আটলেটিকো দে কলকাতার অন্যতম প্রধান মালিক সঞ্জীব গোয়েন্কার আইপিএল টিম পুণে মঙ্গলবার মুম্বইয়ে যখন মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে তুলে নিল, ঠিক তার ঘণ্টা তিরিশ পর আইএসএলে এটিকের মরণবাঁচন সেমিফাইনাল। কী রকম কাকতালীয়! বুধবার আটলেটিকোর অলৌকিক প্রত্যাবর্তনের জন্য যুবভারতীতে হাবাসের ফুটবল মস্তানির চেয়েও যেন বেশি প্রয়োজন ধোনির বরফশীতল নার্ভ!
ফাইনালে উঠতে গত বারের চ্যাম্পিয়নদের আজ ঘরের মাঠে ন্যূনতম চার গোলের ব্যবধানে জিততে হবে। নিদেনপক্ষে লড়াইকে অতিরিক্ত সময়, তাও ছাড়িয়ে টাইব্রেকে নিয়ে যেতে তিন গোলে জিততে হবে নব্বই মিনিটের ফিরতি সেমিফাইনাল। গোদা বাংলায়, স্নায়ুর চূড়ান্ত যুদ্ধ। আর সে রকম যুদ্ধে হাবাসের ড্রেসিংরুমের জন্য কোনও মহেন্দ্র সিংহ ধোনি-র চেয়ে উপযুক্ত প্রেরণা আর কে হতে পারেন! যিনি কিনা এই মুহূর্তে এটিকের অন্যতম প্রধান কর্তারই ক্রিকেট টিমের মুখ।
কলকাতায় ‘নেটিজেন’রা (যাঁরা ইন্টারনেটেই মন-প্রাণ সঁপেছেন) সোশ্যাল নেটওয়ার্ক সাইটে এ দিন দুটো প্রশ্নের উত্তর খুঁজলেন সারা দিন। এক) আইসল্যান্ডে ‘দিলওয়ালে’-র শুটিংয়ে শাহরুখ-কাজল জলের উপর দিয়ে ছুটলেন কী করে? দুই) চেন্নাইকে চার গোল দেবে কী করে?
প্রথম প্রশ্নের উত্তরে যদি কম্পিউটার গ্রাফিক্সের কারসাজিকে হাজির করা হয়, দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে বেরিয়ে আসছে নিছক ক্রীড়া-মনন। যুবভারতীতে বুধবার অলৌকিক ঘটাতে এটিকের অন্যতম মালিক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ক্যারিশমা নয়, বরং হিউমদের ক্রিকেটতুতো সতীর্থ ধোনির বরফশীতল স্নায়ুর দরকার ড্রেসিংরুম থেকে মাঠে।
মোহন-ইস্টের স্নায়ুও বোধহয় দরকার আজ হাবাসের দলের জন্য। ভারতীয় ফুটবলের ভরকেন্দ্র এই দুই ক্লাবের এ দেশে একমাত্র নজির রয়েছে এ রকম চূড়ান্ত স্নায়ুর যুদ্ধে তিন গোল খেয়ে চার গোল দিয়ে জেতার।
একটা সাতের দশকে। ডুরান্ডে লিডার্স ক্লাবের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে তিন গোলে পিছিয়ে গিয়ে চার গোলে জিতেছিল পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্টবেঙ্গল। পরেরটা নয়ের দশকে ম্যাকডাওয়েল কাপে মহমেডানের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে তিন গোল খেয়ে চার গোল দিয়েছিল সুব্রত ভট্টাচার্যের মোহনবাগান।
পি কে এ দিন তিরন্দাজ দোলা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিয়ের আসর থেকেই ফোনে সেই ম্যাচে তাঁর ভোকাল টনিক কী বলছিলেন। ‘‘আমার মতোই হাবাস কাল মাঠে নামার আগে ওর ছেলেদের বলে দিক তোমরাই পারবে। পারবেই ব্যাস, তা হলেই যথেষ্ট।’’ সুব্রতও বললেন, ‘‘আমি এটিকে কোচ হলে প্লেয়ারদের বলতাম, গোল তোরা পাবিই। মাঠে সারাক্ষণ স্রেফ তাড়া করে যা ওদের।’’
হাবাস অবশ্য এই জাতীয় ভোকাল টনিক থেকে বহু দূরে। তবুও তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বলে দিলেন, ‘‘বিপক্ষকে বল ধরতে না দিয়ে আক্রমণ, শুধু আক্রমণেরই প্ল্যান করছি আমরা।’’ সঙ্গে এটাও বলতে ভুললেন না, ‘‘মিরাকল ঘটতে পারে। সেটা বিশ্বাস করি। ছেলেরাও যদি সেটা বিশ্বাস করে তা হলে নিশ্চয়ই পারবে।’’
তিন গোলে এগিয়ে থাকা মাতেরাজ্জি হয়তো হাবাস-মানসিকতা জানেন। তাই মেগা সেমিফাইনালের আগে তাঁর খোঁচা ‘‘কলকাতা নতুন কিছু তো করবেই। সেটা দেখে আমরাও পাল্টা দেব।’’ পরক্ষণেই বললেন, ‘‘যে ম্যাচে সত্তর হাজার দর্শক আসবেন গত বারের চ্যাম্পিয়নদের জন্য, সেই ম্যাচে কলকাতার সবাই নিজেকে ছাপিয়ে যেতে চাইবেই। কাজেই কঠিন ম্যাচ তো বটেই।’’
চেন্নাইয়ের পকেট-রকেট মেন্ডোজার সঙ্গে ফ্রিকিক মাস্টার ইলানো যে ম্যাচে হাবাসের টিমকে ফাইনাল যাওয়া থেকে বেলাইন করতে নানা প্যাঁচ কষছেন সে ম্যাচেই নেই কলকাতার দুই ডিফেন্সিভ মিডিও বোরহা, নাতো। হাবাস এ দিন প্র্যাকটিসে দু’টো জায়গা সামাল দিলেন। এক, রাইট ব্যাক আর রাইট স্টপারের মাঝের জায়গায় যেখানে পুণেতে মেন্ডোজা প্রলয়-নাচন দেখিয়েছিলেন কলকাতাকে। সেই ফাটল মেরামত করা। দুই, বোরহা-নাতোর জায়গায় জুয়েলের সঙ্গে আলোন্সো এবং বলজিৎকে (ইলানোর সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করতে পারবেন বলে) তৈরি রাখা। শেষ বেলায় আবার পস্টিগাকেও প্র্যাকটিস গেমে খেলিয়ে নিলেন। পর্তুগাল মার্কি ফুটবলার, হিউম এবং লেকিচকে নিয়ে পেনাল্টি মারার টেস্ট পেপারও উল্টেপাল্টে শেষ বেলায় দেখে রাখলেন কলকাতা কোচ।
তা হলে মরণকালে হরি নামের মতো পস্টিগার শরণাপন্ন কি বুধবার হবেন হাবাস? শুনে ইষৎ বিরক্ত কলকাতা কোচ। ‘‘টিচার ক্লাসে ঢুকলে রোজ এক প্রশ্ন করার মতো ব্যাপার। আমি বলে দিই কে খেলবে আর মাতেরাজ্জি সেটা জেনে ফেলুক আর কী!’’
পিকে, সুব্রত দু’জনেই এ দিন বলে দিলেন, ‘‘হাবাস যেন ড্রেসিংরুমে কাল কোনও বিরক্তি না রাখেন।’’ কিন্তু হাবাসের ড্রেসিংরুমে এ দিনই ফুটবলীয় না হোক, বরাদ্দ টিকিট নিয়ে ফুটবলারদের মধ্যে অসন্তোষের চোরাস্রোত। যদিও প্র্যাকটিস শুরুর আগে হাবাসের ড্রেসিংরুমে এসে সৌরভ হিউমদের কাছে সেরা নব্বই মিনিটের দাবি জানিয়ে গিয়েছেন। অর্ণব মণ্ডলরাও বলছেন, ‘‘চার গোল তো করেছি এর আগেও। অসম্ভব কাজ তো নয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy