—প্রতীকী ছবি।
ডিকশনারি বলছে মিথ শব্দের মানে ‘পৌরাণিক’। কিন্তু আর একটু খুঁটিয়ে দেখলে দেখবেন মিথ শব্দের অর্থ ‘অলীক’। আমাদের স্মার্টফোনের সম্পর্কে বেশ কিছু অলীক বা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। এই মুহূর্তে গোটা পৃথিবীর জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি (৫৪%) স্মার্টফোন ব্যবহার করে। এই ৪৩৩ কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর মধ্যে একটা বিষয় কিন্তু সর্বজনীন। স্মার্টফোন সম্পর্কে কোনও না কোনও ভ্রান্ত ধারণা প্রত্যেকের মধ্যেই আছে। আজকে আমরা এ রকমই ১০টা ভ্রান্ত ধারণা নিয়ে আলোচনা করব যা এই ২০২৪ সালেও স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে বর্তমান।
১) ফোন আপডেট করলে ক্যামেরা খারাপ হয়ে যায়:
দীর্ঘ দিন ধরে আমাদের মধ্যে এই ধারণাটা প্রচলিত যে, নতুন মডেলের ফোন আসলে কোম্পানি সফ্টঅয়্যার আপডেট দিয়ে পুরনো মডেলের ফোনের ক্যামেরা খারাপ করে দেয়। কিন্তু এটা সব সময় সত্যি নয়। আমাদের স্মার্টফোনের ক্যামেরার ৮০ শতাংশই প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোদ, জল, তাপে ক্যামেরার প্লাস্টিকের অংশগুলির গুণমান খারাপ হতে থাকে স্বাভাবিক নিয়মেই। তাই ফোন কেনার সময় আমরা যেমন ছবি পাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই ছবির গুণগত মান খারাপ হতে থাকে।
২) সারা রাত ফোন চার্জ দিলে ব্যাটারি খারাপ হয়ে যায়:
হ্যাঁ সারা রাত ফোন চার্জ দিলে ব্যাটারি খারাপ হয়ে যায় এই কথাটা আজ থেকে ১০ বছর আগে সত্যি ছিল। এখনকার স্মার্টফোনের ব্যাটারি, তার সফ্টঅয়্যার এতটাই উন্নত যে সে পুরো চার্জ হয়ে যাওয়ার পর নিজেই বুঝতে পারে। তার পর স্বয়ংক্রিয় ভাবে পাওয়ার কাট করে দেয়। আগেকার ব্যাটারি কিন্তু এই চার্জ পূর্ণ হয়ে যাওয়ার বিষয়টা বুঝতে পারত না। তাই নিজে থেকে চার্জ বন্ধ করতে পারত না। অতিরিক্ত চার্জের ফলে ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যেত।
৩) ওয়াইফাই এবং ব্লুটুথ ব্যাটারি খরচ করে:
এটা খুবই সাধারণ প্রচলিত ধারণা যে ওয়াইফাই ও ব্লুটুথ চালু রাখলে ফোনের ব্যাটারি দ্রুত খরচ হয়ে যায়। কিন্তু এখনকার স্মার্টফোনে ওয়াইফাই বা ব্লুটুথের মাধ্যমে কোনও অ্যাকটিভ কানেকশন চালু না থাকলে ব্যাটারি খরচ প্রায় হয়ই না। তাই ওয়াইফাই বা ব্লুটুথ চালু রাখলে কোনও ক্ষতি নেই যত ক্ষণ পর্যন্ত না ফোনের এই ফিচারগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে।
৪) আইপি রেটিং যুক্ত ফোন ওয়াটারপ্রুফ হয়:
এই ধারণাটা আমাদের প্রায়ই বিপদে ফেলে কারণ কোনও সংস্থা জলের মাধ্যমে বা ধুলো-ময়লা ঢুকে ফোন নষ্ট হলে তার কোনও গ্যারান্টি দেয় না। আইপি রেটিং ফোনকে জলের হাত থেকে কিছুটা বাঁচাতে পারে, বাঁচাতে পারে ধুলো-ময়লার হাত থেকেও। কিন্তু তার কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। যেমন জল যদি লবণাক্ত হয়, তা হলে সেই জল ফোনের চরম ক্ষতি করতে পারে। আইপি রেটিংয়ের টেস্টিং হয় কেবলমাত্র বিশুদ্ধ জলে। তাই আইপি রেটিংয়ের ভরসায় থাকবেন না। ফোনকে যথাসম্ভব জল এবং ধুলো-ময়লা থেকে দূরে রাখুন।
৫) অতি ঠান্ডায় ফোনের ক্ষতি হয়:
হ্যাঁ, এই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে, খুব বেশি ঠান্ডা ফোনের স্ক্রিন এবং ব্যাটারির উপর প্রভাব ফেলে। তাই পাহাড়ে যেখানে শূন্যের থেকেও কম তাপমাত্রা, সেখানে ফোন শরীরের কাছাকাছি রাখার চেষ্টা করুন। কথা বলার সময় হেডসেট ব্যবহার করুন।
৬) নেটওয়ার্কের আইকন ফুল মানে কল ভাল হবে:
ফোনের ডান দিকের উপরের কোণে মোবাইলের নেটওয়ার্কের আইকন থাকে। তার মধ্যে কয়েকটা টাওয়ারের চিহ্ন থাকে। নেটওয়ার্ক সিগন্যালের লাইন বা টাওয়ারের সংখ্যা যত বেশি হয় ফোনে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল তত বেশি জোরালো থাকে। কিন্তু পুরো সিগন্যাল থাকা মানেই কলের মান যে ভাল হবে বা কল ড্রপ হবে না এ রকম কোনও নিশ্চয়তা নেই। হতেই পারে আপনার এলাকায় নেটওয়ার্কের শক্তি ভাল, কিন্তু গুণমান ভাল নয়। সিগন্যাল হয়তো পুরো আছে, কিন্তু আশপাশে এত মানুষ সেই সিগন্যাল ব্যবহার করছেন যে, কলের মান খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
৭) ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপ বন্ধ করা উচিত:
এখনকার ফোন সত্যিকারের স্মার্ট। সে মাল্টিটাস্কিং করতে পারে। সে জানে যে কতগুলো অ্যাপ্লিকেশন খুলে রাখলে ফোনের ব্যাটারি শেষ হবে না, র্যামের ওপর চাপ পড়বে না। ব্যাকগ্রাউন্ড প্রসেস সঠিক ভাবে ম্যানেজ করার উপযুক্ত করেই এখনকার স্মার্টফোন তৈরি করা হয়েছে। আপনি যদি অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে বার বার জোর করে বন্ধ করে দেন, তা হলে পরবর্তী কালে সেই অ্যাপ্লিকেশনটা আবার খুলতে গেলে ফোনকে তুলনামূলক বেশি ব্যাটারি খরচ করতে হয়। তাই ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু অ্যাপ্লিকেশনগুলোকে জোর করে বন্ধ করবেন না।
৮) পাওয়ার ব্যাঙ্ক দিয়ে ফোনকে চার্জ করা:
আমরা একটা সহজ হিসাব করে ফেলি। ফোনের ব্যাটারি যদি পাঁচ হাজার এমএএইচ হয় আর একটা পাওয়ার ব্যাঙ্ক যদি ২০ হাজার এমএএইচের হয়, তা হলে আমরা ধরে নেই ওই পাওয়ার ব্যাঙ্ক দিয়ে পাঁচ হাজার এমএএইচের ব্যাটারিকে অন্তত চার বার পুরোপুরি চার্জ করা যাবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় তিন বার চার্জ করার পরেই পাওয়ার ব্যাংকের ব্যাটারি শেষ হয়ে যায়। আসলে পাওয়ার ব্যাঙ্ক থেকে তারের মাধ্যমে চার্জ ট্রান্সফার করতে, পাওয়ার ব্যাঙ্কের মধ্যে ঢাকা চিপ চালাতে, পাওয়ার ব্যাঙ্কের আলো জ্বালাতে ইত্যাদি নানা কাজে বেশ কিছুটা ব্যাটারির অপচয় হয়। তাই পুরোপুরি ২০ হাজার এমএএইচের ব্যাকআপ আমরা পাওয়ার ব্যাঙ্ক থেকে পাই না।
৯) ফাস্ট চার্জিং ব্যাটারিকে খারাপ করে:
হ্যাঁ করে। তবে সব সময় না। আসলে ফাস্ট চার্জিং যে সব ফোনে থাকে সেই সব ফোনের ব্যাটারিকে দু’ভাগে ভাগ করে দেওয়া হয়। দুটো ব্যাটারিকে আলাদা আলাদা চার্জ করার ফলে দ্বিগুণ গতিবেগে চার্জ দেওয়া সম্ভব হয়। সে ক্ষেত্রে ব্যাটারির স্বাস্থ্যের উপর খুব বেশি প্রভাব পড়ে না। তবে ১০০ এমএএইচের বেশি যদি চার্জিং স্পিড হয়, তা হলে ব্যাটারি দ্রুত ফুরিয়ে যেতে পারে।
১০) ফোন গরম হলে খারাপ হয়ে যায়:
এই ধারণাটা পুরোপুরি ঠিক নয়। ফোনের ক্যামেরা দীর্ঘ সময় চালু রাখলে, ফোন চার্জে রাখলে বা যদি আপনি দীর্ঘ সময় ধরে গেম প্লে করেন, তা হলে ফোন স্বাভাবিক নিয়মেই গরম হবে। এতে ফোনের কোনও ক্ষতি হবে না। ফোনের যন্ত্রাংশগুলো এমন ভাবেই তৈরি করা হয় যে সেগুলো ১০০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেট অবধি গরম সহ্য করতে পারে। তবুও ৫০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের থেকে বেশি গরম হলে আপনি ফোন ব্যবহার কিছু ক্ষণ বন্ধ রাখতে পারেন।
এই ১০টা পয়েন্টের বাইরে আরও হাজার রকম ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে যেগুলো নিয়ে ভবিষ্যতে আলোচনা করা যাবে। কিন্তু স্মার্টফোন যে রকম দিনকে দিন আধুনিক হচ্ছে তার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের আরও স্মার্ট হওয়াটা সময়ের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy