পেশাদার রিং-এ নিজের প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বী সোনি হুইটিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎকারের পর থেকেই বাড়তি তেতে আছেন তিনি। জানিয়ে দিলেন, পেশাদার বক্সিংয়ে প্রথম লড়াই জেতার জেদটা গত চব্বিশ ঘণ্টায় আরও বেড়ে গিয়েছে। তিনি, বিজেন্দ্র সিংহ প্রহর গোনা শুরু করেছেন শনিবারের। যে দিন নৈশ-যুদ্ধে সোনিকে হারিয়ে বেজিং অলিম্পিক্সের মতোই মাথা উঁচু করে প্রো-বক্সিংয়ে নিজের শুরুটা করতে চাইছেন।
শনি-রাতে ম্যাঞ্চেস্টারে চার রাউন্ডের লড়াইয়ে পেশাদার মঞ্চে প্রথম ভাগ্যপরীক্ষায় নামছেন অলিম্পিক পদকজয়ী প্রথম ভারতীয় বক্সার বিজেন্দ্র। তার আগে, এ দিন তাঁর স্পনসর আইওএস-এর মাধ্যমে বিজেন্দ্রকে ধরা হলে তারকা বক্সার জানালেন, বুধবারই হুইটিংয়ের সঙ্গে তাঁর প্রথম দেখা হয়। সামান্য কয়েক মিনিটের সাক্ষাৎ। কিন্তু তাতেই দারুণ তেতে গিয়েছেন। বিজেন্দ্রের কথায়, ‘‘ওকে দেখার পর থেকেই ওর বিরুদ্ধে জেতার তাগিদটা আরও বেড়ে গিয়েছে।’’
ইংল্যান্ডে এই লড়াইয়ের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ওয়ার্ল্ড ওয়ার থ্রি’। আপাতত সেই ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের’ জোরদার প্রচার চলছে ম্যাঞ্চেস্টার জুড়ে। অলিম্পিক ব্রোঞ্জজয়ীর প্রথম পেশাদার লড়াই নিয়ে ও দেশের মতো এ দেশেও অবশ্য উৎসাহের শেষ নেই। এমনকী সোনি সিক্স চ্যানেল লড়াই সরাসরি দেখানোর বন্দোবস্ত করেছে ভারতীয় সময় শনিবার রাত ১০টা ২০ মিনিট থেকে।
ভারতে, বিশেষ করে হরিয়ানায় তাঁর প্রথম পেশাদার বক্সিং নিয়ে উৎসাহটা অবশ্য বিদেশে বসেই টের পাচ্ছেন বিজেন্দ্র। বলছিলেন, ‘‘ভারত থেকে অনেকেই ফোন করে প্রশ্ন করছে আমি চাপে আছি কি না? কিন্তু কীসের চাপ সেটাই তো বুঝতে পারছি না?’’ প্রতিপক্ষ যে তাঁর থেকে পেশাদার অভিজ্ঞতায় সামান্য এগিয়ে সেটা মানলেও বিজেন্দ্র বলে দিলেন, ‘‘অভিজ্ঞতায় ও সামান্য এগিয়ে থাকলেও আমি তা নিয়ে একেবারেই মাথা ঘামাচ্ছি না। এ পর্যন্ত ও মাত্র তিনটে লড়াই লড়েছে। সে দিক থেকে দেখলে এখনও কিন্তু ওকে যথেষ্ট অনভিজ্ঞ বলা চলে। তাই শনিবার আমি যদি নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী লড়তে পারি তা হলে দিনটা আমারই হবে।”
বিজেন্দ্রকে নিয়ে আশাবাদী তাঁর কোচ লি বিয়ার্ডও। যিনি বলছেন, ‘‘বিজেন্দ্রর মতো এত স্বাভাবিক প্রতিভা আমি খুব কম দেখেছি।’’ বিয়ার্ডের বিশ্লেষণ, ‘‘টেকনিকের দিক থেকে ও দুরন্ত। অপেশাদার পর্যায়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। ঘুষিতে যেমন জোর, তেমনই কখন কোন ঘুষিটা চালাতে হবে, সেটা খুব ভাল বোঝে। সব মিলিয়ে অসাধারণ বক্সার। বিজেন্দ্রকে নিয়ে আমি খুব আশাবাদী।’’
একই সঙ্গে বিজেন্দ্রের কয়েকটা দুর্বলতা পেয়েছেন বিয়ার্ড। মূলত সেই জায়গাগুলো মজবুত করতে খেটেছেন ভারতীয়কে নিয়ে। যেমন জ্যাবিং আর প্রতিপক্ষের শরীর তাক করা আক্রমণে। ‘‘বিজেন্দ্রর জ্যাবিংটা আরও ধারালো হওয়া দরকার। ওটা নিয়ে কাজ করেছি। প্রতিপক্ষের শরীরে আক্রমণ করার ক্ষেত্রে ওর নিশানা যাতে আরও নির্ভুল হয়, অনুশীলনে সে দিকেও বাড়তি নজর দেওয়া হয়েছে।’’ উনত্রিশ বছর বয়সে পেশাদার হওয়া মানে একটু বেশি বয়সেই শুরু করছেন বিজেন্দ্র। বিয়ার্ড অবশ্য মনে করছেন, বিজেন্দ্র যে রকম প্রতিভাবান এবং পরিশ্রমী, তাতে সার্কিটে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য খুব বেশি সময় নেবেন না।
নিজের সাধনায় এতটুকু ফাঁকি দিচ্ছেন না বিজেন্দ্রও। সেপ্টেম্বর থেকে পরিবারের সঙ্গে দেখা নেই, ম্যাঞ্চেস্টারে নিজেকে ডুবিয়ে রেখেছেন প্রস্তুতিতে। অপরিচিত পরিবেশে। সঙ্গী বলতে কোচ লি বিয়ার্ড এবং ট্রেনিং-পার্টনার জ্যাক ক্যাটেরাল, আদ্রিয়ান গঞ্জালেজ ও জিমি কেলি। বিজেন্দ্র বলছিলেন, “ওরাই এখন আমার নতুন বন্ধু। পরিবারের কথা খুব মনে পড়ছে। কিন্তু কিছু তো করার নেই। তবে শনিবার সোনি হুইটিয়ের বিরুদ্ধে লড়াইটা জিতে সেটা উপহার দিতে চাই স্ত্রী, পুত্র আর বাবা-মাকে।”
শেষ করার আগে অবশ্য যোগ করতে ভুললেন না, ‘‘শনিবারের জন্য আমি তৈরি। আশা করি জিতে শুধু নিজের পরিবার নয়, প্রত্যেক দেশবাসীর মুখেও হাসি ফোটাতে পারব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy