এক জন পড়ে নবম শ্রেণিতে। অন্য জন একই স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী। দু’জনেই রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় সোনা জয়ী। কিন্তু মাঠের বাইরে দু’জনকেই প্রতি দিন লড়তে হয় দারিদ্র্যের সঙ্গে।
রায়নগর ক্ষেত্রনাথ সুনীলবরণ পৌর বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী ইয়াসমিনা খাতুন ৬৫তম রাজ্য অ্যাথলেটিকস্ মিটে ৪০০ মিটার হার্ডলস ও রিলে রেসে সোনা ও ১০০ মিটার হার্ডলসে ব্রোঞ্জ পেয়েছে। সেই সুবাদে জাতীয় প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার সুযোগ এসেছে। তবে সাফল্য অবশ্য এ বারই প্রথম নয়। ২০১২ সাল থেকে প্রতি বার রাজ্য অ্যাথলেটিকস্ মিটে সফল হয়ে বাংলার হয়ে জাতীয় স্তরে খেলার সুযোগ পেয়েছে সে।
কিন্তু দশ ভাইবোনের সংসারে রয়েছে অনেক সমস্যা। বাবা রমজান মোকামির দেউলা স্টেশনে এক চিলতে দোকান। স্থানীয় নাজরা গ্রামের ছোট বাড়ির অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ থেকে নিজের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় ইয়াসমিনাকে। স্কুলের ক্রীড়া শিক্ষক চন্দন রায় বলেন, ‘‘ইয়াসমিনার প্রতিভা রয়েছে। এটা ওর তৈরি হওয়ার সময়। দরকার ভাল খাওয়া ও খেলার সামগ্রী। তা হলে হয় তো ও অনেক দূরে যাবে।’’ ইয়াসমিনা জানায়, এর আগে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় পেন্টাথলন, ডেকাথলনের মতো ইভেন্টে যোগ দিয়েছে সে। তবে এ বারই প্রথম হার্ডলস বিভাগে যোগ দেবে। ভাল জুতো, পুষ্টিকর খাবারের অভাব। ইয়াসমিনার কথায়, ‘‘এশিয়াডে খেলতে চাই। কিন্তু খাওয়ার খরচ জোটাতে পারি না। শিক্ষকদের থেকে কিছু সাহায্য পেলেও যথেষ্ট নয়।’’
ওই স্কুলের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র টিঙ্কু হালদার এ বার রিলে রেসে সোনা পেয়েছে সে। জাতীয় প্রতিযোগিতায় যোগ দেওয়ার ছাড়পত্র মিলেছে। টিঙ্কুর বাবা মারা গিয়েছেন। মা অন্য লোকের বাড়িতে পরিচালিকার কাজ করেন। ভাল খাবার কেনার টাকা নেই। ২০১৩ সালেও রাজ্য অ্যাথলেটিকস্ মিটে সোনা পেয়েছিল সে। সুযোগ পেয়েছিল জাতীয় প্রতিযোগিতায়। টিঙ্কুর ক্ষোভ, ‘‘জেলা কিংবা রাজ্য প্রশাসন থেকে কোনও সহযোগিতা পাইনি। অথচ ভিন রাজ্যের খেলোয়াড়েরা সেই সুযোগ পায়।’’
স্থানীয় মাঠগুলিকে অ্যাথলেটিকস্ অনুশীলনের পরিকাঠামো নেই। তাই তাঁদের ডায়মন্ড হারবার এসডিও মাঠে গিয়ে অনুশীলন করতে হয়। তবে সেখানেও সব সুবিধা মেলে না। হার্ডলসের বারের বদলে বাঁশের তৈরি বাতা লাগিয়ে অনুশীলন করতে হয়। স্থানীয় কোচ মসিওর রহমান খান ও পুলিশকর্মী তীর্থঙ্কর রায় ইয়াসমিনা ও টিঙ্কু দু’জনকেই কোচিং করান। তাঁদের কথায়, ‘‘দু’জনের মধ্যেই সম্ভাবনা রয়েছে। নবম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত সময়ে শরীরের হাড় মজবুত হয়। তাই খেলোয়াড়দের এই সময়ে নিয়মিত সুষম খাবার প্রয়োজন।
সমস্যার কথা শুনেছেন ডায়মন্ড হারবারের বিধায়ক দীপক হালদার। তাঁর আশ্বাস, ‘‘আমার কাছে আবেদন করলে নিশ্চয় সাহায্য করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy