শিরোনামে: স্ত্রী ইয়েলেনা ও সন্তানদের নিয়ে নোভাক। সার্বিয়ার তারকাকে নিয়ে উত্তাল টেনিসবিশ্ব। ছবি ইনস্টাগ্রাম।
অস্ট্রেলীয় ওপেন খেলতে গিয়ে নজিরবিহীন ভাবে আটকে পড়া নোভাক জোকোভিচ অবশেষে মুখ খুললেন। সারা বিশ্বে তাঁর ভক্তদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সার্বিয়ার টেনিস তারকা ইনস্টাগ্রামে বিবৃতি দিয়েছেন। তাতে লিখেছেন, ‘‘আমি আপনাদের প্রত্যেকের সমর্থন অনুভব করতে পারছি। সকলকে ধন্যবাদ দিতে চাই।’’
মুখ খুলেছেন জোকোভিচের স্ত্রী ইয়েলেনাও। শুক্রবার সমুদ্রসৈকতে স্বামীর সঙ্গে সময় কাটানোর ছবি ইনস্টাগ্রামে তুলে দিয়ে তিনি কোভিডের এই কঠিন সময়ে সকলের সুস্থতা কামনা করে লিখেছেন, ‘‘আশার কথা এটাই যে, আমরা অন্তত সুস্থ আছি। এই অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিখছি, এই ঘটনা আমাদের পরিণত করে তুলছে।’’
লেখার পরের অংশ খুবই অর্থবহ, ‘‘পৃথিবীর যে কোনও সীমান্তে একমাত্র আইন যাকে আমাদের সকলের শ্রদ্ধা করা উচিত, তা হচ্ছে, মানুষের প্রতি ভালবাসা এবং সম্মান দেখানো।’’ নোভাকের সমর্থকদের উদ্দেশে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাঁর পত্নী আরও লিখেছেন, ‘‘সারা পৃথিবীর অসংখ্য মানুষকে ধন্যবাদ জানাই আমার স্বামীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য। ভালবাসা এবং সম্মান প্রদর্শন কখনও ভুল হতে পারে না, বরং সকল মানুষের জন্য শক্তির উৎস।’’ সন্দেহ নেই, ইয়েলেনার কটাক্ষ অস্ট্রেলীয় সরকার, মন্ত্রী, কর্তাদের দিকেই।
সার্বিয়ায় সাংবাদিক সম্মেলন করে জোকোভিচের বাবা গুরুতর অভিযোগ করেছিলেন যে, তাঁর ছেলেকে বন্দি করে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া। তাঁকে সব সময় পাহারা দিচ্ছে সশস্ত্র রক্ষীরা। একটা ঘরে আটকে রাখা হয়েছে। শুক্রবার যার জবাব দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কারেন অ্যান্ড্রিউস। তিনি বলেছেন, ‘‘মিস্টার জোকোভিচকে কেউ বন্দি করে রাখেনি। তিনি যে কোনও সময় অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে চলে যেতে পারেন। সীমান্তরক্ষী, কর্তা, কর্মীরা তাঁকে চলে যেতে সাহায্যই করবে।’’ চেক প্রজাতন্ত্রের মহিলা টেনিস খেলোয়াড় রেনাতা ভোরাকোভাকেও একই ভাবে আটকে দিয়েছে অস্ট্রেলীয় সীমান্ত বিভাগ। তাঁর ক্ষেত্রেও বিশেষ ছাড় ফিরিয়ে নেওয়া হতে পারে। জোকোভিচের মতো তাঁকেও ডিটেনশন বিভাগের অধীনে রাখা হয়েছে, তবে অস্ট্রেলীয় কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে, রেনাতা অস্ট্রেলিয়া ছেড়ে চলে যেতে চান। জোকোভিচ যা না করে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছেন এবং অস্ট্রেলীয় সরকারের এই রায়কে চ্যালেঞ্জই করছেন।
টেনিস তারকাকে নিয়ে তৈরি হওয়া নজিরবিহীন পরিস্থিতির প্রধান কারণ, তিনি প্রতিষেধক নেবেন না বলে জানিয়েছেন। তবু তাঁকে খেলতে আসতে দেওয়া হয়েছে বিশেষ মেডিক্যাল ছাড় মঞ্জুর করে। সেই ছাড় কী ভাবে দেওয়া হল, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। অস্ট্রেলিয়ায় কোভিড বিধি নিয়ে প্রচণ্ড কড়াকড়ি। দেশের অনেক মানুষ, তাঁদের আত্মীয়রা ফিরতে পারেননি প্রতিষেধক নেননি বলে। সেখানে টেনিস তারকা বলে জোকোভিচকে বিশেষ ছাড় দেওয়া হচ্ছে কেন, তা নিয়ে অস্ট্রেলীয়
জনতা ক্ষিপ্ত।
অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন বলে দিয়েছেন, ‘‘নিয়ম হচ্ছে নিয়ম। কাউকে আলাদা সুবিধা দেওয়া হবে না।’’ আবার সার্বিয়ার রাষ্ট্রপতি অভিযোগ করেছেন, তাঁদের দেশের সেরা খেলোয়াড়কে হেনস্থা করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিজেই প্রবল চাপে রয়েছেন বাড়তে থাকা কোভিড সংক্রমণ নিয়ে। অস্ট্রেলিয়ায় এখন দৈনিক ৭০,০০০ করোনা সংক্রমণ হচ্ছে। মরিসনের পার্টি আর ভিক্টোরিয়া সরকার রাজনৈতিক মঞ্চে যুযুধান দুই পক্ষ। তার ছাপও জোকোভিচের ঘটনায় পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ভিক্টোরিয়ার অধীনেই মেলবোর্ন, যেখানে অস্ট্রেলীয় ওপেন হয়। তারা চেয়েছিল জোকোভিচের মতো তারকা খেলুন। মরিসন সরকার আবার চায় না, তারকার জন্য নিয়মের সঙ্গে আপস করা হোক।
বিতর্কে যোগ দিয়ে রাফায়েল নাদাল কার্যত সমালোচনাই করেছেন জোকোভিচের প্রতিষেধক না নেওয়ার সিদ্ধান্তকে। নাদাল বলেছেন, তিনি ডাক্তারি উপদেশ মেনে দু’টো প্রতিষেধক নিয়েছেন। জোকোভিচও তা করলে এত বিতর্ক হয়ই না। ‘‘সারা পৃথিবীতে মানুষ কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কথা না শোনার সময় এটা নয়,’’ প্রতিদ্বন্দ্বীর দিকে তোপ রাফার। এ দিন আবার তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন অস্ট্রেলীয় টেনিসের বিতর্কিত তারকা নিক কিরিয়স। বলেছেন, ‘‘আমি নিজে প্রতিষেধক নিয়েছি অন্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা ভেবে, আমার মায়ের কথা ভেবে। তবু বলব, নোভাককে নিয়ে যা চলছে, খুব বাজে। আমাদের খেলার এক জন চ্যাম্পিয়ন ও। কিন্তু দিনের শেষে এক জন মানুষও। অনেক ভাল ব্যবহার ওর প্রাপ্য।’’ জন ইসনারও বলেছেন, ‘‘জোকোভিচের সঙ্গে যা হচ্ছে, তা ওর প্রাপ্য নয়। এটা একটা লজ্জা।’’ মেলবোর্নে জোকোভিচের ভক্তরাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাঁদেরই দেশের এমন আচরণ নিয়ে।
অস্ট্রেলীয় ওপেন খেলতে এবং রেকর্ড ২১তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের লক্ষ্যে গত বুধবার রাতে মেলবোর্ন বিমানবন্দরে নামেন নোভাক। কিন্তু সীমান্তের অফিসারেরা তাঁকে অস্ট্রেলিয়ায় ঢুকতে দেয়নি মেডিক্যাল ছাড় নিয়ে বিভ্রান্তির কথা তুলে। ডিটেনশন সেন্টারে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয়। এখনও তিনি ডিটেনশন বিভাগের অধীনে একটি হোটেলে আছেন। তাঁর আইনজীবীরা আদালতে আবেদন জানালেও সোমবারের আগে শুনানি হবে না।
ফরাসি ওপেনে স্বাগত
প্রতিষেধক না নেওয়া থাকলেও ফরাসি ওপেনে জোকোভিচকে খেলতে দেওয়া হবে। ফরাসি ক্রীড়ামন্ত্রী শুক্রবার এমনই ঘোষণা করে দিলেন। মেলবোর্নে আটকে পড়া জোকোভিচকে নিয়ে উত্তাল ক্রীড়াবিশ্ব। তার মধ্যে ফরাসি ওপেনের এমন ঘোষণা টেনিস তারকাকে স্বস্তি দেওয়ার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়ার উপর চাপ তৈরি করবে। জোকোভিচের ঘটনা যে আর শুধু ক্রীড়া ক্ষেত্রে আটকে নেই, বিশ্বের রাজনীতির অঙ্গ হয়ে উঠেছে, ফরাসি ক্রীড়ামন্ত্রীর বিবৃতি দেওয়া তার প্রমাণ। ফরাসি ক্রীড়ামন্ত্রী রোক্সানা মারাচিনানু জানিয়েছেন, ফরাসি ওপেন উপলক্ষে টেনিস তারকাকে বিশেষ ছাড় দিতে তৈরি ফ্রান্স। বলেছেন, ‘‘বিশেষ প্রতিযোগিতার জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যবিধির ব্যবস্থাও আছে। তার হাত ধরে ফ্রান্সে আসতে পারবেন জোকোভিচ।’’ তিনি যোগ করেন, ‘‘ফ্রান্সে এখন অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে প্রবেশ নিয়ে অত কড়াকড়ি আর নেই। প্রতিষেধক না নিয়েও কোনও খেলোয়াড় এখানে প্রতিযোগিতায় নামতে পারেন। এ দেশের এখনকার নিয়মে তা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই।’’ ফরাসি ওপেন মে মাসে হবে। ক্রীড়ামন্ত্রী আশা করছেন, তত দিনে করোনার প্রকোপ কমে যাবে এবং এ নিয়ে আলোচনারই দরকার পড়বে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy