উইম্বলডন হাতে তোলার পর সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি - টুইটার
লন্ডন হিথরো থেকে নিউ জার্সির উড়ান ধরার তাড়া ছিল। তারই মধ্যে অজস্র ফোনকল বালকবীরের মোবাইলে। প্রায় সময়েই ফোন ব্যস্ত। শেষপর্যন্ত সফরসঙ্গী কাকা কণাদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মোবাইলে ভারতীয় সময় সোমবার দুপুরের আগে আনন্দবাজার অনলাইন ধরতে পারল সদ্য জুনিয়র উইম্বল্ডন জয়ী সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
ছোটবেলায় বাবা কুণাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে অনেক বার কলকাতা এসেছে সমীর। দক্ষিণ কলকাতায় লেক গার্ডেন্সের কাছে বাড়ি। কলকাতায় টেনিসের অন্যতম ‘তীর্থক্ষেত্র’ সাউথ ক্লাব এবং দক্ষিণ কলকাতা সাংসদ (ডিকেএস) ঘুরে দেখেছে। গত বছরও আইটিএফ জুনিয়র্স খেলার জন্য দিল্লি এবং কলকাতায় আসার কথা ছিল। কিন্তু কোভিডের জন্য অন্যান্য অনেক টুর্নামেন্টের মতোই ওই প্রতিযোগিতাও বাতিল হয়ে যায়। তবে করোনা অতিমারির দাপট কমলে ফের একবার কলকাতায় আসতে চায় সমীর।
রবিবার জুনিয়র উইম্বলডন জয়ের আগে তো বটেই, জয়ের পর সমীরের বাঙালি পরিচয় বহুবিশ্রুত। হোয়াট্সঅ্যাপ কল-এ সতেরো বছরের গলায় এখনও উচ্ছ্বাস। সঙ্গে ‘ফ্রেন্ড, ফিলোজফার, গাইড’ ছোট কাকা কণাদ। ঘাসের কোর্টে চ্যাম্পিয়নের ট্রফি জিতে উল্লসিত সমীর। কিন্তু আবেগতাড়িত অন্য কারণে— রবিবার একইদিনে তার ‘আদর্শ’ নোভাক জোকোভিচ ষষ্ঠ বার উইম্বলডন জিতে ২০টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালিক হয়েছেন। ছুঁয়েছেন রজার ফেডেরার এবং রাফায়েল নাদালকে।
A future men's champion?
— Wimbledon (@Wimbledon) July 11, 2021
Samir Banerjee might well be a name you become more familiar with in the future#Wimbledon pic.twitter.com/byAEBwBrSp
জোকোভিচ নিয়েই শুরু হল কথা। স্বপ্নের নায়কের শেষ ম্যাচ যেন এখনও চোখে লেগে আছে। সমীর বলছিল, “ওই ফাইনাল ম্যাচটা যে কোনও খেলোয়াড়ের কাছে শিক্ষা। প্রথম সেট হেরে গিয়েও জোকোভিচ অনায়াসে কামব্যাক করলেন। একটা মানুষ ছন্দ ও আত্মবিশ্বাসের কতখানি তুঙ্গে থাকলে এত বড় মঞ্চে এমন দাপট দেখাতে পারেন! তবে খেলাটা দেখলেও একটা আফসোস থেকেই গেল। ওঁর সঙ্গে দেখা করতে পারলাম না। সেই ইচ্ছেটা ভবিষ্যতে মিটিয়ে নিতে চাই।”
কেন জোকোভিচের সঙ্গে দেখা করতে চায় বঙ্গসন্তান সমীর? টেনিসের গুণ রপ্ত করার জন্য? তা নয়। সমীরের ইচ্ছে অন্য, “আমার মতো উঠতি টেনিস খেলোয়াড় চাইলেই জোকোভিচের মতো খেলতে পারবে না। তবে ওঁর মতো মানুষ হতে চাই। কোর্ট এবং কোর্টের বাইরে ওঁর জীবনযাপন, দুঃস্থ মানুষদের জন্য এগিয়ে আসা এগুলো আমাকে ভাবায়। কোনও দিন দেখা হলে ওঁর সঙ্গে এই বিষয়গুলো নিয়েও কথা বলব।”
১৯৯০ সালের পর ২০২১। দীর্ঘ ৩১ বছরের ব্যবধান। ১৯৯০ সালে এই ঘাসের কোর্টেই জুনিয়র উইম্বলডন জিতেছিলেন কলকাতার বাসিন্দা লিয়েন্ডার পেজ। ৩১ বছর পর সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাল আরেক বঙ্গসন্তান। সামনে লম্বা পথ। অনেক বাধা আসবে। সমীর জানে। সম্ভবত তা-ই বলছিল, “পেশাদার সার্কিটে লিয়েন্ডার সাফল্য পাওয়ার জন্য কত লড়াই ও পরিশ্রম করেছেন সেটা বড়দের মুখ থেকে শুনেছি। বই পড়েও জেনেছি। কিন্তু এখানেও সেই জোকোভিচের কথাই বলব। আসলে লিয়েন্ডার, জোকোভিচের মতো বিশ্ব টেনিসে দাপিয়ে খেলতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হবে। অনেক কষ্টও সহ্য করতে হবে। আমি ওঁদের অনুসরণ করে এগোতে চাই ঠিকই। তবে জানি যে, সেটা খুব সহজ নয়।”
Remember the name - Samir Banerjee
— Wimbledon (@Wimbledon) July 11, 2021
The American wins his first junior Grand Slam singles title by beating Victor Lilov in the boys' singles final#Wimbledon pic.twitter.com/Xc3ueczg5m
নিউ জার্সির বাড়িতে কৃতী সমীরের অপেক্ষায় বাবা-মা-দিদি। সতেরোর সমীরেরও অপেক্ষা উইম্বলডনের মহার্ঘ্য ট্রফি কাছের মানুষদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু এর পর কীভাবে এগোবে তার টেনিস কেরিয়ার? সমীরের অকপট জবাব, “পড়াশোনার সঙ্গেই টেনিসচর্চা চলতে থাকবে। পড়াশোনাকে আগে গুরুত্ব দিয়ে ইউএস ওপেনের জন্য নিজেকে তৈরি করতে চাই। তা ছাড়া জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতা তো আছেই। তবে যা-ই করি, তাড়াহুড়ো করতে চাই না।”
পছন্দের বিষয় অঙ্ক। তবে কয়েক বছর ধরে মহাকাশ বিজ্ঞানের প্রতিও ঝোঁক বেড়েছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের। তা নিয়ে অবশ্য বাড়ির কর্তা কুণালের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু বাবার কাছে কি সতেরোর বালক বকাঝকা খায় না? হাসতে হাসতে সমীরের জবাব, “গত বছর লকডাউনের সময় থেকে ওয়েব সিরিজ দেখার ঝোঁক বেড়ে গিয়েছে। মারপিটের সিনেমা আর ওয়েব সিরিজের নেশা হয়ে গিয়েছিল। আসলে সেই সময়টায় বড্ড একঘেয়ে লাগত। তাই পড়াশুনো আর অনুশীলনের পর মোবাইল, ল্যাপটপ নিয়েই থাকতাম। সে জন্য অনেক বকুনি খেয়েছি। তবে বাবা-মা এখনও পর্যন্ত গায়ে হাত তোলেননি।”
উড়ানের সময় হয়ে আসছিল। হিথরো থেকে প্রায় ১৪ ঘণ্টার উড়ান। ফোন ছেড়ে জুনিয়র উইম্বলডনের ট্রফি নিয়ে টার্মিনালে ঢুকে পড়ল বাঙালি বালকবীর সমীর বন্দ্যোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy