এটিকে-র জার্সি উদ্বোধনে প্লেয়ারদের সঙ্গে সঞ্জীব গোয়েন্কা।
গত আইএসএলে কলকাতার জার্সিতে মাত্র একটা ম্যাচ খেলে টুর্নামেন্ট শেষ করার যন্ত্রণা এখনও যায়নি হেল্ডার পস্টিগার।
ইয়ান হিউম নিজেই বলে দিচ্ছেন আইএসএল ট্রফিটা এই মুহূর্তে তাঁর প্রধান কাঙ্খিত বস্তু। গত দু’মরসুমের আক্ষেপ এ বার পুষিয়ে নিতে চান।
কিন্তু শুক্রবার বিকেলে সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্কের মাঠে আটলেটিকো দে কলকাতার দুই প্রধান গোলগেটার-ই যে অনুপস্থিত!
খোঁজ নিয়ে জানা গেল অন্যতম টিম মালিক সঞ্জীব গোয়েন্কার অফিসে গিয়েছেন এটিকে-র দুই তারকা বিদেশি ফরোয়ার্ড। পরে সেখান থেকে বেরিয়ে মধ্য ও পূর্ব কলকাতার জ্যাম ঠেলে স্প্যানিশ কোচ জোসে ফ্রান্সিসকো মলিনার প্র্যাকটিসে যখন পর্তুগিজ ও কানাডিয়ান স্ট্রাইকার নামলেন ততক্ষণে সন্ধে। কোনও মতে ওয়ার্মআপ সেরেই দু’জন ফিরে গেলেন হোটেলে। তার ভেতরেই অবশ্য কলকাতার মার্কি ফুটবলার পস্টিগা বলে দিয়েছেন, ‘‘আগের বার বেশি ম্যাচ খেলতে পারিনি। তাই এ বার বেশি ম্যাচ খেলার পাশাপাশি প্রচুর গোল করাটাও আমার লক্ষ্য। পর্তুগালের ক্লাবে খেলে এবং নিয়মিত ট্রেনিংয়ে নিজেকে ম্যাচ ফিট রেখেছি। কলকাতার হয়ে সেরা পারফরম্যান্সটা দিয়ে টিমকে চ্যাম্পিয়নও করতে চাই।’’
এটিকে-র আক্রমণ ভাগে এ বার পস্টিগার পার্টনার হবেন যিনি সেই কানাডিয়ান গোলমেশিন ইয়ান হিউম প্রথম আইএসএলে কেরল ব্লাস্টার্সের জার্সি গায়ে পাঁচ গোল করেছিলেন। দ্বিতীয় বার কলকাতার জার্সিতে হ্যাটট্রিক-সহ ১১ গোল। এ বারের গোল সম্ভাবনার কথা জিজ্ঞাসা করতে আত্মবিশ্বাসী হিউমে বলে দিলেন ‘‘গোল করাটাই আমার কাজ। গত বছর লারা, দ্যুতিরা অনেক গোলের বল বাড়িয়ে দিয়েছিল। এ বারও নিশ্চয়ই দেবে। গত বছর সেমিফাইনাল থেকে ফিরতে হয়। আশা করছি এ বার তা হবে না।’’
নতুন কোচ মলিনা।
গত দু’বারের কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস এ বার চলে গিয়েছেন পুণে সিটিতে। এসেছেন মলিনা। এতেই শেষ নয়। বদলে গিয়েছে এটিকের থিম সং-ও। গত দু’বছর এটিকে মাঠে নামলেই বাজত অরিজিৎ সিংহের ‘ফাটাফাটি ফুটবল—লেটস ডু সাম হট্টগোল’। এ বার অরিজিৎ গিয়ে এসেছেন পাপন। এ দিন দুপুরে পার্ক স্ট্রিটের অভিজাত কফি শপে অর্ণব, পস্টিগা, হিউমদের উপস্থিতিতে প্রথম বার জনসমক্ষে বাজল পাপনের গাওয়া কলকাতার নতুন থিম সং— ‘ফাটিয়ে দেব/ জমিয়ে দেব/ আমার বুকে এটিকে’। যা শুনতে শুনতে টিমের দুই মালিক সঞ্জীব গোয়েন্কা ও উৎসব পারেখের সঙ্গে তাল ঠুকছিলেন টিমের দুই জোড়া ফলা—হিউম, পস্টিগা। গায়ে সেই লাল-সাদা স্ট্রাইপ জার্সি। বুকে লেখা নতুন ট্যাগ লাইন—‘আমার বুকে এটিকে’।
টিমের অন্যতম বঙ্গসন্তান ফুটবলার অর্ণব বলছিলেন, ‘‘টিমে অনেক নতুন মুখ। আবাসিক শিবিরে যেতে পারিনি। তাই খুব তাড়াতাড়ি টিমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।’’ কিছুটা ব্যাকফুটে থাকা অণর্বের পাশে বসে তখন ফুটছেন হিউম-পস্টিগা। একজন প্রশ্ন করেছিলেন, তাঁদের জুটি কলকাতার চোদ্দ ম্যাচে সাফল্যের ফুল ফোটাতে পারবে কি? যা শুনে পর্তুগালকে এক যুগ আগে ইউরো কাপ ফাইনালে তোলা পস্টিগা বললেন, ‘‘এটা হিউম বলতে পারবে।’’ যা শুনে হিউম বলেন, ‘‘গত বার পস্টিগা একটা ম্যাচ খেলে দু’টো গোল করেছিল। খুব একটা খারাপ অ্যাভারেজ নয়। সেই ছন্দে যদি ও এ বারও থাকে, তা হলে টিমের পারফরকম্যান্স গতি পাবে।’’ সঙ্গে গড়গড় করে বলে দেন, ‘‘মোদ্দা কথা তো ট্রফিটা তুলতে হবে। যেটা আমি কেরলে থাকার সময় করতে পারিনি। গত বছর কলকাতার হয়ে ভাল খেলেও সেমিফাইনালে একটা খারাপ ম্যাচ আমাদের ছিটকে দিয়েছিল। আশা করছি, এ বার সব গাঁট পেরনো যাবে।’’
হাবাস জমানায় এটিকে-র ইউএসপি ছিল আল্ট্রা ডিফেন্সিভ ফুটবল। মলিনার রাজত্বে সেই দর্শন আঁকড়েই কি তৃতীয় আইএসএল অভিযানে নামতে চলেছে কলকাতা? জবাবে সেই সম্ভাবনা পত্রপাঠ নাকচ করে দেন মলিনার অন্যতম অস্ত্র হিউম। বলে দেন, ‘‘হাবাস আর মলিনা দু’জনে দু’রকম ফুটবল দর্শন নিয়ে চলেন। ফলে দু’জনের স্ট্র্যাটেজি, ট্যাকটিক্সও আলাদা হবে। তবে এই এটিকে জয়ের সঙ্গে দর্শকদের আনন্দ দিতেও তৈরি।’’
কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই ফুটবল বিনোদন রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে দেখা যাবে তো? আটলেটিকোর অন্যতম কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েন্কা বলছেন, ‘‘পরিবেশ রক্ষায় আমরাও দায়বদ্ধ। আশা করছি, সমাধানের রাস্তা একটা বেরিয়ে আসবেই।’’
স্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস, ইচ্ছাশক্তি— সব ছাপিয়ে আপাতত নতুন হোমগ্রাউন্ডে নামতে পারাটাই কিন্তু চিন্তা এটিকে শিবিরে।
ছবি: উৎপল সরকার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy