোল্ডেন বিচে। এ দেশের বেশ কয়েকটি সমুদ্র সৈকত পরিচ্ছন্নতা, দূষণ নিয়ন্ত্রণের নিরিখে ‘ব্লু্ ফ্ল্যাগ সার্টিফিকেশন’ পেয়েছে। তারই মধ্যে একটি এই গোল্ডেন বিচ। একে ব্লু ফ্ল্যাগ বিচও বলা হয়। এখানে এলে চিরাচরিত পুরীকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বরং এই সৈকতের পরিচ্ছন্নতা, সৌন্দর্য, সবুজের সমারোহে এক কথায় গোয়ার ছবি মনে করিয়ে দিতে পারে। গোল্ডেন বিচে প্রবেশের জন্য মাথা পিছু ২০ টাকার টিকিট দিতে হয়। ২৪ ঘণ্টা অবশ্য এখানে ঘোরাঘুরির অনুমতি নেই। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখানে ঘোরা যায়। স্নান ও কাপড় পরিবর্তনের সুবন্দোবস্ত রয়েছে। তবে তার জন্যও টাকা লাগে। টাকা দিয়ে পুরীর সৈকতে ঘুরব, এ প্রশ্ন মাথায় আসতেই পারে। তবে মিহি বালুকনার এই পরিচ্ছন্ন সৈকতের শেষ বিকেলের রূপ দেখলে, সে কথা আর মনে থাকবে না। সৈকত ঘিরেই রয়েছে হাঁটার রাস্তা, সবুজের সমারোহ, বাচ্চাদের পার্ক, খেলার জায়গা, শৌচাগার, পানীয় জলের ব্যবস্থা, নজর মিনার। হাজার খুঁজলেও এক টুকরো প্লাস্টিক খুঁজে পাবেন না এখানে। পরিচ্ছন্নতা ও অন্যান্য দিক বজায় রাখতে পারায় এই সৈকত পেয়েছে সম্মানীয়’ ব্লু ফ্ল্যাগ সার্টিফিকেশন’। সাধারণত, দূষণ মুক্ত পরিবেশ, সৈকত সংলগ্ন সামুদ্রিক জীব ও জগতের মান ও অন্যান্য মাত্রা নির্ধারণ করে এই সম্মান দেওয়া হয়। ঠিক সে কারণে, এই বিশাল সৈকতের কোথাও কংক্রিটের নির্মাণ পাওয়া যাবে না। যা আছে, তার সবটাই পরিবেশ বান্ধব। ক্রমশ এই সৈকতও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

পুরীর গোল্ডেন বিচ।

পুরীর গোল্ডেন বিচ। ছবি: সংগৃহীত।

কী ভাবে যাবেন?

পুরী স্টেশন অথবা স্বর্গদ্বার থেকে টোটো বা অটোয় গোল্ডেন বিচে যাওয়া যায়। দুপুরের বদলে ভোরবেলা ও বিকালবেলা গেলে এই সৈকত বেশি উপভোগ্য হয়ে উঠবে। রঘুরাজপুর

পুরীর অদূরেই গ্রাম রঘুরাজপুর। এ গ্রাম শিল্পীদের। বংশ পরম্পরায় গ্রামের প্রতিটি পরিবার পটচিত্র আঁকে। কখনও সুপারির খোলে, কখনও কাপড়ে নিপুন কারিগরিতে ফুটে ওঠে জীবনের গল্প। রাসযাত্রা, বিষ্ণুর দশাবতার, জগন্নাথের স্বর্ণবেশ, আধ্যত্মিক জগতও সেই ক্যানভাসের বিষয়বস্তু। ২০০০ সালে রঘুরাজপুর শিল্পগ্রাম পেয়েছে হেরিটেজ সম্মান। পুরী থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে এই গ্রামে পর্যটকদের ভিড় বিশেষ হয় না। তাল-নারকেল গাছ ঘেরা পথ পার হয়ে গাঁয়ে ঢুকলে প্রতি বাড়ির দেওয়ালেই চোখে পড়ে রঙিন সব কারুকাজ। বাড়ির দাওয়ায় বসে নিবিষ্ট মনে শিল্পীরা আঁকছেন। পটচিত্র মানে ঠিক মাটির পটে আঁকা ছবি নয়। এ গাঁয়ে ছবি আঁকা হয় পট্টেও। পট্ট অর্থাৎ বস্ত্র। কাপড়ের উপর তুলির নির্ভুল আঁচড়ে মূর্ত হয়ে ওঠে কাহিনি। তবে এই রঙে কৃত্রিমতা থাকে না। শাঁখ, পাথর ও সব্জি থেকে প্রাকৃতিক রং বের করে আঁকা হয় ছবি। শুধু কাপড়ে নয়, পর্যটক আকর্ষণে চায়ের কেটলি থেকে সুপারি, কাগজ, কৌটোর উপরও ফুটে ওঠে শিল্পীগ্রামের শিল্পকর্ম।

রঘুরাজপুরের পটচিত্র।

রঘুরাজপুরের পটচিত্র। ছবি: সংগৃহীত।

কী ভাবে যাবেন?

পুরী থেকে ১১ মিটার দূরে রঘুরাজপুর গ্রাম। অটো ভাড়া করে ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই ঘুরে আসা যায় সেখান থেকে।

পিপলি

পিপলি গ্রামে অ্যাপ্লিকের কাজ।

পিপলি গ্রামে অ্যাপ্লিকের কাজ। ছবি: সংগৃহীত।

পুরী থেকে ঘুরে নিতে পারেন এ রাজ্যের আর এক শিল্পী গ্রামে। পিপলি। ওড়িশার বিখ্যাত অ্যাপ্লিকের কাজ হয় এখানেই। ছাতা থেকে ব্যাগ, পোশাক রকমারি অ্যাপ্লিকের শিল্পকর্ম চাক্ষুষ করতে চলে আসতে পারেন গ্রামটিতে। শোনা যায়, দশম শতাব্দীতে শিল্পীদের নিয়ে এসে পিপলি গ্রাম বসিয়েছিলেন পুরীর তৎকালীন রাজা। রথের সজ্জা, জগন্নাথ দেবের বালিশ থেকে শুরু করে মন্দিরের চাঁদোয়া, শামিয়ানা তৈরি করতেন এই শিল্পীরাই। তবে এখন সেই কাজেও এসেছে বৈচিত্র। ব্যাগ থেকে ছাতা, দেওয়ালে সাজানোর জন্য রঙিন কাপড়ে, অন্য কাপড় দিয়ে নকশা ফুটিয়ে তোলেন তাঁরা। যোগ হয় ছেট ছোট কাচও। সমস্ত কাজই এত রঙিন দেখলে মনে হবে রঙের মেলা বসেছে। পুরীর বহু দোকানে অ্যাপ্লিকের কাজের ঘর সাজানোর জিনিসের দেখা মিললেও, তার আতুঁরঘরে আসতে চাইলে পিপলি গ্রামে ঢুঁ মারতেই হবে। গ্রামে ঢোকার রাস্তায় অ্যাপ্লিকের কাজের নকশা করা নানা জিনিসের দোকানও আছে। সেখানে এই সব জিনিসের দাম পুরীর দকনগুলির চেয়ে তুলনামূলক কম।

কী ভাবে আসবেন?

পুরী থেকে মোটামুটি ৪০ কিলোমিটার দূরে পিপলি গ্রাম। গাড়ি ভাড়া করে এখানে ঘুরে নেওয়া যায়। কিনতে পারেন অ্যাপ্লিকের হাতের কাজের রকমারি জিনিসপত্র।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy