পুরনো সেই দিনের কথা। নেটে হাত ঘোরাচ্ছেন রাজু। রয়েছন সচিনও। —ফাইল চিত্র।
১২ রানে ছয় উইকেট টেস্টে সেরা বোলিং। ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন পাঁচ বার। ম্যাচে ১০ উইকেটও নিয়েছেন এক বার। কিন্তু, তার পরও বেঙ্কটপতি রাজুর শিকারসংখ্যা একশো ছাড়ায়নি। অথচ, আজহারউদ্দিন-ওয়াদেকরের তিন স্পিনার থিওরির অন্যতম স্তম্ভ ছিলেন তিনি। খেলা ছাড়ার পর জাতীয় নির্বাচক হয়েছিলেন। রয়েছে ইডেনের সঙ্গে আত্মিক যোগ। কেরিয়ারের শেষ টেস্ট ক্রিকেটের নন্দনকাননেই। বাঁ-হাতি স্পিনার আনন্দবাজার ডিজিটালকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুখ খুললেন অকপটে।
আপনার সময়ের ছবি বলতেই চোখের সামনে ভাসে তিন স্পিনারের আজহারের ভারত। যা বিরাট কোহালির ভারতের থেকে অন্য যুগের দেখায়। এখন বিশ্বক্রিকেটে ভারতের পরিচিতি জবরদস্ত পেস আক্রমণের জন্য। ভারতের স্পিন ঐতিহ্য কোথাও গিয়ে ঝুঁকির মুখে বলে মনে হয় কি?
বেঙ্কটপতি রাজু: ভারতের মনোযোগ এখন অধিকাংশ সময় টি-টোয়েন্টি বা ওয়ানডে ক্রিকেটে থাকছে। তার জন্যই পেসাররা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে আমার। এখন সাদা বলের ক্রিকেটেই বেশি ফোকাস রয়েছে। আর একটা কথা মানতেই হবে যে, পেস বোলিংয়ে বিপ্লব ঘটেছে এ দেশে। এখন ঘরোয়া ক্রিকেটের কন্ডিশনও পেসারদের সহায়ক। উইকেটে ঘাস বেশি থাকছে। এত বেশি ম্যাচ থাকে ডোমেস্টিক ক্রিকেটে যে, আলাদা করে প্রতি ম্যাচের জন্য উইকেট তৈরিও করা যায় না অনেক ক্ষেত্রে। এটাও জোরে বোলারদের পক্ষে যাচ্ছে। আর একটা কথা হল ফিটনেস। ফিটনেসে আকাশ-পাতাল তফাত আমাদের সময়ের থেকে। এখন পেস বোলিংয়ে অনেক বৈচিত্রও দেখা যাচ্ছে।
আপনাদের বেড়ে ওঠার সময়ের সঙ্গে এখনকার তফাত কী?
বেঙ্কটপতি রাজু: আমি যখন ক্রিকেট খেলতে শুরু করি, তখন স্পিনারই হতে চেয়েছিলাম। স্পিনারদের দাপট ছিল সেই সময়। সেটাই প্রভাব ফেলেছিল। তখন উইকেট থেকে স্পিনাররা বেশি সাহায্য পেত। লাল মাটির উইকেট থাকত। কিন্তু এখন, অনূর্ধ্ব-১৯ ছেলেরাও ১৪০-১৫০ কিমি গতিতে বল করছে। এই তো কমলেশ নাগারকোটি ছেলেটাকেই দেখুন না। বা, শিবম মাভি। অস্ট্রেলিয়ায় যখন শেন ওয়ার্নের অভিষেক ঘটল, লেগস্পিন জাদু দেখাতে লাগল, তখন অস্ট্রেলিয়াতেও স্পিনার হওয়ার হিড়িক উঠেছিল। এটা অনেকটা হিরোইজম। আইডলকে দেখে অনুপ্রাণিত হওয়া কাজ করে সব সময়ই।
চৌহান, কুম্বলের সঙ্গে রাজু। —ফাইল চিত্র।
আমাদের দেশে পেস বোলিংয়ের সেই আইডল তো কপিল দেব।
বেঙ্কটপতি রাজু: হ্যাঁ, অবশ্যই। আমাদের দেশ থেকে ফাস্ট বোলার হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন কপিল দেব। দীর্ঘ দিন টেস্ট খেলার পক্ষে একটা মারাত্মক আবেদন রেখেছিলেন উনি। মোটিভেট করেছিলেন পরের প্রজন্মকে। সেই সময় আমাদের অনেক অলরাউন্ডারও ছিল। মনোজ প্রভাকর যেমন। এর পর আমরা পেলাম জাভাগল শ্রীনাথকে। যে কিনা রীতিমতো কুইক। এখনও মনে আছে ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ড সফরের আগে ব্যাঙ্গালোরে (এখন বেঙ্গালুরু) আমাদের শিবির হয়েছিল। সেখানে মাঝের উইকেটেই সব সময় প্র্যাকটিস হত। অনেক ফাস্ট বোলারকে ডাকা হয়েছিল সেখানে। দিল্লির একটা বোলার ছিল রবিন সিংহ জুনিয়র নামে। ও খুব জোরে বল করেছিল। সলিল আঙ্কোলা ছিল। কিন্তু তখন এখনকার মতো ফিটনেস লেভেল ছিল না। জোরে বোলারদের আলাদা ধরনের ওয়ার্ক আউটের প্রয়োজন পড়ে। গুরুত্বপূর্ণ হল, আমরা জোরে বোলারদের কী ভাবে যত্ন নিচ্ছি। সেটাই তফাত গড়ে দেয়। যদি সেই পেসারদের ঠিকঠাক লালন করা হত, কে বলতে পারে তারাও সাফল্য পেত না? ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল তখন।
তার মানে পরিচর্যার অভাব। বা, পরিকাঠামোগত তফাত সেই সময় আর এখনকার সময়ের মধ্যে।
বেঙ্কটপতি রাজু: তখন শুধু এক জন ম্যানেজার আর এক জন কোচ থাকত দলের সঙ্গে। কোনও সাপোর্ট স্টাফ থাকত না। ফিজিওথেরাপির জন্য বা ম্যাসাজের জন্য কেউ থাকত না। অনেক পেসারেরই চোট থাকত। কেউ যদি ঠিকঠাক ম্যানেজ করতে পারত ওদের... পরে আমরা দেখলাম আরপি সিংহ, শ্রীসন্থের মতো বোলাররা রীতিমতো জোরে বল করছে। জাহির তো ছিলই। এখন কম বয়স থেকেই জোরে বল করতে শিখছে ছেলেরা। ফলে, পেসাররা উঠে আসছে দ্রুত। ঠিকঠাক গাইডেন্স পাচ্ছে ওরা।
আরও পড়ুন: আইপিএল স্পনসর এ বার পতঞ্জলি!
ভারতের স্পিন-ভবিষ্যৎ কি তা হলে ঝুঁকির মুখে?
বেঙ্কটপতি রাজু: না, তা মনে করছি না। ভারতের হাতে তো ভালই স্পিনাররা রয়েছে। টেস্ট ক্রিকেটের গুরুত্ব এখনও আছে। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের তো টেস্টে ৩৬৫ উইকেট রয়েছে। রবীন্দ্র জাডেজার রয়েছে দুশোর বেশি উইকেট। আসলে প্রতি দু’বছর অন্তরই বিশ্বকাপ থাকে। নয় ওয়ানডে বিশ্বকাপ, নয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ফলে, সাদা বলের ক্রিকেটের অন্য আকর্ষণ রয়েছে। আবার জুনিয়র ক্রিকেটাররা অনূর্ধ্ব পর্যায় থেকে বেরিয়েই আইপিএলে চলে আসে। তাতেই স্বীকৃতি জোটে।
কিন্তু, ওভারের ফরম্যাট মানে তো এক জন স্পিনারের রক্ষণাত্মক হয়ে পড়া। টেস্টে উইকেট নেওয়ার জন্য ঝাঁপাতে হয়। ফলে, মানসিক ভাবে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ার ব্যাপার থাকে।
বেঙ্কটপতি রাজু: লাল বলের ক্রিকেট একেবারে আলাদা। কিন্তু, সাদা বলেও এখন উইকেট নেওয়ার দিকে জোর পড়ছে। যুজভেন্দ্র চহাল, কুলদীপ যাদবদের দেখুন। ওরাও টেস্ট দলের দরজায় কড়া নাড়ছে ধীরে ধীরে। চহাল কিন্তু বেশি সফল সাদা বলে। একমাত্র রিস্ট স্পিনার হিসেবে ও-ই কিন্তু এখন ওভারের ফরম্যাটে বেশি সুযোগ পাচ্ছে।
রিস্ট স্পিনার বনাম ফিঙ্গার স্পিনার— আপনাদের সময় এই বিতর্ক দেখা যেত না। যা এখন দেখা যাচ্ছে।
বেঙ্কটপতি রাজু: দেখুন, রিস্ট স্পিনাররা সাদা বলে বেশি সফল। টেস্টে কিন্তু তা নয়। আমরা যেমন অশ্বিন-জাডেজাকেই প্রধানত টেস্টে খেলাই। তবে শেন ওয়ার্ন রিস্ট স্পিনার হিসেবেই সফল। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এই তো পাকিস্তান দু’জন লেগস্পিনারকে টেস্টে খেলাল। পাকিস্তানও রিস্ট স্পিনার খেলায় টেস্টে। আসলে বিতর্কটা রিস্ট বনাম ফিঙ্গারের নয়। কে বেশি সাফল্য পাচ্ছে, কে কেমন পারফর্ম করছে, সেটাই আসল। সীমিত ওভারের ফরম্যাটে রিস্ট স্পিনারদের সুবিধা হল যে, ১০ ওভারের বেশি হাত ঘোরাতে হয় না। ফলে, পুরনো বলে বল করতে হয় না।
অশ্বিনের কথায় আসি। অশ্বিনকে একসময় লেগস্পিনে মন দিতেও দেখা গিয়েছে। বৈচিত্রের প্রতি এই ঝোঁক ছেড়ে স্টক বল, অফস্পিনেই কি বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত নয়?
বেঙ্কটপতি রাজু: ও এর মধ্যেই অনেক উইকেট নিয়েছে। জানে কী করা উচিত। গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে তিন টেস্টের সিরিজে ও ধ্রুপদী অফস্পিনই করেছিল। স্বাভাবিক পিচে বল করার সময় আত্মবিশ্বাস দেখা গিয়েছিল শরীরী ভাষায়। ও লম্বা স্পেল করতে পারে। যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ রাখে ম্যাচের পরিস্থিতির উপরে। আসলে, দুটো-তিনটে উইকেট পেলে মনে হয় না অশ্বিন ছন্দে আছে। সাধারণত, ওকে প্রতি ম্যাচে পাঁচ-ছয় উইকেট নিতে দেখতেই অভ্যস্ত আমরা।
ইডেনেই কেরিয়ারের শেষ টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক জয়ের স্মৃতি এখনও টাটকা রাজুর।
উপমহাদেশের বাইরে অশ্বিনকে আগ্রাসী মেজাজে দেখা যায় না। পরিসংখ্যানেই তা প্রতিফলিত।
বেঙ্কটপতি রাজু: উপমহাদেশের বাইরে অধিকাংশ স্পিনারকেই তো সাদামাটা দেখায়। ব্যতিক্রম অনিল কুম্বলে আর হরভজন সিংহ। এর কারণ হল, বলটাই পাল্টে যায়। দেশে এসজি বলে খেলে অভ্যস্ত আমরা। বাইরে কোকাবুরায় খেলতে হয় বেশির ভাগ সময়। তা ছাড়া কন্ডিশনও পাল্টায়। ফলে, কোথাও গিয়ে বিশ্বাসে চিড় ধরে। দেশের মাঠে পাঁচ-ছয় উইকেট করে পেলেও উপমহাদেশের বাইরে তো তা সম্ভব নয়। তখন তিন-চার উইকেটেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। পাল্টে যায় স্পিনারের ভূমিকা। মানসিকতা পাল্টাতে হয় স্পিনারকে।
ভারতে স্পিনাররাই টেস্ট জেতার চাবিকাঠি। উপমহাদেশের বাইরে পেসাররা হয়ে ওঠেন প্রধান অস্ত্র। স্পিনারদের নিতে হয় সাহায্যকারীর ভূমিকা। এটা হজম করা এক জন স্পিনারের পক্ষে কতটা কঠিন?
বেঙ্কটপতি রাজু: হ্যাঁ, এটা টাফ তো বটেই। এর সেরা উদাহরণ নেথান লায়ন। ও যখন উপমহাদেশে আসে, জানে লম্বা স্পেল করতে পারবে। শুধু ধৈর্য ধরে তা করতে হবে। ও বেশি পরীক্ষার পথে যায় না। ও জানে, ভারতে স্পিনাররা প্রধান অস্ত্র, পেসাররা থাকে সাপোর্টিং রোলে। আবার, আমাদের স্পিনারদের ক্ষেত্রে উল্টো ঘটে। তখন স্পিনারা দুটো-তিনটে উইকেট পেলেই চলবে।
বছরের শেষে অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়ার কথা ভারতের। সেখানে যদি এক জন স্পিনারকে খেলাতে হয়, কার প্রথম এগারোয় থাকা উচিত?
বেঙ্কটপতি রাজু: পুরোটাই কন্ডিশনের উপর নির্ভরশীল। অস্ট্রেলিয়া জানে, ভারতের হাতে ভাল স্পিনার রয়েছে। আবার পেস বোলিং বিভাগও শক্তিশালী ভারতের। তাই সবুজ উইকেট দেওয়ার আগে দু’বার ভাবতে হবে অজিদের। নিউজিল্যান্ড সফরে ভারতের অবস্থা দেখে অবশ্য জোরে বোলিংয়ের সহায়ক উইকেট দিতে প্রলুব্ধ হতে পারে ওরা। কিন্তু ভুললে চলবে না আমাদের পেস অ্যাটাকও পাল্টা দিতে পারে। যদি এক জন স্পিনার খেলাতে হয়, তা হলে দেখতে হবে অস্ট্রেলিয়া দলে কতজন বাঁ-হাতি। বেশি বাঁ-হাতি ব্যাটসম্যান ওদের দলে থাকলে অফস্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন এগিয়ে থাকবে। অবশ্য বিকল্পও আছে হাতে। কুলদীপ আছে, জাডেজা আছে। কিন্তু উইকেট পাওয়ার নিরিখে দলের এক নম্বর স্পিনার অবশ্যই অশ্বিন।
মহম্মদ আজহারউদ্দিন, সচিন তেন্ডুলকর, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। ক্রিকেটজীবনে তিন অধিনায়ককেই দেখেছেন। কে কেমন অধিনায়ক?
বেঙ্কটপতি রাজু: কেরিয়ারের শুরুর দিকে আমাদের কোচ ছিলেন অজিত ওয়াদেকর। তিনি যখন অধিনায়ক ছিলেন, তখনও স্পিনে বেশি ভরসা রেখেছিলেন। কোচ হওয়ার পর অধিনায়ক আজহারের সঙ্গে স্পিনারদের উপরই ভরসা রেখেছিলেন। তখন আমরা তিন স্পিনারে খেলতাম। অনিল কুম্বলে, রাজেশ চৌহান আর আমার উপর ভরসা ছিল আজহারের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলায় স্ট্র্যাটেজি। সৌরভ অধিনায়ক হয়ে কুম্বলে-হরভজন জুটির উপর আস্থা রেখেছিল। সৌরভের মনে হয়েছিল, এই জুটিই ম্যাচ জেতাবে। যেটা বলতে চাইছি তা হল, প্রত্যেক ক্যাপ্টেনের দৃষ্টিভঙ্গি থাকে আলাদা। সব অধিনায়কই নিজের মতো করে এগোতে চায়। এখন আবার অশ্বিন-জাডেজা জুটি টেস্টে সফল। মোদ্দা কথা হল, স্পিন আক্রমণে বৈচিত্র থাকা দলের পক্ষেই ভাল। আর কম্পিটিশন থাকাটাও দরকার। এতে পারফরম্যান্সে উন্নতি ঘটে।
আরও পড়ুন: ‘ক্ষমতা রয়েছে কিন্তু ভিতরের আগুনটা দেখতে পাচ্ছি না ওদের মধ্যে’
আপনার হোয়াটসঅ্যাপে দেখলাম কুম্বলের সঙ্গে ছবি। একসঙ্গে খেলার সেই দিনগুলো কি মিস করেন এখনও?
বেঙ্কটপতি রাজু: কুম্বলে আর আমি মোটামুটি একই সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেছিলাম। একটা সিরিজ আগে অভিষেক ঘটেছিল আমার। আমরা ক্রিকেটার হিসেবে প্রচণ্ড সিরিয়াস ছিলাম। এখন দেখছি হরভজন, আশিস নেহরারা বলছে কুম্বলের কথা যে ওই ছিল সত্যিকারের ম্যাচ-উইনার। কথাটা একেবারে খাঁটি। আসলে গ্রেট ক্রিকেটাররা কথা বলে না, তাঁরা পারফর্ম করে। কুম্বলেও তাই। বড় কথাবার্তা বলে না কোনও দিন। কুম্বলের জন্য সতীর্থদের কাজটা সহজ হয়ে উঠত। ওর দিকেই পুরো ফোকাস থাকত। ম্যাচ জেতাবে কুম্বলে, এটাই ছিল প্রত্যাশা। আমি বা আমরা থাকতাম সাপোর্টের জন্য। এতে আমাদের উপর চাপ থাকত না। ও রান দিত না। ভাল লাইনে বিরামহীন বল করে যেত। বিপক্ষকে চিন্তায় রাখত। ফলে, আমাদের স্বাধীনতা থাকত নিজেদের মতো চেষ্টা করার। কুম্বলেই ছিল ম্যাচ-উইনার। একটা কথা এখানে জরুরি, ফাস্ট বোলার হোক বা স্পিনার, জুটির ক্ষেত্রে বোঝাপড়া গুরুত্বপূর্ণ। বোলিংয়ের কম্বিনেশন যাই হোক, অন্যের সাফলে খুশি হওয়া দরকার। অন্যকে অভিনন্দন জানানো দরকার।
আপনার শেষ টেস্ট ইডেনে। ২০০১ সালে স্টিভ ওয়ের অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সেই ঐতিহাসিক টেস্টে জয়ের রোমাঞ্চ এখনও টের পান?
বেঙ্কটপতি রাজু: গ্রেট ভিক্টরি। সেই টেস্ট জয় পাল্টে দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটকে। আমরা সর্বত্র জিততে পারি, এই বিশ্বাস এসেছিল। এর পরই আমরা বিদেশে জিততে শুরু করি। সেই আত্মবিশ্বাস এসেছিল ইডেনের জয় থেকেই। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যখন নেতৃত্বে আসে, তখন তরুণদের উপর ভরসা রেখেছিল। সেই তরুণরাই জেতাতে শুরু করে। ওটা ছিল ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমার শেষ টেস্ট। দীর্ঘ দিন পর খেলছিলাম আমি।
তিন বছর পরে প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল টেস্টের আসরে।
বেঙ্কটপতি রাজু: হ্যাঁ। আমার সৌভাগ্য যে জীবনের শেষ টেস্ট ছিল ইডেনে। লোকে ইডেনে খেলার স্বপ্ন দেখে। আর আমি শেষ করেছি ওখানে খেলে। এবং সেটাও ওই রকমের একটা অসাধারণ ম্যাচে। মার্ক ওয়ার উইকেট নিয়েছিলাম। হিস্টোরিক ম্যাচ। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপ জয় যে ভাবে বদলে দিয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেটকে, অনেকটা সে ভাবেই এই টেস্ট জয় প্রভাব ফেলেছিল। ১৯ বছর কেটে গিয়েছে ওই টেস্ট জয়ের। কিন্তু এখনও তার রোমাঞ্চ টের পাই। সেই জয়ের সুবাস ঘিরে থাকে।
বর্তমানে আসি। প্রাক্তন নির্বাচক হিসেবে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির অবস্থান কী ভাবে দেখছেন?
বেঙ্কটপতি রাজু: ধোনি গ্রেট ক্রিকেটার। সচিন তেন্ডুলকরের মতোই। এবং একটা কথা সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যে, খেলতে হবে। সচিন তো রঞ্জিতেও খেলত। নির্বাচকদের ভাবনায় থাকার জন্য খেলার মধ্যে থাকা জরুরি। এত বছর খেলার পর তোমার পরিকল্পনা কী, সেটা সংশ্লিষ্ট পক্ষকে জানিয়ে দেওয়া উচিত। যদি কোনও সিদ্ধান্তে আসতে চাও, তা হলে সবাইকে জানিয়ে দাও। সে ক্ষেত্রে সবার কাছেই পরিস্থিতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। দেখুন, ২০০৭ সালে অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার ছিল। কিন্তু মহেন্দ্র সিংহ ধোনি ক্যাপ্টেন হয়েছিল ফর্মের জন্য। ধোনি প্রচুর ম্যাচ খেলেছে, প্রচুর জিতিয়েছে। ও যদি খেলতে চায়, তা হলে ম্যাচে নামুক। পারফরম্যান্স করুক। ফিটনেস দেখা হোক। ব্যাপারটা সিম্পল। এটা নিয়ে বেশি কথার দরকারই নেই। (হাসি)
সচিন, গাওস্কর, দ্রাবিড়কে—কোনও একজনকে বেছে নেওয়া কঠিন হচ্ছে রাজুর পক্ষে।
আইপিএলের উপর কতটা নির্ভর করছে ধোনির ভবিষ্যৎ?
বেঙ্কটপতি রাজু: আমি সেটাই বলতে চাইছি যে খেলতে চাইলে খেলো। পারফর্ম করো। ১৬-১৭ বছরের ক্রিকেট মোটেই সহজ নয়। ও এত বছর ধরে এত রকমের ম্যাচে খেলেছে। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি, আইপিএল, বিশ্বকাপ। সো মাচ ক্রিকেট।
শেষ প্রশ্ন। গত অর্ধশতকে ভারতের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান কে?
বেঙ্কটপতি রাজু: প্রত্যেকেরই আলাদা মতামত থাকে। রাহুল দ্রাবিড় দীর্ঘদিন ধরে খেলেছে। টেস্ট ও এক দিনের ম্যাচ, দুই ঘরানাতেই ১০ হাজারের বেশি রান করেছে। সচিন আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসেছে ১৬ বছর বয়সে। যে ম্যাচেই নেমেছে, দলকে জেতানোর চাপ বা প্রত্যশা বইতে হয়েছে। রঞ্জি ট্রফি, দলীপ ট্রফি এমনকি প্রদর্শনী ম্যাচেও সচিনের কাছে সেটাই ছিল চাহিদা। এই কারণেই গ্রেট। নিছক পরিসংখ্যান দেখে কাউকে সেরা বাছা যায় না। মানুষ খেলা দেখে কতটা আনন্দ পেয়েছেন সেটাও দেখতে হবে। প্রত্যেকেরই নিজস্ব স্টাইল ছিল।
আপনার বাছাই কী হবে? সুনীল গাওস্কর, সচিন তেন্ডুলকর নাকি রাহুল দ্রাবিড়?
বেঙ্কটপতি রাজু: নো চয়েস। তিন জনই সেরা। এক জন ক্রিকেটার হিসেবে বলতে পারি না যে, এ ভাল আর ও ভাল নয়। হেলমেট না পরে আনকভার্ড উইকেটে বাঘা বাঘা পেসারদের খেলেছেন সুনীল গাওস্কর। সচিনও ’৮৯ সফরে পাকিস্তানে অসম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল। তিন জনেই আমাদের শিখিয়েছে অনেক কিছু। তিন জনেরই ভক্ত রয়েছে। এঁরা তিন জনই ভারতীয় ক্রিকেটকে অন্য উচ্চতায় তুলে নিয়ে গিয়েছেন।
মানে, কোনও এক জনকে বেছে নেওয়া যাচ্ছে না?
বেঙ্কটপতি রাজু: আমি যখন খেলা শুরু করেছিলাম, তখন সব পত্র-পত্রিকায় গাওস্করের ছবি থাকত। লোকে তখন গাওস্করকে দেখতে মাঠে আসত। মানুষ সচিনের বড় বড় শট দেখতেও মাঠে আসত। আবার, দ্রাবিড়ের বড় ইনিংসও টানত ক্রিকেটপ্রেমীদের। তাই ওকে বলা হয় ‘দ্য ওয়াল’। আমি সচিনের সঙ্গে খেলেছি। কিন্তু আমার কাছে গাওস্কর হলেন অনুপ্রেরণা। হেলমেট ছড়া আঢাকা উইকেটে ব্যাটিং কী করে করতে হয় উনিই দেখিয়েছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy