শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে রবিবার ডাবল সেঞ্চুরি করে বিরাট কোহালি। ভারত অধিনায়ক ভেঙে দিলেন ব্র্যাডম্যান থেকে গাওস্করের রেকর্ড। ছবি: পিটিআই
টিভি-তে একটা জিনিস দেখতে দেখতে অবাক হয়ে যাচ্ছিলাম। ২১৩ করে বিরাট কোহালি যখন মাঠ ছেড়ে হেঁটে বেরিয়ে আসছে, মনে হচ্ছিল, ছেলেটা কি ২৬৭ বল খেলে এল? না কি এই ব্যাট করতে নামছে?
একটা ছোট্ট দৃশ্য। কিন্তু তাতেই ভারত অধিনায়কের মূল্যায়ন করে ফেলা যায়। বোঝা যায়, রানের খিদে, ফিটনেস, মানসিকতা, প্রতিভা, পরিশ্রম— এ সবেরই যোগফলের নাম হল বিরাট কোহালি।
রবিবার নাগপুরে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে কোহালি কেমন ব্যাট করল? এই প্রশ্নটা আমি এ দিন বেশ কয়েক বার শুনলাম। আমার উত্তরটা খুব সহজ। কোহালি ঠিক কোহালির মতোই ব্যাট করল। সোজা ব্যাটে খেলল। অফের বল অফে মারল। লেগের বল লেগে। কোনও ক্রস ব্যাট শট নেই। ওর এই ব্যাটিং যদি কোনও শিক্ষার্থী দেখে, তা হলে ভাববে, ও বাবা, ব্যাটিং করা তা হলে এত সোজা কাজ! এ তো সবাই পারে।
সবাই যে পারে না, তা বিভিন্ন পরিসংখ্যানই বুঝিয়ে দিচ্ছে। যার একটায় দেখলাম, রিকি পন্টিং আর গ্রেম স্মিথের অধিনায়ক হিসেবে এক বছরে করা সেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে কোহালি। এও দেখলাম কোহালির ‘কনভার্শন রেট’ এখন সবচেয়ে ভাল। ৭৫ শতাংশ। মানে হাফসেঞ্চুরি করলে সেটা একশোর মধ্যে পঁচাত্তর বারই সেঞ্চুরিতে বদলে ফেলে। এ ভাবে চললে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একশো সেঞ্চুরির মাইলস্টোন ও টপকে যেতেই পারে। এমনকী টেস্টেও সচিন তেন্ডুলকরের ৫১ সংখ্যাটার পিছনে ভালমতো তাড়া করতে পারে।
শনিবারই অ্যাশেজে সেঞ্চুরি পেল স্টিভ স্মিথ। যাকে এই মুহূর্তে শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যানের লড়াইয়ে কোহালির সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে। পন্টিং দেখলাম, স্মিথকে নিয়ে একটা কথা বলেছে। বলেছে, ক্রিকেটের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হয়ে উঠবে স্মিথ। এমনকী তাঁর ৪১ টেস্ট সেঞ্চুরিও টপতে যেতে পারে বর্তমান অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক, বলে মনে করেন পন্টিং।
স্মিথের ওই ইনিংসটা মাথায় রেখে আমি একটা রেটিং করতে চাই বর্তমান ব্যাটসম্যানদের। সেটা এ রকম হবে: ১) বিরাট কোহালি ২) জো রুট ৩) স্টিভ স্মিথ ৪) কেন উইলিয়ামসন। কেন কোহালি এক নম্বরে? খুব সহজ। সব রকম ফর্ম্যাটেই কোহালি দুর্দান্ত খেলছে। কোহালির ফিটনেসের মান এদের চেয়ে অনেক ভাল। যার মানে হল, কোহালি এদের চেয়ে অনেক বেশি সময় খেলতে পারার ক্ষমতা ধরে। কোহালি একবার সেট হয়ে গেলে বড় রান করবে। প্লাস অবশ্যই ওর ব্যাটিং দক্ষতা। উইকেটের সব দিকে সহজাত স্ট্রোক খেলার ক্ষমতা আছে কোহালির।
কোহালির ‘কনভার্শন রেট’ এত ভাল বলেই টেস্টে ১৯টা এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫১টা সেঞ্চুরি হয়ে গেল ওর। নেপোলিয়ান বোনাপার্ট যেমন বলেছিলেন, ‘‘আমার অভিধানে অসম্ভব শব্দটা নেই,’’ তেমন কোহালিও বলতে পারে, ‘‘আমার অভিধান থেকে নার্ভাস নাইনটি শব্দটা উঠে গিয়েছে।’’ কোহালির ব্যাটিং দেখলে বোঝা যায়, পরিস্থিতি অনুযায়ী ও খেলাটাকে কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। তাই নব্বইয়ের ঘরে এসেও প্রয়োজনে বড় শট খেলতে দ্বিধা করে না। নার্ভাসনেসের কোনও প্রশ্নই সেখানে নেই।
রবিবার নাগপুরে শ্রীলঙ্কার বোলিংকে নিয়ে ছেলেখেলা করার ফাঁকে কোহালির কাছ থেকে কিন্তু একটাও অক্রিকেটীয় শট পাইনি। স্লো পিচেও প্রয়োজনে দ্রুত রান তুলেছে, ডাবল সেঞ্চুরি করার পথে স্ট্রাইক রেট ছিল আশি ছুঁইছুঁই। এই পিচে দারুণ কৃতিত্বের। সব মাপা শট। ব্যাটের মুখটা সোজা রেখে খেলা। এমনকী মিডল স্টাম্প থেকে অন সাইডে মারা শটগুলোর সময়ও কনট্যাক্ট পয়েন্টে ব্যাটের মুখ সোজা ছিল।
শ্রীলঙ্কা পিছিয়ে ৩৮৪ রানে। হাতে নয় উইকেট। আজ, সোমবারই হয়তো ম্যাচের ফয়সালা হয়ে যাবে। কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা, দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে বোনাস একটা অস্ত্রও পেয়ে গেল কোহালি। রোহিত শর্মা। চার বছর পরে টেস্ট সেঞ্চুরি রোহিতের। ১৬০ বলে ১০২ করল। পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলা। আর এল ভারতের গুরুত্বপূর্ণ দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে। রোহিতের প্রতিভা নিয়ে কোনও সময়ই কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু টেস্টে ও কিছুতেই সফল হতে পারছিল না। যাই হোক, আশা করব, এই টেস্ট সেঞ্চুরিটা রোহিতের ‘মেন্টাল ব্লক’টা দূর করবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা পেস আক্রমণের বিরুদ্ধে ভারত ছ’জন ব্যাটসম্যান খেলানোর কথা ভাবতেই পারে। সে ক্ষেত্রে ছ’নম্বরে নিশ্চিত ভাবে রোহিতই আসবে। কিন্তু যদি পাঁচ ব্যাটসম্যান খেলানোর অঙ্ক থাকে, তা হলে আমি কিন্তু এখনও রোহিতের জায়গায় অজিঙ্ক রাহানে-কে খেলানোর পক্ষপাতী। কারণ, টেকনিক্যালি ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের নাম অজিঙ্ক রাহানে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy