অভিষেক-এলানোদের উচ্ছ্বাস।
আন্তোনিও লোপেজ হাবাস নিশ্চয়ই এখন আফসোস করছেন।
জানি না স্পেনে বসে আটলেটিকো কোচ আইএসএল ফাইনালটা দেখলেন কি না। যদি দেখে থাকেন, তা হলে আফসোস হওয়াটা স্বাভাবিক। মনে হওয়াটা স্বাভাবিক, এই চেন্নাইকে হারিয়ে ট্রফিটা আমিও জিততে পারতাম। একটা থ্রিলার ম্যাচ চেন্নাই জিতে গেল ঠিকই, কিন্তু আইএসএল ফাইনাল দেখাল ওরা দুর্ভেদ্য নয়। হাবাস যদি পুণের মাঠে কয়েকটা ভুল না করতেন, কে বলতে পারে চেন্নাইয়ের বদলে আটলেটিকো রবিবার ফাইনালে খেলত না?
আমি মার্কো মাতেরাজ্জির টিমের থেকে এতটুকু কৃতিত্ব কাড়তে চাইছি না। ওরা সত্যি ভাল টিম। মেন্ডোজা তো অসাধারণ। আইএসএলের সেরা প্লেয়ার এ বার। ইলানো আছে। যে ভাল ফ্রিকিক নিতে পারে। মানে, একটা টিমকে চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে যে যে মশলা দরকার, চেন্নাইয়ানে সবই পাওয়া যাবে। কিন্তু পুণেতে যদি মেন্ডোজাকে ডাবল কভারিংয়ে আটকে দেওয়া যেত, বা যদি রাখা যেত জোনাল মার্কিংয়ে, ফাইনালে আটলেটিকোর ওঠা অসম্ভব হত বলে মনে হয় না। অন্তত ০-৩ গোলে হেরে ফিরতে হত না।
বরং আইএসএল ফাইনালে এসে একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখলাম। চেন্নাইয়ানের বিরুদ্ধে ঠিক যে যে ভুলগুলো করেছিলেন হাবাস, ঠিক একই ভুল করে গেলেন জিকোর মতো স্বনামধন্য কোচও! বিশেষ করে মেন্ডোজাকে আটকানোর সময়।
চেন্নাইয়ের জার্সি গায়ে কলম্বিয়ার এই ফুটবলার যখনই বল পায় তখনই ওকে ক্রিয়েটিভ কিছু করতে দেখি। ওর বাঁ পা-টা তুখোড়। সঙ্গে দশ-পনেরো গজের একটা স্প্রিন্ট রয়েছে। যেটা দিয়ে এক মুভে তিন-চারটে ফুটবলারকে কাটিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে। পুণেতে হাবাস ভুলটা করেছিলেন মেন্ডোজাকে খেলতে দিয়ে। এ দিন জিকোও সেই পথেই হাঁটলেন এবং ডুবলেন। আর মেন্ডোজা পুণের মতো গোয়াতেও দাপিয়ে কাপটা তুলে দিল চেন্নাইকে। নিজে একটা গোল করল। কাট্টিমণি ওকে দেখেই ভুল করে আত্মঘাতী গোল খাইয়ে দিল। ব্রুনোর পেনাল্টিটাও চেন্নাই পেল মেন্ডোজাকে ডিফেন্সিভ থার্ডে অবৈধ ভাবে আটকাতে গিয়েই।
চেন্নাই ডিফেন্সে দুই সাইডব্যাক ধনচন্দ্র এবং মেহরাজের টার্নিং ভাল না। কলকাতায় হাবাস পারতেন ওই দু’টো জায়গাকে নিশানা বানিয়ে টানা নব্বই মিনিট আক্রমণ করে যেতে। তা হলে ওদের কাউন্টার অ্যাটাকের ঝাঁঝ কমত। সেটা হয়নি বলব না। তবে আরও বেশি আক্রমণ করা উচিত ছিল এই দু’টো জায়গাতেই। জিকোর মতো কোচও কিন্তু এ দিন চেন্নাইয়ের দুই সাইডব্যাকের এই দুর্বলতায় নজর দিলেন না সে ভাবে।
জিকো বা জোফ্রের ভাগ্য খারাপ ওদের গোলে কাট্টিমণির মতো এমন একজন কিপার রয়েছে। যার আউটিং পাতে দেওয়ার মতো নয়। আর গোল লক্ষ করে দশটা শট নিলে ও পাঁচটাতেই গোল খাবেই। কলকাতায় বোরহাকে দিয়ে হাবাস সেটা করে দেখিয়েওছিলেন। এ দিনও নব্বই মিনিটের মাথায় আত্মঘাতী গোলটা গোয়া খেল এই কাট্টিমণির জন্যই। ম্যাচটাও ওখান থেকে চলে গেল মাতেরাজ্জির টিমের পকেটে। হাবাসের আফসোস আরও বাড়তে পারে যে কাট্টিমণির এই দুর্বলতা অস্ত্র করেই তিনি ঘরের মাঠে গোয়া ম্যাচটা বার করেছিলেন! অথচ সেই নিখুঁত অঙ্কের পরেও হাবাস ফাইনালে নেই।
আরও দু’টো ভুল করেছিলেন হাবাস। দেখুন, ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত এমন দিকে যাচ্ছিল যে, যে কেউ কাপ নিয়ে বেরিয়ে যেতে পারত। তাই ফুটবলারদের পারফরম্যান্স স্কোর দিয়ে বিচার করা যাবে না খুব একটা। আর তাই গোলকিপার এডেল বেটে, ফিকরু আর জোফ্রেকে ছেঁটে ফেলার জন্য কলকাতা কোচের আফসোস বাড়তেই পারে।
যত দূর মনে পড়ছে, গত বছর ফাইনালে কেরলের মাইকেল চোপড়ার একটা অব্যর্থ গোল এই বেটেই দুরন্ত রিফ্লেক্সের সঙ্গে বাঁচিয়ে কলকাতার ট্রফি পাওয়ার পথ পরিষ্কার করেছিল। অথচ সেই ছেলেটাকেই হাবাস এ বার দলে রাখেননি। যা দেখে আমার সেই ২০০২ মরসুমের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। মোহনবাগানকে সে বার জাতীয় লিগ জেতানোর পর কর্তারা পনেরো জন ফুটবলারকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। যার মাশুল মোহনবাগানকে গুণতে হয়েছিল পরের বছর গুলোতে। এক্ষেত্রেও সেই একই ব্যাপার। হাবাস যদি ম্যাচটা দেখে থাকেন তা হলে নিশ্চয়ই বেটেকে সেরা গোলকিপারের পুরস্কার নিতে দেখে আঙুল কামড়েছেন। বেটে অনেকটা তরুণ বসু ঘরানার কিপার। বলের উপর থেকে কখনও নজর সরায় না। হাবাস আইএসএল-টুয়ের অন্তিম পর্যায়ে অমরিন্দরকে নিয়ে যে রকম ভুগেছেন সেটা বেটে থাকলে হত না বলেই মনে হয় আমার।
স্বপ্নভঙ্গ বিরাট-অনুষ্কার।
জোফ্রে আর ফিকরুর কথাও বলতে হবে। দু’জনেই কলকাতা ফেরত। প্রথম জন ফাইনালে খেলল গোয়ার জার্সি গায়ে। আর দ্বিতীয় জন চেন্নাইয়ান টিমে থাকলেও খেলার সুযোগ পায়নি এ দিন। কিন্তু যুবরভারতীতে ফিকরুর গোলটা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে হয়েই থাকবে।
জোফ্রে যখন গোয়াকে ২-১ এগিয়ে দিল সাতাশি মিনিটে, তখন মনে হচ্ছিল দু’তিন দিন ধরে শোনা কথাটাই এ বার সত্যি হয়ে গেল যে, ক্রিসমাসে আইএসএল কাপ নিয়ে ক্রিসমাস পালন করবে গোয়া। এ বার গোয়ার হয়ে জোফ্রের পারফরম্যান্সও অনবদ্য। অথচ ওকে বাদ দিয়ে হাবাস জাভি লারাকে নিয়ে এসেছিলেন। সেই লারা টুর্নামেন্টের মাঝপথেই চোটের কারণে দেশে ফিরে যায়। এ দিনও ফ্রিকিক থেকে ভাল গোল করল জোফ্রে। গোয়াকেও প্রায় জিতিয়ে দিচ্ছিল।
হাবাস ম্যাচটা দেখলে নিশ্চয়ই দুষবেন নিজের অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসকে। এ বার কলকাতার টিমটা মোটেই খারাপ ছিল না। এর সঙ্গে সেই টিমে গোয়া আর চেন্নাইয়ানের এই তিন ফুটবলার থাকত তা হলে চেন্নাইয়ে না গিয়ে ট্রফি আবার কলকাতায় আসত না বাজি রেখে বলা যায় কি?
গ্রেফতার এলানো
নিজস্ব প্রতিবেদন
এফসি গোয়ার অন্যতম মালিক দত্তরাজ সালগাওকরের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ায় গ্রেফতার হলেন চেন্নাইয়ানের মার্কি ফুটবলার এলানো ব্লুমার। গোয়া পুলিশের দাবি, ফাইনাল শেষ হওয়ার পরে গোয়া ডাগআউটে শুরু হয় ঝামেলা। সালগাওকরের দিকে ইঙ্গিত করে অকথ্য গালিগালাজ করেন এলানো। এ ছাড়া গোয়া মালিককে মারধোরও করেন ব্রাজিলীয় তারকা। যে কারণে এলানোকে গ্রেফতার করে গোয়া পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে কাউকে আটকে রাখার অভিযোগ আনা হয়েছে।
ছবি: পিটিআই
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy