২০১৫ সালে হামিদ যখন পরাধকরের ক্লাসে। —নিজস্ব চিত্র
বেশ কয়েক দিন আগে থাকতে ঠিক করে রেখেছিলেন মুম্বই টেস্টের একটা দিনও মিস করবেন না। রোজ যাবেন মাঠে।
বৃহস্পতিবার ম্যাচের প্রথম সকালেই অবশ্য ওয়াংখেড়েতে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অথচ ভেবে রেখেছিলেন প্রথম দিনের খেলার পর ভারত, ইংল্যান্ড— দু’টিমের ড্রেসিংরুমেই একবার ঢুঁ মারবেন।
সেটাও করেননি।
মুম্বইয়ের প্রবীণ কোচ বিদ্যাধর পরাধকর বরং ঠিক করেছেন, ভারত- ইংল্যান্ড চতুর্থ টেস্ট দেখতে এক দিনও স্টেডিয়ামমুখো হবেন না।
অজিঙ্ক রাহানে এবং হাসিব হামিদ— দু’দলে তাঁর দুই ছাত্রই যখন হাতের চোট নিয়ে টিমের বাইরে, তখন আর মাঠে গিয়ে কীই বা হবে!
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেয় মুম্বইয়ের গ্র্যান্ট রোডের বাড়ি থেকে আনন্দবাজার-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েও হতাশার সুর পরাধকরের গলায়। ‘‘অবস্থাটা ভাবুন একবার! এত দিন আশায় আশায় বসেছিলাম, দুই ছাত্রর খেলা দেখব বলে। আর দু’জনেই কিনা একই রকমের চোট নিয়ে ছিটকে গেল? এক জন কোচের কাছে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যের আর কীই বা হতে পারে,’’ বলছিলেন সত্তর বছরের পরাধকর।
রাহানেকে চেনেন প্রায় কুড়ি বছর। হামিদের সঙ্গে পরিচয় বছর চারেকে। তখন থেকেই তিনি ইংল্যান্ড ওপেনারের ব্যাটিং কোচ। চার বার বাতিল হয়েছে ইংল্যান্ডের ভিসা। তবু প্রতিদিন নিয়ম করে ফোনে আর ভিডিও লিঙ্কে তরুণ বিদেশি ছাত্রের ব্যাটিংয়ের খুঁটিনাটি নিয়ে নিঃশব্দে কাজ করে গিয়েছেন পরাধকর। তাই ভেবেছিলেন ওয়াংখেড়ের গ্যালারি থেকে গলা ফাটাবেন দুই ছাত্রের জন্য।
‘‘কিন্তু এই মহান অনিশ্চয়তার খেলায়...,’’ বলতে বলতেই কিছুটা যেন আবেগমথিত প্রবীণ কোচ, মুম্বইয়ের ক্রিকেট জগত যাঁকে চেনে অন্য একটা নামে — ‘খাড়ুস’!
তবে শুধু পরাধকরের কাছে নয়, চতুর্থ টেস্ট মুম্বই ক্রিকেটের কাছেও ঐতিহাসিক হয়ে রইল। এই প্রথম বার মুম্বইয়ে খেলা ভারতীয় দলে নেই কোনও মুম্বইকর। ‘‘এই টেস্টটা অজিঙ্কের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আজকাল বলের থেকে চোখ সরে যাচ্ছে ওর। তাই রান আসছে না। ঘরের মাঠে খেললে হয়তো কনফিডেন্সটা পেতে সুবিধে হতো, সেটাও হল না। এখন মুম্বই ক্রিকেটের যা অবস্থা, মনে হয় না আগামী পাঁচ বছরে এখান থেকে নতুন কোনও ব্যাটসম্যান জাতীয় দলে সুযোগ পাবে,’’ বলছেন পরাধকর।
এই হতাশার মাঝে হামিদকে নিয়ে আশাবাদী পরাধকর। ২০১২-এ যখন পনেরোর টিনএজারকে প্রথম তাঁর কাছে নিয়ে আসেন পরাধকরের পুরোনো বন্ধু ইকবাল শেখ, তখন ভাবেননি, পরের মাত্র চার বছরে সেই তরুণ ইংল্যান্ড জার্সিতে টেস্ট খেলবেন। ‘‘মোহালিতেও দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ খেলেছিল। এই ক’বছরে প্রচণ্ড খেটেছে ও। এবং রেজাল্ট তো চোখের সামনেই দেখা যাচ্ছে,’’ বলছিলেন পরাধকর।
গত কয়েক বছরে হামিদ বেশ কয়েক বার ঘুরে গিয়েছেন মু্ম্বই। শুধুমাত্র ‘পরাধকর স্যার’-এর কাছে টিপস নিতে। আর হয়তো সে জন্যই মোহালি টেস্টের পর তাঁর ‘পরাধকর স্যার’কে একটি ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ নোট লিখেছিলেন উনিশ বছরের হামিদ। এবং বুধবার মুম্বইয়ে ফিরে ছুটে গিয়েছিলেন বম্বে জিমখানার মাঠে — স্রেফ কোচকে ধন্যবাদ দিতে। ‘‘এত দিন এত ক্রিকেটারকে তৈরি করলাম, কেউ তো কোনও দিন এই সম্মান দেয়নি। একজন বিদেশি তরুণ যা করে দেখাল!’’ বলছিলেন প্রবীণ কোচ, যাঁর আরেক প্রাক্তন ছাত্রকে ক্রিকেটদুনিয়া চেনে জাহির খান নামে।
‘‘হামিদ প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী। শুরুর দিকে অজিঙ্কও ঠিক এ রকম ছিল। সেই খিদেটা ছিল বলেই এত দূর এগোতে পেরেছে,” বলছিলেন পরাধকর। তার পর গম্ভীর গলায় বললেন, ‘‘হামিদ লম্বা রেসের ঘোড়া। ওকে বলেছি, হাওয়ায় না ভাসতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy