মহেন্দ্র সিংহ ধোনি।
দিন কয়েক আগে উইম্বলডন কোয়ার্টার ফাইনালের একটা ম্যাচ দেখছিলাম। রজার ফেডেরার বনাম কেভিন অ্যান্ডারসন। যেখানে ম্যাচ জেতার সামনে এসেও হেরে যায় ফেডেরার। হয়তো কয়েক বছর আগে হলে এ রকম ঘটনা ঘটত না। কিন্তু ৩৬ বছরের ফেডেরার এ বার আর পাঁচ সেটের লড়াইয়ে পারল না।
প্রশ্ন হচ্ছে, বয়স বাড়ছে বলে কি ফেডেরারের পক্ষে এখন ম্যাচ জেতা ক্রমে কঠিন হয়ে যাবে? আমার উত্তর হল, না। বয়স হয়তো ফেডেরারের খেলায় কিছুটা থাবা বসাতে পারে, কিন্তু চ্যাম্পিয়নের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষমতা এখনও কেড়ে নিতে পারেনি।
ঠিক একই কথা বলব মহেন্দ্র সিংহ ধোনি সম্পর্কেও। ৩৭ বছর বয়সি ধোনির কাজটা ক্রমে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তা বলে ধোনি ফুরিয়ে গিয়েছে, এটা মানতে আমি রাজি নই। অন্তত পরের বছরের বিশ্বকাপ পর্যন্ত ধোনিকে ভারতের প্রয়োজন আছে। আমি এখনও মনে করি, ধোনি এমন কোনও ম্যাচ জিতিয়ে দিতে পারে, যেটা আর কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তা ছাড়া ধোনি থাকা মানে বিপক্ষ দলের ওপর একটা মানসিক চাপ সৃষ্টি হওয়া।
ধোনিকে আমি প্রথম দেখি, ২০০২ সালে একটা রঞ্জি ম্যাচে। আমি তখন বাংলার কোচ। আগরতলায় খেলা। ওই ম্যাচে দেখলাম, একটা লম্বা চুলের ছেলে আমাদের বোলারদের খুব মারছে। আমি তখন পরামর্শ দিই, ওকে একটু স্লো বল করতে। ব্যাটে যেন বল না আসে। ধোনি সে দিন আউট হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ১৬ বছর আগের সেই ধোনি নিজেকে দারুণ ভাবে বদলে নেয়। এর পরে যত দেখেছি, ওর মধ্যে একটা লড়াকু মনের পরিচয় পেয়েছি। যে হারতে জানে না।
এ বার প্রশ্ন হল, ভারতের বিশ্বকাপজয়ী এই ক্রিকেটারের কী সমস্যা হয়েছে? লর্ডস এবং লিডসে দেখলাম, মইন আলির মতো স্পিনারকেও মারতে পারছে না ধোনি। দু’ইনিংস মিলিয়ে বিগ হিট নেই বললেই চলে। আগে আমরা দেখতাম, ওয়ান ডে ম্যাচে ধোনি সব সময় শেষ পর্যন্ত থাকার চেষ্টা করত। এবং যখনই চাইত, বিগ হিট মেরে আস্কিং রেট নিয়ন্ত্রণে রাখত। কিন্তু ইদানীং এই ব্যাপারটা হচ্ছে না। অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তো বটেই। ধোনির সেই প্রিয় হেলিকপ্টার শট এখন আর প্রায় দেখাই যায় না। ঠিক সে রকমই দেখা যায় না, পয়েন্টের ওপর দিয়ে সেই বিশাল বিশাল ছয়গুলো।
বলতে বাধ্য হচ্ছি, এখানেই কিন্তু বয়স কিছুটা থাবা বসিয়েছে। ব্যাট এবং পায়ের বোঝাপড়ায় সমস্যা হচ্ছে। বলের কাছে ঠিক সময় পৌঁছনো যাচ্ছে না। ধোনি কিপার হওয়ায় সমস্যাটা আরও বেড়েছে।
আমি নিজেও এক জন কিপার ছিলাম বলে জানি, বয়সটা বাড়তে থাকলে সমস্যা দেখা দেবেই। আসলে ক্রিকেটে একমাত্র স্পিনাররাই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাল খেলার ক্ষমতা রাখে। বাকিদের সমস্যা হয়ে যায়।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে ধোনিকে একটা পরামর্শ দিতে চাই। আমি জানি, একটু হলেও ধোনির নড়াচড়া মন্থর হয়ে গিয়েছে। যেটা আমরা কিপাররাই বুঝতে পারি। বাইরে থেকে দেখে বোঝা সম্ভব নয়। তা হলে কী ভাবে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব? ধোনির ফিটনেস রুটিন নিয়ে কিছু বলার নেই। আমাদের সময়ের থেকে এখন ফিটনেসের মান সবারই ভাল। আমি শুধু ধোনিকে বলব, জিমে যাওয়ার পাশাপাশি এখন যত পারো ম্যাচ খেলো। ম্যাচ খেলার মতো ভাল ওষুধ আর কিছু হয় না। কথাতেই আছে, তিন মাসের নেট প্র্যাক্টিসের চেয়ে তিনটে ম্যাচ খেললে অনেক বেশি উপকার হবে।
আমরাও তাই করতাম। বয়স বাড়ার সঙ্গে ট্রেনিং, প্র্যাক্টিসের পাশাপাশি ম্যাচ খেলে যেতাম। এতে উপকারই পেয়েছি। ধোনি শেষ কবে ঝাড়খণ্ডের হয়ে রঞ্জি খেলেছে, জানি না। কিন্তু এই মরসুমে খেলতে হবে। রঞ্জি থেকে শুরু করে ঘরোয়া ক্রিকেটে যত প্রতিযোগিতা আছে, সবেতে খেলতে হবে।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কী ভাবে নিজের সেরা অস্ত্রও ভোঁতা হয়ে যায়, তা নিয়ে একটা ঘটনা মনে পড়ছে। কথাটা আমাকে বলেছিল দিলীপ বেঙ্গসরকর। ১৯৯২ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরের পরে দিলীপ আমাকে বলে, অনসাইডের ড্রাইভগুলো মারতে গিয়ে দেখছে, বল হয় মিডঅফে না হয় বোলারের হাতে চলে যাচ্ছে। অথচ দিলীপের মতো অনড্রাইভ মারতে পারার দক্ষতা বিশ্ব ক্রিকেটে খুব কম ব্যাটসম্যানেরই ছিল। দিলীপ তখন বলে, ‘‘মনে হচ্ছে, এ বার ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর সময় হয়ে গিয়েছে।’’
ধোনির খেলার ধরনটা এখন যে রকম দাঁড়িয়েছে, তাতে ওকে ফিনিশারের ভূমিকায় আর নামানো চলবে না। চার নম্বরে না হলেও পাঁচ নম্বরে নামাতেই হবে ধোনিকে। তা হলেই ওর পক্ষে কিছু করা সম্ভব।
ধোনি প্রসঙ্গে এক জন বিশ্ববিখ্যাত কিপারের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। তিনি অ্যালান নট। এক জন সাংবাদিক একবার নটকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘‘আপনি এত ব্যায়াম করেন কেন? মাঠেও দেখা যায় ফাঁক পেলেই স্ট্রেচিং করছেন।’’ নটের জবাব ছিল, ‘‘আমার ঘাড়ের কাছে এক জন নিঃশ্বাস ফেলছে। বব টেলর। ওঁকে দূরে রাখতে গেলে এ সব তো করতেই হবে।’’
ধোনি কথাটা মাথায় রাখতে পারে। নির্বাচক ছিলাম বলে জানি, ঋষভ পন্থকে ভারতীয় দলে নেওয়াটা কিন্তু ধোনির পক্ষে একটা অশনি সঙ্কেত। তাই ঋষভকে দূরে রাখতে যা করার তা করতেই হবে ধোনিকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy