Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Denmark

Euro 2020: আসল মেসির পাশে খেলে স্বপ্নপূরণ, ইউরো কাপে জাত চেনাচ্ছেন ‘ডেনমার্কের মেসি’

ফুটবল মাঠেও তিনি একইরকম। সতীর্থরা তাঁকে মজা করে ডাকেন ‘নিঃশব্দ ঘাতক’ বলে। কখন কোথা থেকে এসে তিনি যে ঠিকানা লেখা পাস বাড়াবেন, সেটা কেউ জানে না।

ইউরো কাপে ব্রাথওয়েট।

ইউরো কাপে ব্রাথওয়েট। ছবি রয়টার্স

অভীক রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০২১ ১৮:১০
Share: Save:

ডেনমার্কের কাছে এবারের ইউরো কাপ যেন ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন-ময়। প্রথম ম্যাচে প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে গিয়েও আলোচনায় শুধুই তিনি। ঘুরেফিরে আসছে টমাস ডেলানি বা ক্যাসপার ডোলবার্গের নামও। কিন্তু তিনি থেকে গিয়েছেন অলক্ষ্যেই।

ফুটবল মাঠেও তিনি একইরকম। সতীর্থরা তাঁকে মজা করে ডাকেন ‘নিঃশব্দ ঘাতক’ বলে। কখন কোথা থেকে এসে তিনি যে ঠিকানা লেখা পাস বাড়াবেন, সেটা কেউ জানে না। ওই একটা পাসই হয়তো ম্যাচের পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।

মার্টিন ব্রাথওয়েট। দেশের লোক যাঁকে আদর করে ‘ডেনমার্কের মেসি’ নামে ডাকেন। এবারের প্রতিযোগিতায় ডেনমার্ক নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। কিন্তু আলাদা করে ব্রাথওয়েটের প্রসঙ্গ কেউ তুলে ধরেননি। অথচ, ডেলানি, ডোলবার্গ বা সাইমন কায়েররা জানেন দলে ব্রাথওয়েটের গুরুত্ব ঠিক কতটা। জানেন আর একজনও, ডেনমার্কের কোচ ক্যাসপার হুলমান।

ব্রাথওয়েটের খেলার কিছু ঝলক।

সময়টা গত বছরের জানুয়ারির গোড়ার দিক। ফুটবল অ্যাকাডেমি থেকে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন ব্রাথওয়েট। গাড়ি চালাতে চালাতেই তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। কয়েক সেকেন্ড কথা বলার পর এতটাই অবাক হয়েছিলেন ব্রাথওয়েট যে আর একটু হলে দুর্ঘটনাই ঘটিয়ে ফেলছিলেন!

ফোনটা ছিল তাঁর এজেন্টের। সেই এজেন্ট তাঁকে যা বলেন তা বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না ব্রাথওয়েট। তাঁকে নিতে যোগাযোগ করেছে খোদ বার্সেলোনা, যে ক্লাবে খেলেন লিয়োনেল মেসি! ব্রাথওয়েট ভাবছিলেন তিনি স্বপ্ন দেখছেন। তাঁর স্বপ্ন এ ভাবে এত দ্রুত সত্যি হতে পারে!

তখন লেগানেসের মতো ছোট ক্লাবে খেলেন তিনি। নিয়মিত সুযোগ পান দলে। কিন্তু এক লাফে তিনি যে এত বড় অফার পেতে পারেন, সেটা কেউ ভাবতে পারেনি। খোদ ড্যানিশ সমর্থকরাও নয়। তাই জন্যেই ব্রাথওয়েটের বার্সেলোনায় যোগদান সে দেশে কার্যত বীরগাথার সমান।

মা ডেনমার্কের হলেও ব্রাথওয়েটের বাবা ব্রিটিশ গায়ানার। ডেনমার্কে ছোট শহর এসবার্গে বেড়ে উঠেছেন ব্রাথওয়েট। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পায়ের বিরল রোগে আক্রান্ত হন তিনি, যে রোগে হাড়ের বৃদ্ধি থেমে যায়। কিছুদিন কাটাতে হয়েছিল হুইলচেয়ারে। ডাক্তারদের চেষ্টায় এবং নিজের মনের জোরে দ্রুত সেই অবস্থা কাটিয়ে ওঠেন ব্রাথওয়েট।

ছোট থেকেই তাঁর প্রতিভার বিচ্ছুরণ ঘটতে থাকে। কিন্তু এসবার্গের মূল দলে সুযোগ পাচ্ছিলেন না কিছুতেই। মাঝে মিডজায়ল্যান্ডের অ্যাকাডেমিতে কিছুদিন কাটিয়ে ফিরে আসেন এসবার্গে। সেখান থেকে ফরাসি ক্লাব টুলুসে।

ব্রাথওয়েটের সব থেকে বড় গুণ হল, তিনি যে কোনও পজিশনে মানিয়ে নিতে পারেন। তাঁকে রাইট-ব্যাক, উইঙ্গার এবং ফরোয়ার্ড, যে কোনও জায়গায় খেলানো যায়। মেসি, রোনাল্ডোর মতো কাঁড়ি কাঁড়ি গোল হয়তো তিনি করতে পারবেন না, কিন্তু ম্যাচের যে কোনও সময়ে মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। প্রচণ্ড পরিশ্রমী হওয়ার কারণে তিনি ডেনমার্কের কোচ হুলমান এবং বার্সেলোনা কোচ রোনাল্ড কোমানের প্রিয় ফুটবলার। পাশাপাশি, তাঁর পেরিফেরাল ভিশন (না তাকিয়ে কোন সতীর্থ কোথায় রয়েছে বুঝে নেওয়া) অসাধারণ।

গত বছরের শুরুর দিকে বার্সেলোনা শিবিরে তখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। ফিলিপে কুটিনহোকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওসুমানে দেম্বেলের চোট। আঁতোয়া গ্রিজম্যানের চূড়ান্ত অফ ফর্ম চলছে। কিছুটা তড়িঘড়ি তাঁকে সই করিয়ে নেয় বার্সেলোনা।

সেখানেও একপ্রস্থ বিপদ। প্রথমদিনই বল জাগলিং করতে গিয়ে ব্যর্থ হলেন। ব্যস, স্পেনের সংবাদপত্রে সমালোচনার ঝড় বয়ে গেল। কেউ কেউ তো লিখেও দিল, ‘এটা কাকে ধরে এনেছে বার্সেলোনা?’ ব্রাথওয়েট আমল দেননি। ঠিক যেমন জীবনে কোনও সমালোচনাকেই পাত্তা দেননি এর আগে।

এক সাক্ষাৎকারে ব্রাথওয়েট বলেছিলেন, “অনেকে আছে যারা অন্যের কথায় বড্ড গুরুত্ব দেয়। আমি একেবারেই উল্টো। কেউ আমাকে পছন্দ করল কি না তাতে আমার যায় আসে না। আপনার মনে হতে পারে আমি বোকা অথবা ভাল মানুষ। আমি শুধু নিজে জানি যে আমি কী। সেটা নিয়েই বেঁচে থাকতে ভালবাসি।”

এই মন্ত্র নিয়ে বাঁচেন বলেই হয়তো জীবনের সব থেকে বড় ভুল থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছেন তিনি। ইংল্যান্ডের ক্লাব মিডলসবরোতে যোগ দেওয়ার পর প্রতিনিয়ত আক্রমণের শিকার হতে হত তাঁকে। কোচ টনি পুলিস প্রকাশ্যে তাঁর সমালোচনা করেছিলেন। গায়ে লাগাননি ব্রাথওয়েট। চুপচাপ নিজের কাজ করে গিয়েছিলেন। তাঁকে লোনে পাঠানো হয়েছিল লেগানেসে। সেখানে প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছিলেন। সেই লেগানেস থেকেই আজ তিনি বার্সেলোনায়।

ইউরো কাপে হয়তো তাঁর নামের পাশে কোনও গোল নেই। কিন্তু ডান দিক দিয়ে অহরহ আক্রমণ শানাতে তাঁর জুড়ি নেই। হয় পাস বাড়াচ্ছেন, নাহলে আচমকা গোলে শট নিচ্ছেন। প্রতি মুহূর্তে ব্যস্ত রাখছেন প্রতিপক্ষকে। কোচ হুলমান তাঁকে একটি ম্যাচেও বাদ দেওয়ার কথা ভাবতে পারেননি।

১৯৯২-এ ডেনমার্ককে ইউরো কাপ জিতিয়েছিলেন মাইকেল লাউড্রাপ। ঘটনাচক্রে তিনিও খেলতেন বার্সেলোনায়। এবার সেই ভূমিকা কি পালন করতে পারবেন ব্রাথওয়েট?

অন্য বিষয়গুলি:

Denmark Euro Cup 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE