এডুয়ার্ডো। সাম্বার দেশ থেকে ক্রোয়েশিয়ার ভরসা।
ব্রাজিলিয়ান দিয়েগো কোস্তার স্পেনের সঙ্গে নেইমারদের দেখা হবে কি না ঠিক নেই। এর মধ্যে আর এক ব্রাজিলিয়ান লুই ফিলিপ স্কোলারির পার্টি প্রথম ম্যাচেই ভেস্তে দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি ক্রোয়েশিয়ার এডুয়ার্ডো দ্য সিলভা। বৃহস্পতিবার সাও পাওলো স্টেডিয়ামে ব্রাজিল আর ক্রোয়েশিয়া দু’দেশের জাতীয় সঙ্গীতেই যাঁকে গলা মেলাতে দেখা যেতে পারে।
ব্রাজিলে জন্ম হলেও ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় দলের হয়ে খেলার সুযোগ এডুয়ার্ডোর সামনে দুটো স্বপ্ন পূরণের রাস্তা খুলে দিয়েছে। বিশ্বকাপে খেলা আর মাঠে প্লেয়ারের জার্সি গায়ে ব্রাজিলের জাতীয় সঙ্গীত শোনা। যদিও গায়ে তখন হলুদ নয় থাকবে ক্রোয়েশিয়ার লাল, সাদা জার্সি। যে জার্সিতে ৩১ বছরের ফুটবলার ২৯টি গোল করে দাভোর সুকেরের পর ক্রোয়েশিয়ার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা।
স্বপ্নপূরণের পথে যাত্রাটা কিন্তু সহজ ছিল না এডুয়ার্ডোর।
প্রায় বছর পনেরো আগে রিও-র বস্তি এলাকায় কিশোর এডুয়ার্ডোর প্রতিভা নজরে পড়ে ক্রোয়েশিয়ার ক্লাব ডায়নামো জাগ্রেবের। কালক্ষেপ না করে এডুয়ার্ডোকে যুব দলে সই করায় ডায়নামো। আর পিছনে তাকাতে হয়নি। ১২ বছর আগে ক্রোয়েশিয়ার নাগরিকত্বও পান। তার দু’বছর পরই জাতীয় দলের হয়ে প্রথম মাঠে নামা। শুরু আর এক যাত্রার। এডুয়ার্ডোর কথায় যা হলিউডের রোমাঞ্চকর কোনও চিত্রনাট্যের থেকে কম নাটকীয় নয়। “উদ্বোধনী ম্যাচে যখন দর্শকে ঠাসা স্টেডিয়ামে নামব, যে কেউ নার্ভাস হয়ে পড়বে। তবে আমার ক্ষেত্রে অনুভূতিটা বিশেষ। ব্রাজিলিয়ান হিসেবে ব্রাজিলে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাওয়ার সুযোগ ক’জনের ভাগ্যে থাকে! সিনেমাতেই এমন দেখা যায়,” বলেন এডুয়ার্ডো।
ঘরের ছেলের বিশ্বকাপ অভিযান নিয়ে রীতিমতো উৎসবের আমেজ ব্রাজিলের ভিয়া কেনেডি এলাকায়। “পরিবারের সবাই আমরা এডুয়ার্ডোর জন্য গলা ফাটাব। জানি ম্যাচটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ ওর জন্য,” বলে দেন এডুয়ার্ডোর মা জোয়েলমা। কিন্তু বিশ্বকাপে কাকে সমর্থন করবেন? জোয়েলমার উত্তর, “ব্রাজিলকেই সমর্থন করব। তবে প্রথম ম্যাচটা বাদে।”
এডুয়ার্ডোর ভাই ব্রুনোর কাছে আবার নেইমারদের প্রথম ম্যাচ ‘অম্লমধুর’। “একটা দেশের জাতীয় দলের হয়ে খেলার থেকে বড় কিছু কী হতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত এই সম্মানটা ভাই ব্রাজিলের হয়ে পেল না। পাচ্ছে অন্য কোনও দেশের হয়ে। তাতেও কৃতিত্বটা তো খাটো হয় না। কাজে ও ক্রোট হলেও হৃদয়ে ব্রাজিলিয়ান।”
তবে হৃদয়ে যাই থাক না কেন সাও পাওলোয় নেইমারদের অভিযানের গোড়াতেই ধাক্কা দিতেও এডুয়ার্ডোর প্রস্তুতি তুঙ্গে। সেখানে কোনও আপস নেই। “আমরা বিশ্বকাপের কালো ঘোড়া হয়ে উঠতেই এসেছি। অন্যদের অভিযান থামিয়ে দিতে চাই। আর ফুটবলে কিছুই অসম্ভব নয়,” বলেন এডুয়ার্ডো। সঙ্গে যোগ করেন, “ম্যাচের শুরুটা ভাল হলে আর যদি প্রথমেই গোল পেয়ে যাই তা হলে কে বলতে পারে না প্রথম ম্যাচে আমরা ব্রাজিলকে হারিয়ে দিতে পারব না? আমার সবচেয়ে বড় মোটিভেশন হল ব্রাজিলের মাঠে নামার সুযোগ পাওয়াটা।” তবু নিজের দেশের বিরুদ্ধে নামতে একটু হলেও কি বুক কাঁপবে না? সপাটে জবাব এল, “ক্রোয়েশিয়ার যে ভালবাসাটা আমি পেয়েছি তার জন্যই এত দিন সে দেশের হয়ে মাঠে নামছি। সে জন্য আমি গর্বিত।”
আরও এক ‘বিভীষণ’
পুরো নাম: এডুয়ার্ডো দ্য সিলভা
জন্ম: রিও ডি জেনেইরো (১৯৮৩)
২০০১: ডায়নামো জাগ্রেভে সুযোগ পেয়ে ক্রোয়েশিয়া যাত্রা
২০০২: ক্রোয়েশিয়ার নাগরিকত্ব লাভ
২০০৪: ক্রোয়েশিয়ার সিনিয়র জাতীয় দলে সুযোগ
জাতীয় দলের হয়ে গোল: ৬৪ ম্যাচে ২৯
ক্লাব কেরিয়ার: ডায়নামো জাগ্রেব (২০০১-’০৭), আসের্নাল (২০০৭-’১০)
বর্তমান ক্লাব: শাখতার ডনেস্ক (২০১০ থেকে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy