Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

স্ট্রাইক বোলার না পেলে দুঃখ আছে

দুপুরে টিভিতে উমেশ-শামিদের বোলিং দেখার পর সন্ধ্যায় আন্দাজ করার চেষ্টা করছিলাম, এই বোলিং এবি ডে’ভিলিয়ার্সের মুখে পড়লে কী হবে! আর মাস খানেকের মধ্যেই তো পড়তে হবে। এই মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডেই বিশ্বকাপের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নামবে ভারত। বিশ্বকাপের ঠিক আগে ডে’ভিলিয়ার্স যে ব্যাটিংটা করে রাখল, ওই ম্যাচটা নিয়ে ভাবলে আতঙ্কই লাগছে। এটা নিয়ে কোনও তর্কের জায়গা নেই যে, এই মুহূর্তে বিশ্বের বোলারদের কাছে কঠিনতম ব্যাটসম্যানের নাম ডে’ভিলিয়ার্স।

মেলবোর্নে রোহিত। ধোনির স্বস্তির একটা কারণ। ছবি: গেটি ইমেজেস

মেলবোর্নে রোহিত। ধোনির স্বস্তির একটা কারণ। ছবি: গেটি ইমেজেস

দীপ দাশগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০২:৫৯
Share: Save:

দুপুরে টিভিতে উমেশ-শামিদের বোলিং দেখার পর সন্ধ্যায় আন্দাজ করার চেষ্টা করছিলাম, এই বোলিং এবি ডে’ভিলিয়ার্সের মুখে পড়লে কী হবে!

আর মাস খানেকের মধ্যেই তো পড়তে হবে। এই মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডেই বিশ্বকাপের ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে নামবে ভারত। বিশ্বকাপের ঠিক আগে ডে’ভিলিয়ার্স যে ব্যাটিংটা করে রাখল, ওই ম্যাচটা নিয়ে ভাবলে আতঙ্কই লাগছে।

এটা নিয়ে কোনও তর্কের জায়গা নেই যে, এই মুহূর্তে বিশ্বের বোলারদের কাছে কঠিনতম ব্যাটসম্যানের নাম ডে’ভিলিয়ার্স। একটা বলের জন্য চার-পাঁচ রকম শট তোলা থাকে ওর। আর লুজ বল নয়, ভাল বলকেও দেখবেন ডে’ভেলিয়ার্স মাঠের বাইরে ফেলে দিচ্ছে। সেখানে উমেশরা ওভার পিছু নিয়ম করে দু’টো বাউন্ডারি বল দেবে!

ডে’ভেলিয়ার্স ওয়ান ডে-তে দ্রুততম সেঞ্চুরিটা করে ফেলল বলে, ওর কথাটা বারবার আসছে। কিন্তু বিশ্বকাপে ভারতের গ্রুপ যদি দেখা যায়, তা হলে এমন আরও কিছু পাওয়ার-হিটার পাওয়া যাবে যারা কি না ভারতীয় বোলিংয়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে। ভারতের গ্রুপে পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ আছে। মানে একটা উমর আকমল থাকবে। ক্রিস গেইল, ডারেন স্যামি, আন্দ্রে রাসেল থাকবে। শামিদের শৃঙ্খলায় যদি উন্নতি না হয়, দুঃখ আছে কপালে।

এমসিজি-তে ভারতের ম্যাচটা দেখার পর কয়েকটা ব্যাপার নিয়ে দ্রুত ভাবতে হবে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে। বলছি না যে, বিশ্বকাপের আগে ভাল কিছু পাচ্ছি না। অবশ্যই পাচ্ছি, কিন্তু সেগুলো ঢাকা পড়ে যাচ্ছে সমস্যায়। যার উত্তর আর তিন-চারটে ম্যাচের মধ্যে না করতে পারলে বিপদ।

এক) নতুন বলে বোলিং: গত দেড় বছরে ভারতীয় বোলিংয়ে যা যা হচ্ছিল, রবিবারও আবার হল। শুরুর দিকে সেই শর্ট, বাইরে-বাইরে, ওভার পিছু দু’টো বাউন্ডারি বল। প্রথম ২০-২৫ ওভার দেখে মনে হচ্ছিল, সাদা জার্সিটা বদলেছে। বলের রংটা বদলেছে। ভারতীয় বোলিং একই আছে। একটা স্ট্যাটস দেখছিলাম যে, গত এক বছরে প্রথম দশ ওভার বোলিংয়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ভারতীয়দের। ওভার পিছু সাত-আট করে বেরিয়ে যাচ্ছে, একটাও উইকেট পড়ছে না। ভারতকে বুঝতে হবে, তাদের হাতে এখন আর কোনও জাহির খান নেই। যে স্কিল দিয়ে উইকেট বার করে নেবে। আর স্কিল না থাকলে তোমাকে শৃঙ্খলা দিয়ে বাঁচতে হবে। ঠিকঠাক একটা জায়গা বেছে নিতে হবে যেখানে বলটা ফেললে ব্যাটসম্যান আটকে যাবে। তুমি তিনটে ওভারে চার-চার করে দাও না, দেখবে চার নম্বরে ব্যাটসম্যান নিজেই চেষ্টা করবে আক্রমণে যাওয়ার। সুযোগও দেবে তখন। কিন্তু তাকে তুমি অনায়াসে শট খেলার সুযোগ দিয়ে গেলে সে আর ঝুঁকিতে যাবে কেন?

দুই) খুঁজতে হবে স্ট্রাইক বোলার: যে কোনও একজনকে বেছে নিতে হবে। নামটা ভুবনেশ্বর কুমার হতে পারে। মহম্মদ শামি পারে। তাকে বলতে হবে, তুমি রান কত বেরোল তা নিয়ে ভাববে না। কুড়ি রান বেশি বেরোক। কিন্তু তুমি দু’টো উইকেট তোলো। ভারতের এই পেস ব্যাটারিতে আমি কোনও স্ট্রাইক বোলারই পাচ্ছি না। কেউ কেউ রান আটকানোর দিকে যাচ্ছে। ভুবি যেমন এ দিন প্রথম ছ’সাত ওভারে তিনেরও নীচে রান দিচ্ছিল। কিন্তু সেটা আগে চলত। নিয়ম বদলানোর পর ওয়ান ডে ক্রিকেটও পাল্টে গিয়েছে। এখনও দশ ওভারে ৬০-০-র চেয়ে অনেক বেশি প্রেফারেবল ৮০-২। আর অস্ট্রেলিয়ার মতো টিমে ব্যাটিংটা বেশ লম্বা হয়। ওদের আট নম্বরে ফকনার নামে যার কি না সেঞ্চুরি আছে ওয়ান ডে-তে। ন’নম্বরেও আপনি একটা মিচেল স্টার্ক পাবেন, যে তিরিশ-চল্লিশ করে যাবে। সেখানে প্রথম দশ ওভারে যদি দু’টো উইকেট না বার করা যায়, ম্যাচে ওখানেই গেলে। রান কম উঠল, সেটা ফ্যাক্টরই নয়। এখন শেষ দশ ওভারে একশো-একশো কুড়ি তোলার জন্য একটা ডে’ভিলিয়ার্স, একটা ম্যাক্সওয়েল, একটা মিলার কিন্তু থাকে।

তিন) ওপেনিং স্লট: ভাল করে বললে, শিখর ধবন। যা দেখছি, ফাইনালে উঠলে আর চারটে ম্যাচ পাবে ভারত। এই চারটে ম্যাচেই ঠিক করতে হবে, বিশ্বকাপে ধবনকে নিয়ে স্ট্র্যাটেজিটা কী হবে? হয় ধোনিকে ওকে বলতে হবে যে, যে যা বলুক, রান তুমি পাও চাই না পাও, তুমি খেলবে। আমরা তোমার সঙ্গে থাকব। নইলে ওর বদলি ভাবতে হবে। আর সেটা এখন থেকেই ভাবতে হবে। রোহিত-রাহানে কিন্তু ভাল বিকল্প।

চার) রাহানের ব্যাটিং অর্ডার: এটাকে খুব বড় সমস্যা বলব না। এ দিন দেখলাম ও তিন নম্বরে গেল। ওপেনারদের কেউ তাড়াতাড়ি আউট হয়ে গেলে রাহানেকে পাঠানোই সেরা সিদ্ধান্ত। কিন্তু ওপেনাররা খেলে দিলে? তখনও কি রাহানে তিনে যাবে? নাকি বিরাটকে পাঠানো হবে? বিরাট গেলে রাহানে নামবে পরে, আর রাহানে কিন্তু অত বড় শট নেওয়ার ব্যাপারে দক্ষ নয় যা ইনিংসের শেষ দিকে লাগে। অস্ট্রেলিয়ার মাঠ পার করতে তখন ও সমস্যায় পড়তে পারে। যুবরাজ সিংহকে বিশ্বকাপের টিমে রাখলে এত ভাবনা ভাবতেই হত না। রাহানে ওপেন করত। আর যুবি মিডল অর্ডারটা দেখে নিত।

যাক গে, যা হয়নি তা নিয়ে ভেবে লাভ নেই। ভারত এ দিন গোটা তিরিশেক রান কম করেছিল। সেটা করতে পারলে ম্যাচটা জিতেও যেতে পারত। আসলে রায়নার আউটের সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল। তখন সবে পাওয়ার প্লে শুরু হচ্ছে। ও থেকে গেলে কেঁদে-ককিয়ে ২৬৭ তুলতে হয় না। আর পুরনো বলে ভারত যা বল করেছে, ম্যাচটাও অস্ট্রেলিয়া এক ওভার আগে শেষ করতে পারে না। এটা উমেশ-শামিদের বোলিংয়ে একটা উজ্জ্বল দিক। বিশ্বকাপের আগে ভারতীয় পেস বোলিংকে যা অক্সিজেন দেবে। পুরনো বলে বোলিংটা সত্যিই ভাল করছে। রিভার্সও হচ্ছে। কিন্তু নতুন বলে খারাপ করার ধাক্কাটা আর সামলানো গেল না। বিশ্বকাপের আগে ভারতীয় শিবিরের আরও একটা মনোবল বাড়ানো ব্যাপার হল, রোহিত শর্মার ফর্ম।

মেলবোর্নে রবিবার ১৩৮ করে গেল রোহিত। রিকি পন্টিংয়ের রেকর্ড ভেঙে। ভেঙে দিল দাদির ( সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) মেলবোর্নে ভারতীয়দের সর্বোচ্চ রানের (১০০) রেকর্ডও। রোহিত এত ভাল ব্যাকফুট প্লেয়ার যে অস্ট্রেলিয়ায় ওর সাফল্য না পাওয়াটাই অবাক করা ব্যাপার হত। ওকে দেখে আজ একবারও মনে হয়নি, টেস্টে ফর্মে ছিল না। রোহিত এ রকমই। ও যে দিন খেলবে, সে দিন দেখে মনে হবে না অফ ফর্ম বলে কিছু আছে ওর ডিকশনারিতে। আবার সেঞ্চুরি করে পরের ম্যাচেই একটা জঘন্য শটে চলে যেতে পারে। ওকে দেখলে একটা শব্দই মাথায় আসে।

বাংলায়, প্রহেলিকা। ইংরেজিতে, এনিগমা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE