Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ডোপ পরীক্ষায় কেন কোস্টারিকার সাত তোপের মুখে ফিফা

গ্রুপে তিন প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে টপকে শীর্ষে আসাটাই কি কাল হল কোস্টারিকার। উরুগুয়ে-ইতালিকে হারানোর পাশাপাশি ইংল্যান্ডকে ছিটকে দিয়ে শেষ ষোলোয় নিজেদের জায়গা করে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কনকাকাফ গ্রুপের এই দলটির অধিনায়ক-সহ সাত ফুটবলারকে ডোপ পরীক্ষার জন্য ডেকে নেয় ফিফার মেডিকেল বোর্ড। শুক্রবার ইতালি-কোস্টারিকা ম্যাচ শেষ হওয়া ইস্তক যা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে কড়া সমালোচনার মুখে ফিফা।

ইতালিকে উড়িয়ে। তখনও কোস্টারিকার ফুটবলাররা জানেন না কোন সাত জনের ডাক পড়বে।

ইতালিকে উড়িয়ে। তখনও কোস্টারিকার ফুটবলাররা জানেন না কোন সাত জনের ডাক পড়বে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৪ ০৩:৪৬
Share: Save:

গ্রুপে তিন প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নকে টপকে শীর্ষে আসাটাই কি কাল হল কোস্টারিকার। উরুগুয়ে-ইতালিকে হারানোর পাশাপাশি ইংল্যান্ডকে ছিটকে দিয়ে শেষ ষোলোয় নিজেদের জায়গা করে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কনকাকাফ গ্রুপের এই দলটির অধিনায়ক-সহ সাত ফুটবলারকে ডোপ পরীক্ষার জন্য ডেকে নেয় ফিফার মেডিকেল বোর্ড। শুক্রবার ইতালি-কোস্টারিকা ম্যাচ শেষ হওয়া ইস্তক যা নিয়ে বিশ্ব জুড়ে কড়া সমালোচনার মুখে ফিফা।

বিশ্ব জুড়ে জল্পনা শুরু হয়ে যায়, ডোপিংয়ের জন্য কোস্টারিকার সাত ফুটবলারকে ডেকেছে ফিফা। ইতালির বিরুদ্ধে জয়ের পয়েন্ট কেটে নেওয়া হতে পারে। যদিও পরে জানা যায়, জয়ী দলের পয়েন্ট কেড়ে নেওয়ার সম্ভাবনা নিছকই গুজব। আবার এও বলা শুরু হয়ে যায়, ফুটবল বিশ্বের ‘গোলিয়াথদের’ হারানোর জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে চাপে ফেলা হচ্ছে ‘ডেভিডদের’। যে ধারণা ভোট অব কনফিডেন্স’ পাচ্ছে স্বয়ং দিয়েগো মারাদোনার।

বিষয়টি জানার পর ভেনিজুয়েলার বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে বিশ্ব ফুটবলে সর্বকালের অন্যতম সেরা প্লেয়ারের প্রতিক্রিয়া, “সাত জন ফুটবলারকে ডাকা হল! এটা তো একটা দেশকে অপমানের সামিল।” এর সঙ্গেই মারাদোনার প্রশ্ন, “তা হলে ইতালির সাত জনকে কেন ডাকা হল না?”

পরিস্থিতি অনুকূলে যাচ্ছে না বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি বিবৃতি দিয়েছে ফিফাও। “কোস্টারিকার সাত জনের মধ্যে পাঁচ জন বিশ্বকাপের আগে বাধ্যতামূলক ডোপ পরীক্ষা করায়নি। যেটাকে প্রাক-বিশ্বকাপ ডোপ পরীক্ষা বলে। তাই ইতালি ম্যাচের পর সেই ফুটবলারদেরই ডোপ পরীক্ষা করানো হয়েছে। আর ইতালি ম্যাচের জন্য যে দু’জনকে ডাকা হয়েছিল, সেই ফুটবলাররা ‘নেগেটিভ’ প্রমাণিত হয়েছে।” যদিও টুইটার মারফত ফিফার এই বিবৃতি কোস্টারিকার সংবাদমাধ্যমের কাছে দায়সারা বিবৃতি প্রদানের বেশি ছাড়া কিছু মূল্য পাচ্ছে না। তাদের পাল্টা প্রশ্ন তা হলে সুয়ারেজের উরুগুয়েকে আমাদের দেশ প্রথম ম্যাচে হারাবার পর কেন তখন ওই পাঁচ জনের সেই ডোপ পরীক্ষা করা হয়নি?

ইতালিকে হারানোর পরেই ফিফার মেডিকেল টিম ম্যাচ শেষে ডোপ পরীক্ষার জন্য ডেকে নিয়ে যায় কোস্টারিকার সাত ফুটবলারকে। অথচ ফিফার নিয়ম অনুযায়ী প্রতি ম্যাচের শেষে দলের সর্বাধিক দু’জনকে ডোপ পরীক্ষায় ডাকা যেতে পারে। এঁদের মধ্যে ছিলেন জয়ের গোলদাতা ব্রায়ান রুইজ। তিনি আবার কোস্টারিকা দলের অধিনায়ক। এ ছাড়াও ডোপ পরীক্ষায় নিয়ে যাওয়ার তালিকায় ছিলেন, ক্রিশ্চিয়ান বোলানোস, কেলর নাভাস, সেলসো বোর্জেস, বারান্তিস, উরেনা এবং কালভো। টিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে মিক্সড জোন থেকে রুইজকে যখন ডোপ পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়, তৎক্ষণাৎ বিরক্তি ছড়িয়ে পড়ে কোস্টারিকান অধিনায়কের চোখে মুখে। এর পরে আরও ছ’জন কোস্টারিকান বিশ্বকাপারকে ডেকে নেওয়া হয় ডোপ পরীক্ষার জন্য। কিন্তু অবাক করার মতো ঘটনা, বিপক্ষ ইতালি দলের ডিফেন্ডার জিওর্জিও চিয়েলিনি ছাড়া তাঁদের আর কাউকেই ডাকা হয়নি ডোপ পরীক্ষায়।

যা দেখে কোস্টারিকার গোলকিপার স্টেডিয়ামেই দেশের প্রচারমাধ্যমকে বলে বসেন, “অত্যন্ত অসম্মানের। হাসিও পাচ্ছে সব দেখে। আমরা তো জেতার পর ধীর স্থির ভাবেই ড্রেসিংরুমে আসছিলাম। তা হলে কী এমন হল যে, সাত জনকে ডাকতে হল। এর চেয়ে গোটা টিমটাকে ডেকে নিলেই তো পারত।” অধিনায়ক রুইজও তীর্যক ভঙ্গিতে বলেন, “সাত জনকে ডোপ টেস্টে ডাকাটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য নিষিদ্ধ মাদক সেবন নয়, বরং কঠোর পরিশ্রম করেছি। এটা দোষের কি না জানি না।”

তবে নাভাস ধীর-স্থির ভাবে ড্রেসিংরুমে আসার কথা বললেও, ইতালি-কোস্টারিকা ম্যাচের বিরতিতে টানেলে বুফোঁদের সঙ্গে কথা কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়েন ক্যাম্পবেলদের মতো কোস্টারিকা দলের কেউ কেউ। যা ধরা পড়েছে টিভি ক্যামেরায়।

কোস্টারিকার এই দুঃসময়ে তাদের হয়ে আসরে নেমে পড়েছেন মারাদোনাও। বলছেন, “এটা নিয়মকে অপমান করা ছাড়া আর কিছুই নয়। আর ফিফা যে যুক্তি আওড়াচ্ছে তা নতুন লাগছে। দু’জনকে ডাকা হয়। আমি অতীতে এই ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি বলেই জানি নিয়মটা।” এখানেই না থেমে মারাদোনা আরও বলেন, “সাত জনকে ডোপ টেস্টে ডাকার ঘটনা নতুন শুনলাম। আসলে ‘গ্রুপ অব ডেথ’-এ সবাই কোস্টারিকাকে ভেবেছিল দুর্বল। কিন্তু এখন সবচেয়ে শক্তিশালী ওরাই। তাই ওদের এই দুর্ভোগ।”

উল্লেখ্য, ১৯৯৪-তে মার্কিন মুলুকে বিশ্বকাপ চলাকালীন গ্রিস ম্যাচের পর ডোপ পরীক্ষায় ‘পজিটিভ’ হয়েছিলেন মারাদোনা। যার জেরে বিশ্বকাপ থেকেই নির্বাসিত করা হয় ফুটবলের রাজপুত্রকে।

আসলে ‘গ্রুপ অব ডেথ’-এ সবাই কোস্টারিকাকে ভেবেছিল দুর্বল। কিন্তু এখন সবচেয়ে শক্তিশালী ওরাই। তাই ওদের এই দুর্ভোগ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE