ইউএস ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার পরে রাফায়েল নাদাল। ছবি: রয়টার্স
শুধু শরীরটুকুই পড়ে রয়েছে নীল রঙের কোর্টে। মন পড়ে হাসপাতালে। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে জরুরি ভিত্তিতে স্পেনের হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। কিছু গুরুতর জটিলতা দেখা দিয়েছে। ওই মনহীন শরীরটা নিয়েই ইউএস ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলেন রাফায়েল নাদাল। অস্ট্রেলিয়ার রিঙ্কি হাজিকাতাকে ৪-৬, ৬-২, ৬-৩, ৬-৩ গেমে হারিয়ে দিলেন তিনি। কেবল উচাটন নয়, সঙ্গে আছে প্রবল অস্বস্তি। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা স্ত্রী মেরি পেরেলোর কানে খবরটা পৌঁছেছে কি না নাদাল জানেন না, কিন্তু স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে গত কয়েক ঘণ্টায় গোটা দুনিয়া জেনে গিয়েছে, তাঁর সঙ্গে শাকিরার পুরনো সম্পর্কের কথা। স্পেনের সংবাদপত্র ‘মার্কা’ নাদাল-শাকিরার এই গোপন সম্পর্কের কথা ফাঁস করেছে। কাকতালীয় কি না জানা নেই, মেরি পেরেলোর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সঙ্গেই বহু পুরনো নাদাল-শাকিরা অধ্যায়ের সমাপতন ঘটেছে।
২০১৯ সালে ট্রফি জেতার পর এই প্রথম ফ্লাশিং মিডোজে খেলছেন নাদাল। এ বারের দ্বিতীয় বাছাইকে এর পর খেলতে হবে ইটালির ফাবিয়ো ফগনিনির বিরুদ্ধে। মেরি বা শাকিরা, আলাদা করে কোনও প্রসঙ্গ না তুললেও ম্যাচের পর নাদালের বক্তব্যে পরিষ্কার, তিনি কতটা মানসিক চাপে রয়েছেন। চার বারের চ্যাম্পিয়ন বলেছেন, ‘‘দীর্ঘ দিন পরে আবার এখানে নামলাম। ফিরতে যে পারব, ভাবিনি। মাঝে মনে হয়েছিল, আর পারব না।’’
বিপক্ষ কি জানতেন তাঁর প্রতিপক্ষের মানসিক অবস্থা? শুরু থেকেই হাজিকাতা নিজেকে একটা অন্য উচ্চতায় নিয়ে যান। নাদাল যাতে ঘাড়ে চেপে না বসতে পারেন, শুরু থেকে সেটাই লক্ষ্য ছিল তাঁর। বিশ্বের সেরা অনূর্ধ্ব২১-দের নিয়ে আগামী নভেম্বরে যে ‘নেক্সটজেন এটিপি’ প্রতিযোগিতা হওয়ার কথা, সেখানে অন্যতম ফেবারিট হাজিকাতা।
প্রথম সেটে এই অস্ট্রেলীয়র হাত থেকে ১১টি উইনার বেরিয়েছে। ‘আনফোর্সড এরর’ করেছেন মাত্র ছ’টি। বড়সড় অভিজ্ঞতা বলতে হাজিকাতার সম্বল ছিল, এই মাসে দানিল মেডভেডেভকে সামলানো। বিশ্বের এক নম্বর স্ট্রেট সেটে জিতলেও তাঁর কালঘাম ছুটিয়ে দিয়েছিলেন হাজিকাতা।
কিন্তু নাদালের বিরুদ্ধে একটি সেট জেতা আর গোটা ম্যাচ জেতার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত আছে। মন-ছাড়া শরীর নিয়েই নাদাল দ্বিতীয় সেটে অনবদ্য সার্ভিস করলেন। ৭৫ শতাংশ সঠিক ‘ফার্স্ট সার্ভ’ করে তার থেকে ৯৩ শতাংশ পয়েন্ট তুলে নিলেন। সেটাই ম্যাচের গতি ঘুরিয়ে দেয়। তার পর থেকে নাদাল আর ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাত থেকে সরে যেতে দেননি।
তলপেটের অসহ্য যন্ত্রণায় উইম্বলডন সেমিফাইনাল থেকে সরে যাওয়ার পরে নাদালের এটি মাত্র দ্বিতীয় ম্যাচ ছিল। সিনসিনাটিতে বরনা করিচের বিরুদ্ধে প্রথম রাউন্ডে হেরে যাওয়ার পরে এই প্রথম নেমেছিলেন তিনি।
আগামী দু’সপ্তাহে প্রতিপক্ষ হিসাবে ফগনিনিরা থাকবেন। একই সঙ্গে থাকবে অহর্নিশ ‘স্কুপ’-এর খোঁজে থাকা সংবাদমাধ্যমও। যেমন রয়েছে ‘মার্কা’। মার্কামারা ভঙ্গিতেই তারা হঠাৎ শাকিরার সঙ্গে নাদালের সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে এনেছে। দাবি, পপ তারকার যখন জেরার্ড পিকের সঙ্গে প্রেম হয়নি, তখন না কি নাদালে মজেছিলেন। নাদালও তাই। দু’জনে না কি তখন পরস্পরের প্রেমে হাবুডুবু। পাপারাৎজি জর্ডি মার্টিন একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘আলেজান্দ্রো সানজের (স্প্যানিশ সঙ্গীত পরিচালক) সঙ্গে শাকিরার সম্পর্ক ছিল বলে অনেকেই মনে করেছিলেন। কিন্তু আসল গল্পটা অন্য। একই রকম বিখ্যাত, বা হয়তো একটু বেশিই বিখ্যাত এক জনের সঙ্গে শাকিরার সম্পর্ক ছিল।’ সঞ্চালক যখন সেই ‘বিখ্যাত এক জন’-এর নাম জানার জন্য পীড়াপীড়ি করেন, তখন মার্টিন শুধু বলেন, ‘‘ভদ্রলোক সত্যিই পৃথিবীবিখ্যাত। তিনি এক জন খেলোয়াড়। তবে ফুটবলার নন, টেনিস খেলোয়াড়।’’ এর পর দু’য়ে-দু’য়ে চার করতে অসুবিধে হয়নি স্প্যানিশ সংবাদপত্রটির।
মেরির অসুস্থতা নিয়েও অতি তৎপর সংবাদমাধ্যম। তাদের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ নাদালের পরিবার। মেরিকে যখন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, সেই ভিডিয়ো সংবাদমাধ্যম ফাঁস করেছে। তাদের তালিকা থেকে বাদ যায়নি মেরির শারীরিক সমস্যার ইতিহাসও। সেটিও ফলাও করে ছাপা হয়েছে বিভিন্ন সংবাদপত্রে।
এর মধ্যে অবশ্য মায়োরকার ‘কুইরোনসালুদ পামাপানাস’ হাসপাতাল থেকে স্বস্তির খবর এসেছে। মেরি এবং গর্ভস্থ সন্তান, দু’জনেরই ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট সন্তোষজনক। দু’জনেই বিপন্মুক্ত। তবে আপাতত সপ্তাহ তিনেক হাসপাতালে থাকতে হবে। সঙ্গে থাকবেন ননদ মেরিবেল।
স্বস্তি-অস্বস্তি, প্রশান্তি-উৎকন্ঠাকে সঙ্গী করে বছরের শেষ গ্র্যান্ড স্ল্যামে স্বামী কত দূর যেতে পারেন, তা হয়তো মেরিকে হাসপাতালের বিছানায় শুয়েই দেখতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy