লিওনিড স্টানিস্লাভস্কি। ছবি: টুইটার থেকে
মাস চারেক আগেই বাস্তবায়িত হয়েছে তাঁর একটি স্বপ্ন। খেলেছেন রাফায়েল নাদালের সঙ্গে। আরও একটি স্বপ্ন আঁকড়ে রেখেছেন বুকে। খেলতে চান রজার ফেডেরারের বিরুদ্ধে। তিনি ইউক্রেনের টেনিস খেলোয়াড় লিওনিড স্টানিস্লাভস্কি।
বিশ্বের দুই সেরা তারকার বিরুদ্ধে খেলার স্বপ্ন কোন টেনিস খেলোয়াড়েরই বা নেই। এর মধ্যে অবাক হওয়ার কী আছে! আছে তো বটেই। লিওনিড বিশ্বের প্রবীণতম অপেশাদার টেনিস খেলোয়াড়। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে তাঁর নাম রয়েছে। বয়স এখন ৯৭। বাঁচতে চান ১০০ বছর। শুধু ফেডেরারের বিরুদ্ধে খেলার জন্যই ১০০ বছর বাঁচতে চান, তা নয়। বাঁচতে চান জীবনের আরও একটা মাইল ফলক স্পর্শ করার জন্য। কিন্তু তিনি কি পাবেন সেই সুযোগ? একরাশ অনিশ্চয়তা গ্রাস করেছে লিওনিডকে।
রাশিয়ার সামরিক অভিযানে তছনছ হয়ে গিয়েছে ইউক্রেনের অধিকাংশ অঞ্চল। মাঝে মধ্যেই আছড়ে পড়ছে রুশ বোমা বা ক্ষেপনাস্ত্র। ইউক্রেনের অন্যতম বড় শহর খারকিভে অবিরাম হামলা চালাচ্ছে পুতিন বাহিনী। শহরের বহু অংশেই দগদগ করছে যুদ্ধের ক্ষত। সেই খারকিভে নিজের বাড়িতেই রয়েছেন লিওনিড। সঙ্কটের এই সময় দেশ ছাড়তে নারাজ তিনি।
লিওনিডের মেয়ে তানয়া থাকেন পোল্যান্ডে। বাবাকে সেখানে নিয়ে যেতে চান তিনি। লিওনিডকে বেশ কয়েক বার অনুরোধ করলেও কাজের কাজ হয়নি। বিশ্বের প্রবীণতম টেনিস খেলোয়াড়ের সাফ কথা, ‘‘আমি এখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার শ্রবণ শক্তি খুব খারাপ। রাতে কিছু শুনতে পাই না। তাই ভালই ঘুম হচ্ছে। কাল রাতে বোমা বর্ষণ হয়েছে। সকালে সাইরেন বেজেছে। সব কিছুই জানি।’’
কিন্তু যখন সকলে প্রাণ বাঁচাতে দেশ ছাড়তে চাইছেন সে সময় এই বয়সে যুদ্ধ বিধ্বস্ত খারকিভে কী ভাবে থাকছেন লিওনিড? খাবার বা নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস কি তিনি পাচ্ছেন? তিনি বলেছেন, ‘’২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। সে দিন থেকেই বাড়ির বাইরে যাইনি। বাড়ির মধ্যেই রয়েছি। আমাকে সব কিছুই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। ফ্রিজে খাবার ভর্তি। বাড়িতেই সারাদিন বসে থাকছি। কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করছি না।’’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় চরম ব্যস্ততার মধ্যে দিন কাটত পেশায় ইঞ্জিনিয়র এই প্রবীণের। নাৎসীদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তৎকালীন সোভিয়েত রাশিয়ার যুদ্ধ বিমান তৈরির কাজ করতেন। সে কথা জানিয়ে লিওনিড বলেছেন, ‘‘কখনও ভাবিনি জীবনে আরও একটা ভয়াবহ যুদ্ধ দেখতে হবে। এই যুদ্ধটা আরও বেশি ভয়ানক। দু’দেশের মানুষই মারা যাচ্ছে। মায়েরা সন্তানদের হারাচ্ছেন। স্ত্রীরা হারাচ্ছেন তাঁদের স্বামীদের। কী হচ্ছে এ সব? এর মধ্যে ভাল কী আছে? একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীতে যুদ্ধ হতে পারে না। অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ হওয়া উচিত। দু’পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হওয়া দরকার।’’
পরিস্থিতি অনুকূল হলেই আবার টেনিস অনুশীলন শুরু করবেন লিওনিড। আগামী মাসে ফ্লোরিডায় প্রবীণদের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে অংশগ্রহণ করতে চান। ৩০ বছর বয়সে টেনিস খেলতে শুরু করেন। তখন থেকেই সপ্তাহে তিন দিন অনুশীলন করাটা তাঁর কাছে অবশ্য কর্তব্য। সেই অনুশীলনেই বিঘ্ন ঘটাচ্ছে যুদ্ধ। তাই মন ভাল নেই ৯৭ বছরের তরুণের। বলেছেন, ‘‘টেনিস আমার জীবন। আমার ভবিতব্য। ৯০ বছর বয়স থেকে প্রবীণদের প্রতিযোগিতায় খেলতে শুরু করেছি। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছি। ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছি।’’
কিন্তু যুদ্ধ পরিস্থিতিতে খারকিভে থাকতে ভয় লাগছে না? উড়িয়ে দিয়েছেন বিশ্বের প্রবীণতম অপেশাদার টেনিস খেলোয়াড়। কিছুটা বিরক্তি নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘আমি কাউকে ভয় পাই না। আশা করি দ্রুত যুদ্ধ শেষ হবে এবং আবার টেনিস খেলতে পারব। চাইলে পোল্যান্ডে চলে যেতে পারি। সেখানে গিয়ে টেনিস খেলতেই পারি। কিন্তু আমি এখানেই থেকে যুদ্ধ শেষ হওয়া দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy