বিনায়ক দামোদর সাভারকর আসলে কে? ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রথম সারির যোদ্ধা, না কি ইংরেজ শাসকের কাছে নিরন্তর ক্ষমাপ্রার্থনা করে মুক্তি পাওয়া সাম্রাজ্যবাদের চোরা বন্ধু? গাঁধীহত্যার নেপথ্য কুশীলব? ভারতীয় হিন্দুদের মসিহা? এই প্রশ্নগুলোর যথার্থ উত্তর খোঁজার চেষ্টা ইতিহাসবিদরা, বিশেষত ভারতীয় ইতিহাসবিদরা, করেননি। তার ফল হয়েছে বিষম— ‘বীর’ সাভারকর চরিত্রটি হয়ে উঠেছেন চলমান অশরীরী, তাঁর সম্বন্ধে যা শোনা যায়, সবই অরণ্যের প্রাচীন প্রবাদ। এখনও অবধি তাঁর কোনও প্রামাণিক জীবনী নেই। যে জমানায় লিখিত ইতিহাসই পাল্টে যায় বিলকুল, সেখানে এমন একটি কার্যত অচর্চিত চরিত্র— বিশেষত, যাঁর প্রধান পরিচিতি ‘হিন্দুত্বের জনক’ হিসেবে— মহানায়ক হয়ে উঠতে পারেন, সেই সম্ভাবনা বিপুল।
সাভারকর: ইকোজ় ফ্রম আ ফরগটন পাস্ট, ১৮৮৩-১৯২৪
বিক্রম সম্পত
৯৯৯.০০, পেঙ্গুইন ভাইকিং
বিক্রম সম্পতের বইটি, সাভারকরকে নিয়ে গবেষণার প্রশ্নে, ব্যতিক্রমী। ভারতে এবং ইংল্যান্ডে বিভিন্ন অভিলেখাগারে প্রাথমিক আকর ঘেঁটে সাভারকরের আখ্যান নির্মাণ করার চেষ্টা করেছেন তিনি। প্রচুর নতুন তথ্য রয়েছে— লক্ষণীয় ভাবে, বইয়ের একেবারে গোড়ায় যে ‘অ্যাডভান্স প্রেজ়’ ছাপা হয়েছে, কয়েক পাতা জোড়া সেই বিবিধ জনের প্রশংসায় সম্পতের তথ্য সংগ্রহের কথা উঠে এসেছে। মুশকিল অন্যত্র। যদিও লেখক নিরপেক্ষতা বজায় রাখার দাবি করেছেন, সাভারকরের প্রতি তাঁর পক্ষপাত নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। সেলুলার জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনাই হোক, বা হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের প্রবক্তা থেকে হিন্দুত্বের রাজনীতির জনক হয়ে ওঠা, সাভারকরের জীবনের প্রথম পর্বের বিবিধ বিতর্কিত প্রশ্নে সম্পতের পাঠ খুব নিরপেক্ষ বলে মনে হয় না। প্রশ্ন হল, নিরপেক্ষতার এই অভাবের প্রকৃত কারণটি কী? কারণ যদি হয় বর্তমান রাজনৈতিক ক্ষমতাবানদের কাছে গ্রহণযোগ্য, আদরণীয় হয়ে ওঠা, তা বিপজ্জনক। শুধু সাভারকরের প্রশ্নে নয়, সামগ্রিক বিদ্যাচর্চার ক্ষেত্রেই।
সাভারকর: দ্য ট্রু স্টোরি অব দ্য ফাদার অব হিন্দুত্ব
বৈভব পুরন্দরে
৫৯৯.০০, জগরনট
বৈভব পুরন্দরে মরাঠি ভাষায় বেশ কিছু প্রাথমিক তথ্য নিয়ে কাজ করেছেন। সাভারকর চর্চায় এই কাজটা জরুরি ছিল। কেন সাভারকর রাজনৈতিক হিন্দুত্বের প্রবক্তা হয়ে উঠলেন, সেই কারণ সন্ধানে পুরন্দরে শুধু সাভারকরের লেখাতেই থমকে যাননি— সেলুলার জেলে হিন্দু বন্দিদের ওপর মুসলমান প্রহরীদের অত্যাচারের সাভারকর-বর্ণিত কারণের বাইরেও ভারতের তৎকালীন রাজনীতিতে, এবং সাভারকরের গাঁধী বিরোধিতায় তাঁর হিন্দুত্বের কারণ খুঁজেছেন। বিক্রম সম্পতের তুলনায় বড় আকারের কাজে যে ঘাটতি আছে, পুরন্দরের লেখায় তা কম। হিন্দু ধর্মের সঙ্গে হিন্দুত্বের ফারাক কোথায়, অনতিদীর্ঘ আলোচনায় গুছিয়ে লিখেছেন তিনি। এ কথা অনস্বীকার্য যে বর্তমান ভারতীয় রাজনীতিতে যাঁর চিন্তার প্রভাব সবচেয়ে প্রকট, তিনি সাভারকর। ফলে, তাঁর ভাবনার সঙ্গে আজকের রাজনীতির যোগসূত্রগুলি চিহ্নিত করে দেওয়া জরুরি কাজ। সাভারকর যে নিখাদ খলনায়ক বা প্রশ্নাতীত বীর, কোনওটাই নন, বরং ঘটনাপ্রবাহে পাল্টে পাল্টে যাওয়া এক বহুমাত্রিক রাজনৈতিক চরিত্র, পুরন্দরের লেখায় সেই কথাটি ফুটে উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy