Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
wimbledon 2021

Ons Jabeur: ওন্স জাবেউরের হাত ধরেই মহিলাদের টেনিসে এখন ‘আরব বসন্ত’

শুক্রবার উইম্বলডনে গারবাইন মুগুরুজার বিরুদ্ধে খেলা চলাকালীনই কোর্টের ধারে গিয়ে নাগাড়ে বমি করছিলেন জাবেউর। পরে জানা যায়, পেটের সমস্যার কারণে এই কাণ্ড।

ওন্স জাবেউর।

ওন্স জাবেউর। ফাইল ছবি

অভীক রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ জুলাই ২০২১ ১৮:১৭
Share: Save:

২০১১ বছরটা সম্ভবত ভুলতে পারবেন না ওন্স জাবেউর। প্রথম বার কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যাম ট্রফিতে হাত রেখেছিলেন তিনি। হোক না জুনিয়র গ্র্যান্ড স্ল্যাম, মাহাত্ম্য তো তারও কম নয়।

তাঁর দেশ টিউনিশিয়ার কাছেও ২০১১ বছরটা তাৎপর্য্যপূর্ণ। কারণ টিউনিশিয়া থেকেই শুরু হয়েছিল শাসকের বিরুদ্ধে বিপ্লব, গোটা দুনিয়ার কাছে যা পরিচিত ‘আরব স্প্রিং’ নামে। নানা উত্থান-পতনের মধ্যে আরব বসন্ত শেষ হয়েছে ঠিকই, কিন্তু জাবেউরের জীবনে বসন্ত এখনও শেষ হয়নি। টেনিস র‌্যাকেটের সাহায্যে কোর্টে একের পর এক ফুল ফোটাচ্ছেন তিনি। এই বিপ্লব কিন্তু এখনই থামার নয়।

শুক্রবার উইম্বলডনে গারবাইন মুগুরুজার বিরুদ্ধে খেলা চলাকালীনই কোর্টের ধারে গিয়ে নাগাড়ে বমি করছিলেন জাবেউর। পরে জানা যায়, পেটের সমস্যার কারণে এই কাণ্ড। কিন্তু এই ঘটনা ম্যাচ থেকে তাঁর লক্ষ্য একফোঁটাও সরায়নি। আরবের প্রথম মহিলা হিসেবে উইম্বলডনের চতুর্থ রাউন্ডে উঠে গেলেন তিনি।

এমন দেশ থেকে এসেছেন জাবেউর, যেখানে এখনও মহিলাদের ছোট পোশাক পরা নিষেধ। কিন্তু প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করা ছোটবেলা থেকেই তাঁর স্বভাব। তাই কোনও চোখরাঙানি তাঁর এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।

পরিবারে সবার থেকে ছোট জাবেউর। তাঁর উপরে দুই দাদা এবং এক দিদি রয়েছেন। মাত্র তিন বছর থেকে টেনিসে হাতেখড়ি। সেটাও মায়ের ইচ্ছাতেই। মেয়ে টেনিস খেলোয়াড় হোক এটা শুরু থেকেই চেয়েছিলাম রিধা জাবেউর। তিনি নিজেও শখের টেনিস খেলোয়াড় ছিলেন।

তেরো বছর পর্যন্ত স্থানীয় স্তরে কোচ নাবিল ম্লিকার অধীনে টেনিস শিখেছেন জাবেউর। কিন্তু উন্নতি করতে গেলে দরকার ছিল উন্নত পরিকাঠামোরও। ফলে মা রিধা তাঁকে নিয়ে চলে আসেন রাজধানী টিউনিসে। জাতীয় ক্রীড়া বিদ্যালয়ে ভর্তি হন তিনি।

ততদিনে জাবেউরের প্রতিভার বিকাশ ঘটতে শুরু করেছে। বেলজিয়াম এবং ফ্রান্সের মতো দেশে খেলার ডাক পাচ্ছেন। কিন্তু নিজের দেশ ছেড়ে যেতে রাজি হননি জাবেউর। এক সাক্ষাৎকারে জাবেউর বলেছিলেন, “আমার পরিবার অনেক কিছু ত্যাগ করেছে আমাদের জন্য। মা গোটা দেশে আমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় খেলাবেন বলে। বিশেষ স্কুলে আমাকে পড়তে পাঠিয়েছিলেন। সাফল্য নিশ্চিত ছিল না। তা সত্ত্বেও ওঁদের এই আত্মত্যাগ ভোলার নয়। আমার উপর বিশ্বাস রেখেছিলেন ওঁরা।”

১৩ বছর বয়সে ২০০৭ থেকে জুনিয়র সার্কিটে খেলা শুরু। ধাপে ধাপে উন্নতি। প্রথম জুনিয়র সার্কিটে দাপিয়েছেন। এরপর ধীরে ধীরে বড়দের টেনিসে ঢুকে পড়েন। ২০১৭-তেই মহিলাদের টেনিসে প্রথম একশোতে ঢুকে পড়েছিলেন জাবেউর। পরের বছর প্রথম একশো থেকে বেরিয়েও যান।

জাবেউরের জীবনে এখনও পর্যন্ত সব থেকে কঠিন প্রতিযোগিতা হয়তো ২০২০-র অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। প্রথম দুই রাউন্ডে জোহানা কন্টা এবং ক্যারোলিন গার্সিয়াকে হারানোর পর তৃতীয় রাউন্ডে হারান বিশ্বের প্রাক্তন এক নম্বর ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকে। সেটাই ছিল ওজনিয়াকির পেশাদার টেনিসের শেষ ম্যাচ। এরপর ওয়াং কিয়াংকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ইতিহাস তৈরি করেন। আরবের প্রথম মহিলা হিসেবে কোনও গ্র্যান্ড স্ল্যামের কোয়ার্টারে ওঠেন।

গত বছর ফরাসি ওপেন এবং ইউ ওপেন, দু’টি প্রতিযোগিতাতেই তৃতীয় রাউন্ডে পৌঁছেছিলেন। এবারও ফরাসি ওপেনের চতুর্থ রাউন্ডে উঠেছিলেন তিনি। উইম্বলডনে আসার আগেই বার্মিংহ্যাম ক্লাসিক জিতে আরবের প্রথম মহিলা হিসেবে কোনও ডব্লিউটিএ খেতাব জয়ের নজির গড়েছেন।

উইম্বলডনেও দ্বিতীয় রাউন্ডে ভিনাস উইলিয়ামসকে হারিয়েছেন। তৃতীয় রাউন্ডে মুগুরুজাকে হারানো তাঁর মুকুটে নতুন পালক।

চার বছর আগেই প্রাক্তন ফেন্সার করিম কামুনকে বিয়ে করেছেন জাবেউর, যিনি আদতে রাশিয়ার হলেও বর্তমানে টিউনিশিয়ার নাগরিক। স্বামীই জাবেউরের ব্যক্তিগত ট্রেনার হিসেবে কাজ করেন।

অবসর সময়ে ফুটবল খেলেন। রিয়াল মাদ্রিদের অন্ধ ভক্ত। ভালবাসেন সাইকেলে ঘুরতে। তাঁর ইনস্টাগ্রামে একাধিক ছবি পাওয়া যাবে। টেনিসে আদর্শ মানেন অ্যান্ডি রডিককে। লকডাউনের সময় নিজেকে ফিট রাখতে বাড়িতেই নাচের অনুশীলন চালিয়েছেন, যা অন্যতম সেরা পছন্দের কাজ।

জাবেউরের এখন একটাই স্বপ্ন। তাঁকে দেখে যেন এবার আরবের খুদে টেনিস খেলোয়াড়রা অনুপ্রাণিত হয়। টিউনিশিয়া, মরক্কো, আলজেরিয়া থেকে আরও আরও প্রতিভা উঠে আসুক, এটাই চান তিনি।

জাবেউরের সামনে এখন একের পর এক নজির গড়ার সুযোগ। তাঁর হাত ধরেই এখন মহিলাদের টেনিসে ‘আরব বসন্ত’।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE