নায়ক: প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক। দ্বিতীয় গোলের পরে পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।
পর্তুগাল ৩ : স্পেন ৩
ম্যাচটা শুরুর আগে টিভিতে ধারাভাষ্যকাররা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং সের্খিয়ো র্যামোসকে নিয়ে একটা পরিসংখ্যান দিচ্ছিলেন। তা হল, জাতীয় দলের জার্সি গায়ে কোনও দিন র্যামোসের বিরুদ্ধে গোল করতে পারেননি রোনাল্ডো। তাই রোনাল্ডো আজ কী করেন তা দেখার আগ্রহ নিয়েই বসেছিলাম।
র্যামোস এবং রোনাল্ডো দু’জনেই রিয়াল মাদ্রিদে খেলেন। শুক্রবার রাতে সোচিতে সেই র্যামোসদের বিরুদ্ধে পর্তুগাল অধিনায়ক মাঠ ছাড়লেন হ্যাটট্রিক করে। একেবারে শেষ মুহূর্তে হার বাঁচালেন পর্তুগালের। ইউরোপের ক্লাব ফুটবলে কে সেরা— মেসি না রোনাল্ডো? তা নিয়ে তর্ক চলেই আসছে গত কয়েক বছর ধরে। এ বার বিশ্বকাপেও হ্যাটট্রিক দিয়ে শুরু করে পরোক্ষে যেন সিআর সেভেন আরও একটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন তাঁর অন্যতম প্রতিপক্ষ লিয়োনেল মেসির দিকে। আর্জেন্তিনার জার্সি গায়ে যিনি মাঠে নামবেন শনিবারই।
রোনাল্ডোর জন্য তৈরি মঞ্চে স্পেনের হয়ে জোড়া গোল করে প্রায় নায়ক হয়ে গিয়েছিলেন দিয়েগো কোস্তা। কিন্তু ম্যাচ শেষ হওয়ার মাত্র চার মিনিট আগে রামধনুর মতো বাঁকানো ফ্রি-কিকে রোনাল্ডোর দর্শনীয় গোলের পরে দিয়েগো কোস্তাকে ছাপিয়ে দিনের নায়ক সেই ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোই।
প্রথমার্ধে রোনাল্ডো যখন মাঠ ছেড়ে ড্রেসিংরুমে যাচ্ছেন তখন এক বার টিভি ক্যামেরা ধরল ওঁর মুখটা। আত্মবিশ্বাসে ভরপুর রোনাল্ডো তখন হোয়াও মোতিনহো, বের্নার্দো সিলভাদের তাতাচ্ছেন। পিছিয়ে থেকে তখন ইনিয়েস্তাদের শরীরের ভাষা অনেকটা নুইয়ে পড়া।
উজ্জ্বল: জোড়া গোলের মালিক স্পেনের দিয়েগো কোস্তা।
বিরতির এই সময়টা যে কোনও পিছিয়ে থাকা কোচের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই পনেরো মিনিটেই ড্রেসিংরুমে বিপক্ষের দুর্বলতাগুলো নিজের ছেলেদের সামনে তুলে ধরে বোঝানো যায়, পরের পঁয়তাল্লিশ মিনিটে ঠিক কোন জায়গায় আক্রমণ শানাতে হবে। পরিবর্তন হয় রণকৌশলেও। স্পেন কোচ ফের্নান্দো ইয়েরোর কাজটা মোটেও সহজ ছিল না। একে কোচ বরখাস্ত নিয়ে বিতর্ক তাড়া করছে স্পেনকে। তার উপর রোনাল্ডোর পর্তুগাল ২-১ এগিয়ে।
এই পরিস্থিতিতে দ্বিতীয়ার্ধে দেখলাম, স্পেনের মাঝমাঠে যে ফাঁকফোঁকরগুলো তৈরি হচ্ছিল প্রথম ৪৫ মিনিটে, তা বুজিয়ে দিয়েছেন ইয়োরো। আসলে প্রথমার্ধে স্পেন একাধিক পাস খেলে আক্রমণে উঠে আসছিল। মাঝমাঠ বা বিপক্ষের রক্ষণে গিয়ে একাধিক পাস খেলে গোলের মুখ খোলার চেষ্টা করছিলেন ইনিয়েস্তা, ইস্কোরা। এর ফলে একটা সুবিধা হচ্ছিল পর্তুগালের। ফের্নান্দো স্যান্টোসের মাঝমাঠে হোয়াও মোতিনহো, উইলিয়াম কার্ভালহোরা বিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে তিন চারটে পাসে দ্রুত স্পেনের গোলে হানা দিচ্ছিলেন। বুস্কেৎস, কোকেরা নামতে সময় নেওয়ায় ফলে অনেকটা ফাঁকা জায়গা পাচ্ছিলেন রোনাল্ডোরা। এই সুযোগ কাজে লাগিয়েই ম্যাচের শুরুতে স্পেন বক্সে হানা দিয়ে পেনাল্টি আদায় করে নেওয়া রোনাল্ডোর। পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে রোনাল্ডোর দ্বিতীয় গোলের ক্ষেত্রে আমি স্পেন গোলকিপার দাভিদ দ্য হিয়াকে কাঠগড়ায় তুলব। রোনাল্ডোর গোলমুখী শট আটকাতে গিয়ে বলের কাছে হাত নিয়ে যাওয়ার আগে হাঁটু বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তবে রোনাল্ডো ওই স্বল্প সময়ে বলে পেয়েই যে রকম জোরালো শটটা নিয়েছিলেন সেটাই বলে দেয়, কেন রোনাল্ডো ম্যাজিক দেখতে গোটা বিশ্ব এত আকুল হয়ে ওঠে।
দিয়েগো কোস্তা এমনিতে বক্স স্ট্রাইকার। কাউন্টার অ্যাটাক স্ট্রাইকার নয়। ওঁর প্রথম গোল সেটাই বুঝিয়ে দেয়। আর দ্বিতীয় গোলটা ‘রি স্টার্ট মুভ’ থেকে। এটা অনুশীলনের সুফল। ২-২ হয়ে যাওয়ার পরে পেপে, জোস ফঁতা-দের রক্ষণ ম্যান মার্কিং বা জোনাল মার্কিং ঠিক হচ্ছিল না। সেই সুযোগেই নাচোর গোল।
বিশ্বকাপে আগামী এক মাসে আরও অনেক ভাল ম্যাচ হবে। কিন্তু পেন্ডুলামের মতো উত্তেজনায় দুলতে থাকা এই ম্যাচটা অন্যতম সেরা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।
ছবি: রয়টার্স।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy