আগ্রাসী: পিচ নিয়ে অভিযোগ করতে নারাজ শাস্ত্রী। —ফাইল চিত্র।
বর্তমান ভারতীয় দল অভিযোগ করায় বিশ্বাস করে না বলে জানিয়ে দিলেন রবি শাস্ত্রী। তাই পরিবেশ যতই কঠিন থাকুক, পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল থাকুক, ভারতীয় দল কখনওই সেটাকে অজুহাত হিসেবে তুলে ধরবে না বলে মন্তব্য করেছেন কোহালির কোচ।
মঙ্গলবারই খবর বেরিয়ে পড়ে যে, চেমসফোর্ডের মাঠের পরিস্থিতি নিয়ে খুশি নয় ভারতীয় দল। পিচে অতিরিক্ত ঘাস, আউটফিল্ডের অনেক জায়গা এবড়ো-খেবড়ো এবং ঘাস উঠে ধূসর হয়ে আছে। ক্ষুব্ধ ভারতীয় দল তাদের অনুশীলন আগেই থামিয়ে দেয়, প্রস্তুতি ম্যাচকেও কমিয়ে দেওয়া হয় চার থেকে তিন দিনে।
এসেক্সের বিরুদ্ধে এই মাঠেই টেস্ট সিরিজের আগে একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচ খেলছিল ভারত। সেই কারণে চেমসফোর্ডের মাঠের অবস্থা নিয়ে তুলকালাম শুরু হয়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে, প্রস্তুতিতে বিঘ্ন ঘটিয়ে ইংল্যান্ড কি কোহালিদের মনঃসংযোগ নষ্ট করে দিতে চাইছে? বিশ্বের নানা প্রান্তেই দেখা যায়, সফরের শুরুতে অতিথিদের দূর-দূরান্তের কঠিন সব জায়গায় খেলতে পাঠানো হচ্ছে। প্রতিপক্ষ দলে ভাল বোলারও রাখা হয় না অনেক সময়।
ক্রিকেটের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ হিসেবেই এই প্রথা চলে যাতে অতিথিরা খুব ভাল ভাবে তৈরি হয়ে মাঠে না নামতে পারে। ক্রিকেট ভদ্রলোকের খেলা বলে পরিচিত হলেও অতিথিদের প্রতি সৌজন্যের অভাব নতুন কিছু নয়। যদিও ইংল্যান্ড যখন ভারতে এসেছিল, তাদের ব্রেবোর্নে সিসিআইয়ের উন্নত পরিকাঠামোয় তৈরি হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল ভারতীয় বোর্ড। সেই প্রসঙ্গ টেনে কোনও কোনও বোর্ড কর্তা বলছেন, ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডকে কড়া বার্তা পাঠানো উচিত।
শাস্ত্রী যদিও এ সব নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ। বলে দিচ্ছেন, ‘‘আমার দর্শন খুব সহজ। তোমার দেশে এসে আমি কোনও প্রশ্ন করি না, তুমিও আমাদের দেশে এসে তা হলে প্রশ্ন তুলো না। আমি নিজে গত কাল গ্রাউন্ডসম্যানকে বলি, পিচ থেকে ঘাস কাটার কোনও দরকার নেই। যেমন আছে, তেমনই রেখে দাও,’’ বুধবার সাংবাদিক সম্মেলন করতে এসে বলেন ভারতের কোচ। যোগ করছেন, ‘‘এই সফরে একটা জিনিস আপনারা দেখতে পাবেন না। পরিবেশ বা পিচের অবস্থা নিয়ে আমাদের কোনও ক্রিকেটারকে অভিযোগ জানাতে শোনা যাবে না। আমাদের চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, ওদের হারানো। আমরা সেটার উপরেই মনোনিবেশ করতে চাই।’’ শাস্ত্রী এ দিন ঘোষণাও করে দেন এই দলের লক্ষ্য কী। ‘‘আমরা বিদেশের মাঠে সেরা দল হয়ে উঠতে চাই। ছেলেরা গর্বের সঙ্গে বিদেশের মাঠে এসে পারফর্ম করতে চায়। আমি পরিষ্কার করে দিতে চাই যে, কেউ অভিযোগ জানাতে এখানে আসেনি। সেরা ক্রিকেট খেলতে এসেছি আমরা।’’
গত কাল সংবাদসংস্থা পিটিআই জানিয়েছিল, শাস্ত্রীকে উত্তেজিত ভাবে স্থানীয় মাঠ কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। পিচ এবং আউটফিল্ড নিয়েই যে এই উত্তেজিত কথোপকথন, সেটাও ধরে নেওয়া হচ্ছিল। কিন্তু শাস্ত্রী এ দিন বলেন, ‘‘পিচ বা আউটফিল্ড, কোনওটা নিয়েই আমরা অভিযোগ করিনি। পিচে ভাল ঘাস ছিল। গ্রাউন্ডসম্যান আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি ঘাস তুলে দিতে চাই কি না। আমি পরিষ্কার ওঁকে বলি, একেবারেই না। ঘাস থাকবে কি থাকবে না, সেটা সম্পূর্ণ আপনার সিদ্ধান্ত।’’ এর সঙ্গে শাস্ত্রী অবশ্য মাঠ তদারকি করা কর্তাকে বলে দেন, ‘‘আপনি যে উইকেট দেবেন, আমি খেলব। তাই আপনি যখন আমাদের দেশে আসবেন, আপনিও পিচ নিয়ে কিছু বলতে পারবেন না।’’
প্রস্তুতি ম্যাচকে চার থেকে তিন দিনের করে দেওয়ার পিছনে ক্রিকেটীয় কারণই রয়েছে বলে জানান শাস্ত্রী। ইউরোপ জুড়ে দাবদাহ চলছে। ইংল্যান্ডেও এ বার ভারতের মতো গরম। চেমসফোর্ড, যেখানে প্রস্তুতি ম্যাচটি খেলছেন কোহালিরা, সেখানেও একই অবস্থা। শাস্ত্রী জানান, অত্যাধিক গরমের কারণেও ভারতীয় দল চার দিনের জায়গায় তিন দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে চেয়েছে। তার বদলে বাড়তি এক দিন কোহালিরা অনুশীলন করতে চান এজবাস্টনে। যেখানে ১ অগস্ট শুরু হচ্ছে প্রথম টেস্ট। ‘‘এখানে চার দিনের ম্যাচ খেললে আমরা টেস্টের আগে একটা দিন হারাতাম,’’ বলেন শাস্ত্রী, ‘‘আর প্রস্তুতি ম্যাচ দু’দিনের হবে নাকি তিন দিনের না চার দিনের, সেটা পুরোপুরি সফরকারী দলের উপরে নির্ভর করবে।
মঙ্গলবার অনুশীলনের মাঝেই প্রস্তুতি ম্যাচকে চার দিনের থেকে তিন দিনের করে দেওয়া হয়। ‘‘এসেক্স কাউন্টি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা কথা বলি। ওরা জানায়, চতুর্থ দিনের টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। আমরা দু’দিনের ম্যাচও খেলতে পারতাম। তার পর এক দিন এখানে প্র্যাক্টিস করা যেত। কিন্তু টিকিট বিক্রির বিষয়টি শুনে তিন দিনের ম্যাচ খেলতে রাজি হই।’’ কোহালিদের কোচের আরও ব্যাখ্যা, ‘‘আসল লক্ষ্য হচ্ছে, টেস্ট ম্যাচের কেন্দ্রে গিয়ে যত বেশি সম্ভব অনুশীলন করা। এখানে অতিরিক্ত একটা দিন প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে আমাদের বিশেষ কোনও লাভ হত না। তার চেয়ে এজবাস্টন, যেখানে প্রথম টেস্ট হবে, সেখানে গিয়ে যদি অতিরিক্ত একটা দিন প্র্যাক্টিস করতে পারি, তা হলে উপকৃত হবে সবাই। উপকৃত হবে গোটা দল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy