অভিযানে যাওয়ার পথে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে বিপ্লব বৈদ্য, নিমা শেরপা ও দেবব্রত মুখোপাধ্যায়।—নিজস্ব চিত্র।
এ বার কঠিনতর উত্তরের পথ দিয়েও এভারেস্টে উঠে পড়লেন বাংলার তরুণেরা। রবিবার ভারতীয় সময় সকাল ৯টা ১০ মিনিটে চিনের দিক দিয়ে বিশ্বের উচ্চতম শৃঙ্গে পা রাখলেন হালিশহরের দেবব্রত মুখোপাধ্যায় ও কালিকাপুরের বিপ্লব বৈদ্য। ২০১০-এ নেপালের দিক দিয়ে অসামরিক উদ্যোগে প্রথম এভারেস্টে উঠেছিলেন বাংলার বসন্ত সিংহ রায় ও দেবাশিস বিশ্বাস। তার পরে আরও অনেকে।
বিপ্লববাবুর স্ত্রী রেখা বৈদ্য জানালেন, রবিবার সন্ধ্যায় তাঁদের কাছে প্রথম সাফল্যের খবরটি আসে। এর পরে রাত সোয়া আটটায় বাড়িতে ফোন করেন বিপ্লব। জানিয়েছেন আবহাওয়া খারাপ থাকায় শুক্রবার থেকেই সামিট ক্যাম্পে আটকে ছিলেন বিভিন্ন দেশের বেশ কিছু অভিযাত্রীর সঙ্গে তাঁরাও। শনিবার রাত আটটা নাগাদ আবহাওয়া পরিষ্কার হওয়া মাত্র শেরপারা অভিযান শুরুর সবুজ সংকেত দেন। দেবব্রত ও বিপ্লব তৈরি হয়ে রওনা হন রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ। তার পরে সকালে তাঁরা শীর্ষে আরোহণ করেন। রেখা জানান, দুই অভিযাত্রীই সুস্থ রয়েছেন। বিকেলেই তাঁরা সামিট ক্যাম্পে ফিরে এসেছেন। মার্চের শেষ দিনে তাঁরা কলকাতা থেকে কাঠমান্ডু রওনা হয়েছিলেন।
নেপালের দিকে সাউথ কলের পথের চেয়ে চিন হয়ে নর্থ কলের পথ তুলনায় কঠিন। এ বার মরসুমের শুরুতেই সাউথ কলে অভিযাত্রীদের পথ সুগম রাখার ব্যবস্থা করার সময়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান কয়েক জন শেরপা। তার পরে নেপালের দিক দিয়ে অভিযান বন্ধ রয়েছে। কিন্তু বসন্ত-দেবাশিসরা বাংলার পর্বত অভিযাত্রীদের মনে এভারেস্টের যে স্বপ্ন গেঁথে দিয়েছেন, তাকে দমিয়ে রাখা গেল না। ঘটনাচক্রে নব্বইয়ের দশকে বাংলার অভিযাত্রীরা এই নর্থ কল দিয়েই প্রথম এভারেস্ট আরোহণের চেষ্টা করেছিলেন। সে প্রচেষ্টা সফল হয়নি। তার পরে অসামরিক উদ্যোগে এই প্রথম উত্তরের পথ দিয়ে এভারেস্ট জয় বাংলার। দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের বন্ধু রক্তিম কর জানান, একটি সংস্থার ওয়েবসাইটে রবিবার বিকেলে প্রথম এই অভিযানের সাফল্যের খবর পান বাংলার পর্বতারোহীরা। তার পরে খবর দেওয়া হয় বিপ্লব ও দেবব্রতের বাড়িতে।
দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী বিপাশা স্বামীর সঙ্গে কাঠমান্ডুতে গিয়েছিলেন। তার পরে বিপ্লব-দেবব্রত চিনে চলে গেলে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন। ফেসবুকে তিনি শেষ আপডেট লিখেছেন রবিবার বিকেল ৩টে ৪৫-এ। লিখেছেন ‘প্রায় ৮৩০০ মিটার ওপরে সামিট ক্যাম্পে কাল থেকে অপেক্ষায় রয়েছে দেবব্রত আর বিপ্লব। খারাপ আবহাওয়া... কিন্তু সুখবর আশা করছি।’ এ দিন স্বামীর সাফল্যের খবরে তিনি বিহ্বল। কবে যাত্রা শুরু করেছিলেন দেবব্রতরা, জানতে চাওয়ায় বিপাশা বললেন, “দিনক্ষণ সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আমি তো নিজে ওঁদের সঙ্গে কাঠমান্ডু গিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্বাস করুন, মনে হচ্ছে সে সব যেন কত দিন আগের ঘটনা। এই মুহূর্তে শুধু একটা কথাই মনে হচ্ছে সামিট হয়ে গিয়েছে, সুস্থভাবে ফিরে আসুক ওরা!” রাতে ফোন করে দেবব্রতবাবু জানিয়েছেন, কালই সামিট ক্যাম্প থেকে নামা শুরু করবেন তাঁরা। তার পরে কাঠমান্ডু পৌঁছে সেখান থেকে জুনের প্রথম দিনে কলকাতায় ফেরার কথা ভাবছেন তিনি ও বিপ্লব। স্পষ্টতই অধৈর্য বিপাশা বললেন, “এত দিন সেখানে তারা কী করবে জানি না!” স্ত্রী জানান, দেবব্রতর ইচ্ছা ছিল দৃষ্টিহীন একটি তরুণকেও তিনি এই অভিযানে সঙ্গে নিয়ে যাবেন। কিন্তু অনেকটা এগিয়েও সেটা করা যায়নি। তখন বিপ্লব-দেবব্রত দুজনে অভিযানে বেরোনোর পরিকল্পনা করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy