ইন্ডিয়ান সুপার লিগে আটলেটিকো দে কলকাতাকে চ্যাম্পিয়ন করার জন্য রাজ্য সরকারের ‘খেল সম্মান’ পুরস্কার পাচ্ছেন মহম্মদ রফিক এবং অর্ণব মণ্ডল। শেষ মুহূর্তে তালিকায় ঢুকেছে দু’জনের নাম। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছায়।
অত্যন্ত গোপনে তৈরি রাজ্য সরকারের ‘খেল সম্মান’, ‘বাংলার গৌরব’, ‘ক্রীড়াগুরু’ পুরস্কার তালিকায় অর্ণব-রফিকের ঢুকে পড়ার মতোই চমক— মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা, দিল্লি, তামিলনাড়ুর সঙ্গে পাল্লা দিতে বাংলার সফল ক্রীড়াবিদদের জন্যও রাজ্য সরকারের বিরাট আর্থিক পুরস্কারের ঘোষণা। জাতীয় গেমসে সোনা জিতলে এ বার থেকে বাংলার ক্রীড়াবিদরা পাবেন পাঁচ লাখ টাকা। রূপো ও ব্রোঞ্জ জিতলে দেওয়া হবে যথাক্রমে তিন ও দু’লাখ টাকা। আগে রাজ্যের গেমস-সোনাজয়ীরা পেতেন মাত্র কুড়ি হাজার টাকা। এই আর্থিক বৈষম্যের সুযোগ কাজে লাগিয়ে অন্য রাজ্যগুলো জাতীয় গেমসে তাদের পদকের সংখ্যা বাড়াতে টাকার প্রলোভন দেখিয়ে বাংলার অ্যাথলিট নিয়ে যেত নিজেদের রাজ্যে। সেটা আটকাতে রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত। বিওএ প্রেসিডেন্ট অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় শুক্রবার বললেন, “বাংলার ক্রীড়াবিদরা এ বার নিশ্চয়ই নিজের রাজ্য ছেড়ে যাবেন না। পদক জিতলে আমরা অন্য রাজ্যের সমান টাকা দেব।” জাতীয় গেমস শুরু হচ্ছে ৩১ জানুয়ারি।
গত বছর থেকেই বাংলার কৃতী খেলোয়াড় এবং কোচেদের পুরস্কার দেওয়া চালু করেছে রাজ্য সরকার। এ বার ১০ জানুয়ারি নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে প্রাপকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। চেকের সঙ্গে দেওয়া হবে ট্রফি ও অন্যান্য সামগ্রী।
‘খেল সম্মান’ মূলত দেওয়া হয় বর্তমান সফল প্লেয়ারদের। সেই তালিকায় ফুটবলের অর্ণব, রফিক ছাড়াও রয়েছেন দীপক মণ্ডল। ক্রিকেটের অশোক দিন্দা, মহম্মদ শামি, অ্যাথলেটিক্সের সুস্মিতা সিংহ রায়, স্কোয়াশের সৌরভ ঘোষাল, সাঁতারের সুপ্রিয় মণ্ডল, দাবার দীপ সেনগুপ্ত, সন্দীপন চন্দ, টেবল টেনিসের সৌম্যজিত্ ঘোষ, অঙ্কিতা দাস, সৌরভ চক্রবর্তীরা রয়েছেন তালিকায়। তবে এই বিভাগের জন্য কোনও সফল প্লেয়ার খুঁজে পাওয়া যায়নি টেনিস, কবাডি, বক্সিং, ভলিবল, বডি বিল্ডিংয়ে।
প্রাক্তনদের দেওয়া ‘বাংলার গৌরব’ সম্মান পাচ্ছেন ফুটবলের অরুণ ঘোষ, তরুণ বসু, মিহির বসু, প্রদীপ চৌধুরী, শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। এই তালিকায় রয়েছে ভাইচুং ভুটিয়ার নামও। যা জেনে বিস্মিত অনেকেই। কারণ, ভাইচুং এখনও সরকারি ভাবে প্রাক্তন হননি। ক’দিন আগেই ইস্টবেঙ্গলে নাম লিখিয়েছেন একটি ম্যাচ খেলে ক্লাব ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার জন্য। ক্রিকেটের গোপাল বসু, হকির গুরবক্স সিংহ, টেবল টেনিসের ইন্দু পুরি, অ্যাথলিট রীতা সেনদের মতো প্রাক্তনদের সঙ্গে ভাইচুং কী ভাবে একই পুরস্কার প্রাপকের তালিকায় ঢুকলেন তা নিয়ে তাই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী হয়েছিলেন বলেই কি নিয়ম ভাঙা হল ভাইচুংয়ের ক্ষেত্রে?
বেঙ্গল অলিম্পিক সংস্থার কর্তাদের কাছে নাম চাওয়া হলেও চূড়ান্ত তালিকা বানিয়েছে রাজ্য ক্রীড়া দফতর। সারদা-কাণ্ডে ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র গ্রেফতার হওয়ার আগেই তালিকা তৈরি শুরু হয়েছিল। পরে দফতরের অফিসাররা তা সম্পূর্ণ করেন। নবান্নের নির্দেশে তালিকায় ভাইচুং-সহ কিছু নাম ঢুকেছে বলে খবর। ‘বাংলার গৌরব’-এর তালিকায় ব্যাডমিন্টনের দীপু ঘোষ, মনোজ গুহ, ভারোত্তোলনের লক্ষ্মীকান্ত দাস, ছায়া আদক, কবাডির বিশ্বজিত্ পালিত, ভোলানাথ গুঁই, টেনিসের জিশান আলিদের নির্বাচন নিয়ে অবশ্য কোনও বিতর্ক নেই।
তালিকায় সবচেয়ে বড় চমক অবশ্য সফল কোচেদের নির্বাচনে। একই সঙ্গে মঞ্চে উঠতে দেখা যাবে ময়দানের এক সময়ের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ফুটবল কোচ প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও অমল দত্তকে। দু’জনকেই একই বছরে ‘ক্রীড়াগুরু’ সম্মানে ভূষিত করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এই সম্মান পাচ্ছেন টেনিসের জয়দীপ মুখোপাধ্যায়, বিলিয়ার্ডসের মনোজ কোঠারি, জিমন্যাস্টিক্সের জয়প্রকাশ চক্রবর্তীও। নবান্ন সূত্রের খবর, আরও দু’একটা নাম ঢুকতে পারে তালিকায়। বিতর্কিত দু’-একটা নাম বাদও যেতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy