জুটি: দ্রুততম ১০ হাজার রানের নজির অধিনায়ক বিরাট কোহালির। অভিনন্দন মহেন্দ্র সিংহ ধোনির। বুধবার বিশাখাপত্তনমে। পিটিআই
ম্যাচের সেরা বিরাট কোহালি
সালটা আমার ঠিক মনে নেই। রঞ্জি ট্রফিতে সে বার দারুণ ফর্মে অরুণ লাল। পর পর তিনটে ম্যাচে বড় রান করেছে। পরের ম্যাচ মুম্বইয়ের সঙ্গে। আমি তখন বাংলার অধিনায়ক। আমার শুধু ভয় করছিল, অরুণ ‘ল অফ অ্যাভারেজ’-এর শিকার না হয়।
ক্রিকেটে ‘ল অফ অ্যাভারেজ’ খুব ভয়ের কথা। পর পর কয়েকটা ইনিংসে কেউ ভাল খেললে আশঙ্কা শুরু হয়, এর পরে সে ব্যর্থ হবে না তো?
অতীতে ডন ব্র্যাডম্যান আর এখন বিরাট কোহালি এই ‘ল অফ অ্যাভারেজ’ শব্দটিকেই যেন উঠিয়ে দিয়েছেন ক্রিকেট থেকে। মাত্র ২০৫ ইনিংসে ওয়ান ডে ক্রিকেটে দশ হাজার রান করে ফেললেন কোহালি! সচিন তেন্ডুলকরের চেয়ে ৫৪টা ইনিংস কম খেলে। এ যেন ইউসেইন বোল্টকে কেউ দু’সেকেন্ডের বেশি সময়ে একশো মিটারে হারালেন! সঙ্গে যোগ করুন, ২১৩ ওয়ান ডে-তে ৩৭টি সেঞ্চুরি। এ সব পরিসংখ্যান কোনও ক্রিকেটারের নামের পাশে বসতে পারে, কোনও দিন মাথায় আসেনি। বুধবার কোহালি করে গেলেন ১২৯ বলে অপরাজিত ১৫৭।
তবে কোহালির মঞ্চে প্রায় নায়ক হয়ে গেলেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ব্যাটসম্যান। শিমরন হেটমায়ার (৬৪ বলে ৯৪) এবং শেই হোপ (অপরাজিত ১২৩)। দ্বিতীয় ওয়ান ডে-তে ৩২১ রান তাড়া করে প্রায় জয়ের সামনে এসে পড়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। কিন্তু শেষ তিন-চার ওভারে ভারতীয় বোলাররা আঁটসাঁট বল করায় আটকে যান ক্যারিবিয়ানরা। শেষ দুই ওভারে দরকার ছিল ২০। ৪৯তম ওভারে মহম্মদ শামি কোনও বড় শটই মারতে দেননি। হয় মাত্র ৬ রান। উমেশ যাদবের শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৪। শেষ বলে ৫। চার মেরে ম্যাচ টাই করে দেন হোপ।
দুরন্ত: ১৩৪ বলে অপরাজিত ১২৩ রান হোপের। এএফপি
গোটা ক্রিকেট দুনিয়া এই ম্যাচটার দিকে তাকিয়ে ছিল ইতিহাসের সাক্ষী থাকবে বলে। ইতিহাসের পাশাপাশি ক্রিকেট রোমাঞ্চেরও পূর্ণ স্বাদ পেয়ে গেল সবাই। কোহালির ব্যাটিং নিয়ে কিছু বলার আগে ওঁর ফিটনেস নিয়ে দু’একটা কথা বলতে চাই। ফিটনেসকে কোহালি যে পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন, তার চেয়ে উচ্চমান আর কিছু হতে পারে বলে মনে হয় না। এ রকম ফিটনেস থেকেই আত্মবিশ্বাস বাড়ে, ফোকাস বাড়ে, মনঃসংযোগ বাড়ে। বিশাখাপত্তনমের ওই মারাত্মক গরমে কোহালি যে ভাবে খুচরো রান নেওয়ার জন্য দৌড়লেন, তা প্রত্যেক তরুণ ক্রিকেটারের কাছে শিক্ষণীয়। নব্বইয়ের ঘরে যখন ব্যাট করছেন, মনে হচ্ছিল সবে নেমেছেন।
কোহালিকে দেখে আরও মনে হচ্ছে, ‘বিশ্বকাপ মোড’-এ এখনই চলে এসেছেন। দলকেও সেই রাস্তায় হাঁটাতে চাইছেন। অম্বাতি রায়ডুর (৮০ বলে ৭৩) এ দিনের ইনিংস অধিনায়ককে কিছুটা স্বস্তি দেবে। যুবরাজ সিংহ বাদ পড়ার পর থেকে বছর দেড়েকের মধ্যে ভারত প্রচুর ব্যাটসম্যানকে চার নম্বরে খেলিয়েছে। বিশ্বকাপের মাস আটেক আগে রায়ডুকে দেখে মনে হচ্ছে, এই সমস্যা হয়তো মিটতে চলেছে।
তবে দুই ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যান কিন্তু ভারত অধিনায়কের চিন্তা বাড়িয়ে রাখলেন। যশপ্রীত বুমরা, ভুবনেশ্বর কুমার না থাকায় পেস আক্রমণের চেহারাটা পরিষ্কার করে দিলেন। শামি একটা ওভার ছাড়া সে রকম দাগ কাটতে পারেননি। উমেশও সে রকমই। শেষ ওভারে উমেশের বোলিং দেখে হতাশই হলাম। স্লোয়ার দেখলামই না।
ভারত কেন আগে ব্যাট করল, বুঝলাম না। ওখানে রাতে শিশির পড়ে। স্পিনারদের বল গ্রিপ করতে সমস্যা হয়েছে। হেটমায়ারের ভয়ঙ্কর পাওয়ার হিটিংয়ের সামনে ভারতীয় বোলারদের অসহায় লেগেছে। এই ছেলেটা কিন্তু আইপিএল নিলামে নিজের দর ভাল মতো বাড়িয়ে রাখলেন। তার ওপর দেখলাম, হেটমায়ারকে ওঁর পছন্দের মিডঅন-মিডউইকেট অঞ্চলে খেলতে দেওয়া হল। রবীন্দ্র জাডেজা এবং যুজবেন্দ্র চহালকে ‘উইথ দ্য স্পিন’ মেরে দিলেন বাঁ হাতি হেটমায়ার। অন্য দিকে হোপকে অনেক জমাট দেখাল। নিখুঁত কপিবুক ক্রিকেটার যাঁকে বলে।
অধিনায়ক ‘বিশ্বকাপ মোড’-এ চলে এসেছেন। বাকিদেরও তাড়াতাড়ি আসতে হবে।
স্কোরকার্ড
ভারত ৩২১-৬ (৫০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৩২১-৭ (৫০)
ভারত
রোহিত ক হেটমায়ার বো রোচ ৪ • ৮
ধওয়ন এলবিডব্লিউ বো নার্স ২৯•৩০
বিরাট কোহালি ন. আ. ১৫৭ • ১২৯
অম্বাতি রায়ডু বো নার্স ৭৩•৮০
এম এস ধোনি বো ম্যাককয় ২০•২৫
ঋষভ এলবিডব্লিউ বো স্যামুয়েলস ১৭•১৩
জাডেজা ক পাওয়েল বো ম্যাককয় ১৩•১৪
মহম্মদ শামি ন. আ. ০•১
অতিরিক্ত ৮
মোট ৩২১-৬ (৫০)
পতন: ১-১৫ (রোহিত, ৩.১), ২-৪০ (ধওয়ন, ৮.৪), ৩-১৭৯ (রায়ডু, ৩২.২), ৪-২২২ (ধোনি, ৪০.২), ৫-২৪৮ (ঋষভ, ৪৩.৩), ৬-৩০৭ (জাডেজা, ৪৮.৫)।
বোলিং: জেসন হোল্ডার ৬-০-৫০-০, কেমার রোচ ১০-০-৬৭-১, অ্যাশলি নার্স ১০-০-৪৬-২, দেবেন্দ্র বিশু ১০-০-৪৮-০, ওবেদ ম্যাককয় ৯-০-৭১-২ মার্লন স্যামুয়েলস ৫-০-৩৬-১।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
পাওয়েল ক ঋষভ বো শামি ১৮ • ২০
চন্দ্রপল হেমরাজ বো কুলদীপ ৩২•২৪
শেই হোপ ন. আ. ১২৩ • ১৩৪
মার্লন স্যামুয়েলস বো কুলদীপ ১৩•১০
হেটমায়ার ক কোহালি বো চহাল ৯৪•৬৪
রভম্যান ক রোহিত বো কুলদীপ ১৮•১৮
হোল্ডার ক রান আউট রায়ডু ১২•২৩
অ্যাশলি নার্স ক রায়ডু উমেশ ৫•৭
কেমার রোচ ন. আ. ০•০
অতিরিক্ত ৬
মোট ৩২১-৭ (৫০)
পতন: ১-৩৬ (পাওয়েল, ৬.১), ২-৬৪ (হেমরাজ, ৯.৩), ৩-৭৮ (স্যামুয়েলস, ১১.৬), ৪-২২১ (হেটমায়ার, ৩১.৫), ৫-২৫৩ (পাওয়েল, ৩৭.৩), ৬-৩০০ (হোল্ডার, ৪৭.২), ৭-৩১৫ (নার্স, ৪৯.৪)।
বোলিং: মহম্মদ শামি ১০-০-৫৯-১, উমেশ যাদব ১০-০-৭৮-১, কুলদীপ যাদব ১০-০-৬৭-৩, রবীন্দ্র জাডেজা ১০-০-৪৯-০, যুজবেন্দ্র চহাল ১০-০-৬৩-১।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy