ইউএস ওপেনের দ্বিতীয় রাউন্ডে উঠলেন সেরিনা উইলিয়ামস। —ফাইল চিত্র
২৭ বছরের পেশাদার টেনিস জীবনের মেয়াদ আর খুব বেশি হলে ১৫ দিন। তার মধ্যে যে কোনও সময়ে ঘটতে পারে বিশ্ব টেনিসের একটি যুগের অবসান। সেই পক্ষকালের সূচনা হল সোমবার (ভারতে মঙ্গলবার ভোর)। ইউএস ওপেনের প্রথম দিন। যে প্রতিযোগিতার পরে অবসর নেবেন সেরিনা উইলিয়ামস। ইতি টানার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে প্রথম রাউন্ডে জিতলেন ৬-৩, ৬-৩ গেমে। কানায় কানায় পূর্ণ আর্থার অ্যাশ স্টেডিয়ামে তখন চাঁদের হাট। দর্শকাসনে মাইক টাইসন, মার্টিনা নাভ্রাতিলোভা, বিল ক্লিনটন, হিউ জ্যাকম্যানরা। এবং অবশ্যই মা ওরাসিন প্রাইস, মেয়ে অলিম্পিয়া, স্বামী অ্যালেক্সিস ওহানিয়ান।
সেরিনা যখন কোর্টে নামছেন, তখন আবহে ক্যুইন লাতিফার ভিডিয়ো। যে স্টেডিয়াম তাঁর টেনিসজীবনের বহু সুখ-দুঃখের সাক্ষী, সেখানে বিদায়ের আবহ। স্টেডিয়ামের প্রায় ছাদের কাছে লাগানো বিশাল পর্দায় যখন শুধু তাঁর নামটুকু ফুটে উঠেছে, তখন সেরিনা বললেন, ‘‘আমি অভিভূত। সবার আবেগটা উপলব্ধি করতে পারছি। এটা এমন একটা মুহূর্ত, এমন একটা অনুভূতি, যা জীবনে কখনও ভুলব না।’’
ক্রমতালিকায় ৮০ নম্বরে থাকা ডাঙ্কা কোভিনিচের কাছে সেরিনা স্ট্রেট সেটে উড়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। গত জুন মাসে প্রায় এক বছর পরে কোর্টে ফেরার পর থেকে ‘মুভমেন্ট’ এবং ‘টাইমিং’ নিয়ে সমস্যায় পড়েছেন সেরিনা। ইউএস ওপেনে নামার আগে শেষ ম্যাচে ৪-৬, ০-৬ গেমে উড়ে গিয়েছিলেন। ওহিয়োতে ওয়েস্টার্ন অ্যান্ড সাদার্ন ওপেনের প্রথম রাউন্ডে ১৯ বছরের এমা রাদুকানুর কাছে হারতে হয়েছিল। হয়তো এ সব ভেবেই উদ্যোক্তারা নিজেদের তৈরি রেখেছিলেন।
কোভিনিচের বিরুদ্ধে সেরিনা শুরুটা যে ভাবে করেছিলেন, তাতে মনে হচ্ছিল, অদ্যই শেষ রজনী। একের পর এক আনফোর্সড এরর, ডাবল ফল্ট করে সার্ভিস খোয়ানো। নিজের সার্ভিসে আর একটি পয়েন্ট পেলেই কোভিনিচ ৪-২ গেমে এগিয়ে যেতেন। কিন্তু তার পর যা ঘটল, তাতে কোভিনিচের কিছু করার ছিল না। যে ব্যাকহ্যান্ড রিটার্ন সেরিনাকে ‘ডিউস’ পয়েন্টে এনে দিল, শুধু তার উপর ভর করেই বাকি ম্যাচের আত্মবিশ্বাস পেয়ে গেলেন। খানিকটা ঘাবড়ে গিয়েই কোভিনিচ পর পর দু’টি ডাবল ফল্ট করে বসলেন।
বিপক্ষের এই ঘাবড়ে যাওয়াটা সেরিনার বুঝতে অসুবিধে হয়নি। ৩-৩ অবস্থায় পরের তিনটি গেম জিতে নিয়ে প্রথম সেট জিততে সমস্যা হয়নি ২৩টি গ্র্যান্ড স্ল্যামের মালকিনকে। হাঁটুর ব্যথায় ওহিয়োতে কাবু থাকা সেরিনাকে এর পর ক্রমশ ক্ষিপ্র দেখিয়েছে। প্রত্যাবর্তনের পর যে আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি ছিল, সেটাই আবার ফিরে পেয়েছেন।
বোঝাই গিয়েছে, এখনই টেনিসকে বিদায় জানাতে মন চাইছে না সেরিনার। হাসতে হাসতে বলেছেন, ‘‘হঠাৎ গোটাটা কী রকম অনিশ্চিত লাগছে। সেই অনিশ্চয়তাটাই বোধ হয় ভাল।’’ এই অনিশ্চয়তার মধ্যে যেটা নিশ্চিত করে বলা যায়, সেরিনার টেনিসজীবন এখনই শেষ হয়ে যায়নি। দিদি ভিনাসের সঙ্গে ডাবলস খেলবেন বলে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন। সিঙ্গলসের দ্বিতীয় রাউন্ডে বুধবার সেরিনার সামনে প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় বাছাই অ্যানেট কনটাভিট।
দ্বিতীয় বাছাই হলেও সেরিনার সামনে তাঁর দাঁড়াতে পারার কথা নয়। লন্ডননিবাসী এস্তোনিয়ান কনটাভিটের শক্তি বলতে বেসলাইন। গ্র্যান্ড স্ল্যামে সাফল্য বলতে দু’বছর আগে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা। এই বছর প্রথম তিনটি গ্র্যান্ড স্ল্যামের একটিতেও দ্বিতীয় রাউন্ডের বেশি এগোতে পারেননি।
প্রথম রাউন্ডের পরে সেরিনাকে বেশ খানিক ক্ষণ কোর্টে থাকতে হল। আমেরিকার টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব গেল কিং এবং প্রাক্তন খেলোয়াড় বিলি জিন কিং বক্তৃতা করলেন। ওপরা উইনফ্রের ভিডিয়ো দেখানো হল। উদ্যোক্তারা বোধ হয় সেরিনার বিদায়মঞ্চ তৈরি রেখেছিলেন। কিন্তু যে ছন্দে শুরু করলেন সেরিনা, এই মঞ্চে তাঁকে দেখার জন্য আরও খানিকটা অপেক্ষা করতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy